বাকেরগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল কাদির বিপথে

দানিসুর রহমান লিমন, বাকেরগঞ্জঃ বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী নজরুল শরীফের নানা অপকর্ম ও দুর্নীতি ঢাকতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদির বিপথে চলছেন। শুরু করেছেন নানা কৌশলী দৌড়ঝাপ। নজরুলকে বাঁচাতে তিনি নিজেই এখন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সূত্র মতে নজরুলের অপকর্ম ও দুর্নীতি তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ বাকির হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিসহ দপ্তর সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন কৌশলে প্রভাবিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি বাধার সৃষ্টি করছেন। পাদ্রীশিবপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সরকারি কোয়াটার দখল করে থাকায় উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার দখলবাজ নজরুল শরীফের বেতন থেকে কোয়াটারের ভাড়া কর্তন করতে চাইলে সেখানে ডা. আব্দুল কাদির বাধা দেন। এছাড়া তার দপ্তর সংশ্লিষ্ট বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কোয়াটার দখলের অভিযোগ থাকায় হিসাব রক্ষন বিভাগ থেকে দখলবাজ এবং কোয়াটারের তালিকা চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। এতে তিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেন। তিনি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসারের সাথে অশোভন আচরণ করেন। নজরুল শরীফের যথেচ্ছারীতায় পুরো এলাকায় যখন ক্ষোভে উত্তাল তখনও কোনো প্রকার তদন্ত কিংবা বাছবিচার ছাড়াই তিনি নজরুল শরীফকে নির্দোষ দাবি করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। সাংবাদিকদের কাছেও তিনি নজরুলকে নির্দোষ দাবি করছেন কোন যুক্তি বা তথ্য প্রমান উপস্থাপন ছাড়াই। বেতন থেকে সরকারি কোয়াটার ভাড়ার টাকা কর্তন না করতে নজরুল শরীফের পক্ষে সাফাই গেয়ে (বেতন বিলের) প্রত্যয়নপত্রের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি (নজরুল শরীফ) কোন কোয়াটারে বসবাস করেন না।

অপরদিকে কোয়াটারে বসবাস করে কিন্তু ভাড়া পরিশোধ করেন না এমন কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়ে যে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিত্তোরে হিসাবরক্ষণ অফিসারকে লিখেছেন তার ঐ চিঠিতে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন! ঐ চিঠির একাংশে নজরুল কোন সরকারি কোয়াটারে বসবাস করেন না উল্লেখ করলেও অপর একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে সিভিল সার্জন এর নির্দেশে তিনি (নজরুল) পাদ্রীশিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করছেন। তার এ সবিরোধীতায় স্থানীয় লোকজন বিস্ময়সহ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সুশীল সমাজ দুর্নীতিবাজ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদির এবং স্বাস্থ্য সহকারী নজরুল শরীফের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারি নজরুল শরীফের স্বেচ্ছাচারিতা শঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌছেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা। অনেককেই স্বাস্থ্য সেবা নিতে এসে প্রতারিত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। সহায়-সম্বলহীন রোগিদের নিকট থেকেও নজরুল শরীফ ভিজিট আদায় করেন। ভিজিট না দিতে পারলে তাদের সাথে অশালীন ব্যবহার করে থাকেন। রোগিদের সাথে দুর্ব্যবহার করা এবং হেপাটাইটিস-ভি ভ্যাকসিন প্রতি ৫শ টাকা করে নেয়ার প্রতিবাদে তার অপসারণ দাবি করে স্থানীয়রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এর পরেও তিনি পকেট ভারী করতে “টুপাইস ইনকাম সিস্টেম” থেকে ফিরে আসেন নি। উপরন্তু নতুন নতুন অপকর্ম করে তার ধান্ধাবাজির পথ প্রসারিত করে নিচ্ছেন। শুরু করেছেন সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, মাটি চুরি, খাস জমি এবং কোয়াটার দখলের মত নানা অপকর্ম। সীমাহীন যথেচ্ছাচারীতা করেও পুরো পাদ্রীশিবপুরজুড়ে তার দাপটে হতবাক স্থানীয়রা। নানা অপকর্ম করেও তিনি বহাল তবিয়তে থাকায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ। তাদের ধারণা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই নজরুল শরীফ অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

স্থানীয় তহশিল অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে জনৈক স্বপন দাসের নিকট হতে তিনি ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি প্রায় দেড় শতাংশ সরকারি জমি দখল করে সাড়ে ৪ শতাংশ জমির উপর “শরীফ ম্যানশন” নামে বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। তার কর্মস্থলের অতি নিকটের এ অট্টালিকাটি ভাড়া দিয়ে তিনি নিজে বসবাস করছেন পাদ্রীশিবপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সরকারি কোয়াটার দখল করে। কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বরাদ্দ নানা ধরণের ওষুধ-পথ্য বিক্রি করার জন্য উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিকটেই ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন একটি ঔষধ বিক্রির দোকান খুলে বসেছেন। ক্লিনিকের সরকারি বিনামূল্যের ঔষধ ছাড়াও বিভিন্ন ডাক্তারের নিকট হতে স্যামপেল ঔষুধ কিনে ক্লিনিকের রোগিদের নিকট এবং ফার্মেসিতে বিক্রি করছেন।

তহশীল অফিস সূত্রে জানা গেছে নজরুল শরীফ আড়াইবেকী মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত খাস জমি থেকে মাটি কেটে নিজের নব-নির্মিত বাড়ীর ডোবা-নালা এবং আঙ্গিনা ভরাট করেছেন। এ সময় তহশিলদার মোঃ হারুন-অর-রশীদ বাধা দিলেও তিনি তা তোয়াক্কা করেন নি। পরে এ ঘটনায় তহশীলদার বাদী হয়ে একটি মামলা করলেও সেখানেও কালো হাতের অদৃশ্য ইশারা। সুরাহা মেলেনি কোনো। বরং মনে হচ্ছে ব্যাংক হিসাবের মত তামাদি হয়ে আছে মামলাটি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, সচিব, মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সবগুলো দপ্তরে স্থানীয় প্রায় ২ শতাধিক লোক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করলেও এ পর্যন্ত ফলাফল শূন্য! উল্টো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদির উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের নিকট দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য সহকারী নজরুল শরীফের পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে নজরুল শরীফের বিরুদ্ধে কোয়াটার দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। তার বেতন থেকে যাতে সরকারি কোয়াটারের ভাড়া কর্তন করা না হয় সেজন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ এ প্রতিবেদকসহ বাকেরগঞ্জ প্রেসক্লাবের অন্যান্য সাংবাদিকরা গতকালও কোয়াটার দখলের চিত্র সরেজমিনে দেখে এসেছেন। (চলবে)