ভক্তদের প্রতি স্টিভ জবসের ই-মেইল: জীবন অতি ভঙ্গুর

(প্রিয় টেক) অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলতে খুব একটা পছন্দ করতেন না। ২০০৩ সালে তিনি যখন প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হন প্রাথমিক ভাবে সেটা তেমন কেউ জানতো না। ব্যাপারটি প্রকাশ হয়েছিল সার্জারি থেকে ফিরে আসবার পরে। তার লিভার ট্র্যান্সপ্লান্টের ব্যাপারটিও তিনি গোপন রেখেছিলেন সকলের কাছ থেকে।

কিন্তু যতই তিনি নিজের মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে তার ধারণা প্রকাশে, নিজের পরিণতি সম্পর্কে গোপনীয়তা কমে গিয়ে সেখানে স্থান পেতে থাকে কাব্যিক ধ্যান ধারণা। আর এই ব্যাপারটি উন্মুক্ত হয়ে উঠতে থাকে তার দেয়া বিভিন্ন দুর্লভ সাক্ষাৎকারগুলোতে, এবং তিনি সময় ব্যয় করে যে সমস্ত ই-মেইল পরিচিত-অপরিচিতদের কাছে করেছিলেন সেগুলোর মাধ্যমে।

২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমি পেশা হিসেবে আমার জীবনকে দেখিনা, আমি কিছু করি। আমি কিছু করার অনুরোধে সাড়া দিই। এটাকে পেশা বলা চলে না – একে আমি বলি জীবন!"

একই ধরণের পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন তারা যাদেরকে তিনি ই-মেইলে জবাব দিয়েছিলেন। সেখানে যে সমবেদনা জানিয়েছেন তার মধ্যে ফুটে উঠেছে তার নিজের লুকানো কষ্টগুলো। জেমস নামক এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা বিজনেস ইনসাইডারকে জানায়, গত ২০শে এপ্রিল ২০১০ সালে একটি অঙ্গ দাতা প্রোগ্রামকে সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি স্টিভের কাছে একটি ই-মেইল করেন। যেখানে জেমস স্টিভকে জানান তার বান্ধবী দু'বছর আগে মেলানোমায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। এর জবাবে স্টিভ লেখেন, "জেমস, আমি আপনার বান্ধবীর সম্পর্কে দুঃখিত। জীবন অতি ভঙ্গুর।"

এক বিরল মুহূর্তে জবস যখন প্রকাশ্যে দার্শনিক হয়ে উঠেন, যে দিনটি সবার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে, সে দিনটি ছিল ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীর সামনে দেয়া বক্তব্যের দিনটি। সেখানে তিনি বলেন, "আমি খুব শীঘ্রই মারা যাব – এ কথা স্মরণ করাটাই আমার জীবনের সবগুলো বড় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। কারণ প্রায় সবকিছুই – বাইরের যত প্রত্যাশা, যত গর্ব, বিহ্বলতা অথবা ব্যর্থতার যত ভয় – মৃত্যুর সম্মুখে পরলে এর সব কিছুই দূরে সরে যায়, সম্মুখে রেখে যায় শুধুমাত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে।"

"আপনার মনের মাঝে হারানোর যে ভয় ফাঁদ পেতে রয়েছে তা এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে আমি একটা পদ্ধতিই জানি আর তা হচ্ছে, আপনি একদিন মারা যাবেন সেটা শুধু মনে রাখা।"

তিনি আরো বলেন, "কেউ মরতে চায় না। এমনকি যে ব্যক্তি বেহেস্তে যেতে চায়, সেখানে যাবার জন্য সেও মরতে চায় না। অথচ মৃত্যু হচ্ছে এমন একটা গন্তব্য যেখানে আমরা সবাই পৌঁছুব। কেউ এ থেকে পালাতে পারেনি। আর এরকমটাই হওয়া উচিত কারণ মৃত্যুই হচ্ছে জীবনের একক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এটি জীবন পরিবর্তনের প্রতিনিধি।"

যেমন প্রায়ই অনিবার্য অবস্থাকে মোকাবেলা করবার জন্য জবসের কাছে পরামর্শ নিতে আসত মানুষ, তেমনি এ সকল ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে আগ্রহ বোধ করতেন তিনি।

জবস মাঝে মাঝে যে কথাটি বলতেন, "মহাবিশ্বে একটি গর্ত" করতে তিনি এসেছেন, এবং অনেকেই মনে করেন তিনি তা করতে পেরেছেন। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন নিয়ে আসেন, পরিবর্তন আনেন প্রয়োজনীয় টুলগুলোতে এবং পরিবর্তন সাধন করে লাখো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে।

কিন্তু জবসের মত একজন স্বপ্নাদর্শীর যতটা না বিশ্বের প্রয়োজন ছিল, আপাতদৃষ্টিতে আমাদেরকেও তার প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, "আমার দিনটি পরিপূর্ণ হয়ে উঠতো সেই দিনগুলোতে যখন বিশ্বের লাখো মানুষের ভেতর থেকে কেউ একজন আমার কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে জানাচ্ছে যে, সে ইংল্যান্ডে একটা আইপ্যাড কিনেছে, এবং গল্পের মাধ্যমে জানাচ্ছে তাদের বাসার জন্য এবং তাদের জীবনেও কেনা সবচেয়ে কুল প্রোডাক্ট হচ্ছে এটি।"

"এই ব্যাপারটি আমাকে এগিয়ে যেতে প্রলুব্ধ করছে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও যা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। দশ বছর আগেও যা আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে – যখন আমার সামনে সব দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবং এটাই আমাকে আগামী পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা কিছুই ঘটুক না কেন।"

এর ১৬ মাস পর স্টিভ সবাইকে পিছনে রেখে ঢলে পরেন মৃত্যুর কোলে।

লেখাটি তৈরীতে সিএনএন এবং স্টিব জবসের আত্মজীবনীর সাহায্য নেয়া হয়েছে

-tech.priyo.com