যেমন খুশী তেমন চল নীতিতে চলছে বরিশাল আ’লীগ

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ যেমন খুশী তেমন চল নীতিতে ক্ষমতার ৩ বছর পরও চলছে বরিশাল আওয়ামিলীগ। প্রভাবশালি দুই নেতার অন্তঃদ্বন্দে আটকে পরে আছে বরিশাল আ’লীগের জেলা, মহানগর, ওয়ার্ড, উপজেলা ও পৌরসভার সকল কমিটি। যা বর্তমানে চলছে মেয়াদর্ত্তীন কমিটি দিয়ে। সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতিশীল করতে কমিটি গঠনের দাবী বারবার আ’লীগ নেতৃবৃন্দরা জানালেও কেন্দ্র বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। ফলশ্র“তিতে এখন আর পদ-পজিশন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেনা আ’লীগের বেশীরভাগ নেতা-কর্মীরা। শেষ সময়ে পদ-পজিশন নিয়ে বিরোধী দলের রেশানলের শিকার হতে এখন অনেকেই নারাজ। এ ক্ষেত্রে তারা বলছে, আর এক থেকে দেঢ় বছর সময়, কি দরকার বিরোধীদল ক্ষমতায় এলে বউ-বাচ্চা ছেড়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর। বলাযায়, আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বরিশাল আ’লীগের সাংগঠনিক ভীত এখন অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা ধারন করেছে। জেলা আ’লীগের সন্মেলন এক যুগ পেরিয়ে গেছে। যুবলীগের পেরিয়ে গেছে দেড় যুগ। ছাত্রলীগের দেড় যুগ অতিক্রম করার পর গত ৯জুলাই কেবল জেলা ও মহানগর ছাত্র লীগের সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যন্ত কমিটি ঘোষনা দেয়া হয়েছে। তবে ইতেমধ্যে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার কমিটি গঠন করা সহ খসরা চূড়ান্ত করা হয়েছে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫/২০টির। অবশ্য গত বছরের গোড়ার দিকে কেন্দ্র জেলা আ’লীগের সম্মেলনের উদ্যেগ নেয়। পরপর দু’বার তারিখও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আর আলোর মুখ দেখেনি কমিটি গঠনের।

জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক সাংসদ তালুকদার মোঃ ইউনূস ঢাকা সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে তার নিজ বাসভবনে ফেরার পথে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই সব কিছু চূড়ান্ত করে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা দেয়া হবে সম্নেলনের মাধ্যমে।তথ্যসূত্রে জানাযায়, সর্বশেষ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি। সে সময় কাউন্সিলে ৫৪ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয় । যে কমিটির প্রভাবশালী বেশ কয়েক জন নেতা অনেক আগেই মারা গেছেন। নিস্ক্রিয় রয়েছেন একাধিক নেতা। ২০০২ সালে মারা গেছেন জেলা কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি মহিউদ্দিন আহম্মেদ। চলতি বছরের গত ৭ ফেব্র“য়ারী মারা যান জেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কমিশনার শেখ মোবারক হোসেন। জেলা শাখার সভাপতি মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডাঃ মোখলেচুর রহমান। মারা গেছেন কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাড. সোবাহান মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক তরুণ দেব, সদস্য সিরাজুল ইসলাম মানিক, আবদুল লতিফ, জিন্নাহ, দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ ও জাহিদ হোসেন । দীর্ঘ সময়েও কমিটি গঠন না হওয়ায় ভেতরে ভেতরে নিরব ক্ষোভ প্রকাশ প্রথম দিকে করলেও এখন আর চিন্তিত নন দলের নেতা-কর্মীরা। কারন ক্ষমতার ৩ বছর শেষে পদ-পদবীর বোঝা বইতে চান না অনেকেই।

মহানগর আ’লীগেও একই দশা বিরাজমান। ১৯৯৮ সালে গঠিত শহর কমিটি জোড়া তালি দিয়েই চলছে মহানগর আ’লীগের কার্যক্রম। অনেক আগে মারা গেছেন শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান শাহজাহান। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যান শহর কমিটির সভাপতি অ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। সেই থেকে তিনি আর বরিশালের রাজনীতিতে সম্পূক্ত হননি। ২০০৩ সালে শহর কমিটি ভেঙে গঠন করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি। আহবায়কের দায়িত্ব পান জাপা থেকে আগমন ঘটা বর্তমান সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন। দায়িত্ব পেয়ে দলকে গতিশীল করতে মাঠে নেমে পড়েন হিরন। অতঃপর স্বল্প সময়ের মধ্যে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন । শুরু হয় সম্মেলনের প্রস্তুতি। ২০০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নির্ধারণও হয় সম্মেলনের দিনক্ষন। সব প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন, ঠিক সে সময়ই বাতিল হয় নির্ধারিত সম্মেলন। এরপর আর সন্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ফোন করা হলে তিনি মোবইল ফোন রিসিভ করেন নি। ওদিকে ২০০৬ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসাইনকে আহবায়ক করে  কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়। কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ যেমনি মেয়াদত্তীর্ন ইউনিয়ন কমিটি।

জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ১৯৯৩ সালে । সভাপতি হন জাকির হোসেন। আর  সাধারণ সম্পাদক হন ফজলুল করিম শাহিন। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে একবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ভেন্যু নির্ধারন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় সন্মেলন। মহানগর যুবলীগেরও সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ১১ বছর পর ২০০৪ সালে সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে তৎকালীন কমিশনার নিজামুল ইসলাম নিজামকে আহ্বায়ক করে গঠন হয় আহ্বায়ক কমিটি। জেলা কৃষক লীগ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ন। ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়েছে জেলা শ্রমিক লীগের সর্বশেষ কমিটি। শহর শ্রমিক লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে ১৯৯৯ সালে। পরে আফতাব হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত মহানগর কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ জেলা কমিটি হয়েছে ১৯৯৭ সালে। কমিটির সভাপতি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে দিয়ে চলছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কর্মকাণ্ড।

উদ্ভূদ পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী কিংবা গতিশীল করতে আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দাবীছিল দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বচ্ছ কমিটি গঠন করা। কিন্তু এখন আর তাদের তেমন একটা গুরুত্বও নেই কমিটি গঠনে। যে যেভাবে পারছে চলছে। পদ-পজিশন গ্রহন করে শেষ সময়ে তারা এখন আর বিরোধীদলের রেশানলের শিকার হতে চান না। এ ক্ষেত্রে তারা বলতে চাইছেন অ সময়ে কুকিলের ডাক দিয়ে লাভ কি?