মরিয়াও বেচে আছেন প্রিয় জনদের অন্তরে

শাহীন হাসান, বরিশালঃ অসম্ভব দরদী ছিলেন তিনি। সোজা কথায় মানুষ অন্তঃপ্রাণ। রাত-বেরাত তার আবাসে কত মানুষ স্থান পেয়েছেন, থেকেছেন-খেয়েছেন এই সংখ্যা অনেক। কখনো অনীহা প্রকাশ করেননি। ছেলেদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থান ছিল এই ভালো মানুষের আবাসে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার কর্মস্থান ছিল বরগুনা জেলার বিষখালী নদীর তীর ঘেষা নলী বন্দরে। এখানের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস ভবনটি হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ স্থান। সাধ্য অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার আর বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন। তবে তিনি থেকেছেন অনেকটা নির্ঝঞ্ঝাট। তাই বলে সন্তানরা বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকলেও তাতে কখনো বাঁধ সাধেনিন। যথেষ্ট সহায়তা করেছেন। কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেননি। এ তথ্য বড় ভালো মানুষের পুত্রদের সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে পাওয়া। বর্ণনার এই ভালো মানুষ হলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন মিয়া। যিনি গতকাল বিকেল ৫টায় অনেককে কাঁদিয়ে ব্যথিত করে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে নগরের জানকি সিংহ রোডস্থ বাস ভবনে ছুটে যান বরিশাল-১ আসনের সাংসদ এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুচ, বরিশাল সদর আসনের সাংসদ এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার সহ সংবাদকর্মীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গ। শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন, বিসিসি মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরন, বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল, সম্পাদক লিটন বাশার, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মহম্মদ আলী খান জসিম ও সম্পাদক নজরুল বিশ্বাস, দৈনিক বাংলার বনে পত্রিকার সম্পাদক শাহ্ শারমিন, নির্বাহী সম্পাদক এস.এইচ সাইফুল্লাহ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সহ পরিবারবর্গ। মো. আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর গতকাল বুকে ব্যথা অনুভব করলে ডা. হুমায়ুন কবিরের কাছে নেয়া হয়। ইসিজি করানো হলে ফের ডাক্তারি চেম্বারে উঠাতে গেলে তিনি তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে (ইন্নালিল্লাহে…রাজিউন।) মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ পুত্র, ৩ কন্যা, ১০ নাতি নাতনী সহ অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী রেখে যান। যার প্রমাণ মেলে মৃত্যু খবর পেয়ে ছুটে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সময়ের তার কলিগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিলাপে। মরহুমের বড় পুত্র নাজমুল আহসান মিজান হাইকোর্টের বিচারপতি পদে কর্মরত আছেন। মেঝ পুত্র সি.এইচ মাহবুব দৈনিক বাংলার বনে’র বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ছোট ছেলে তৌফিক মারুফ কালের কণ্ঠ’র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে ঢাকাতে কর্মরত আছেন। হিজলা উপজেলার পশ্চিম ডাইয়অ গ্রামের এক বর্ধিষ্ণু পরিচারে আনোয়ার হোসেন মিয়ার জন্ম। কর্মজীবনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুপারভাইজার পদে কর্মরত ছিলেন। আজ সকাল ৯টায় মরহুমের প্রথম জানাজার নামাজ এ.কাদের চৌধুরী স্কুল মাঠে এবং দ্বিতীয় জানাজা সকাল ১০টায় অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে।