মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশাল ওষুধ প্রশাসন কার্যক্রম

বরিশাল সংবাদদাতাঃ বরিশাল মহানগর ও জেলার ওষুধের বাজারে নই নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত সুপার ভিশন। বিভিন্ন ব্রান্ডের নকল ওষুধ, ইনজেকশন এবং ফুড সাপ্লিমেন্টারি (পট কোম্পানির) বিতর্কিত মেডিসিন আইটেমে বাজার সয়লাব হলেও প্রতিষ্ঠানটির নেই তেমন কোন পদক্ষেপ। ক্রেতাদের ঠকিয়ে ওষুধ কোম্পানি এবং বিক্রেতারা উপরি কামাই বেশ জমজমাট। সূত্রে প্রকাশ, জনবল সংকট, দুর্নীতি, রাজনীতি এবং ফামের্সী সংগঠনের সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি বরিশাল ড্রাগ অফিস। প্রতিষ্ঠাটির অধীনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, ঝালকাঠী, ভোলা জেলার ওষুধের মার্কেট রয়েছে। এতো বড় জোন সুপার ভিশনের জন্য ৫ পদের মধ্যে দায়িত্বে আছে মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে এসিল্যান্ট ডিরেক্টর ১ জন, হেড ক্লার্ক ১ জন, এমএলএসএস ১ জন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রম। ওষুধ বিক্রয়ের লাইসেন্স, ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালের ছাড়পত্র, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ওষুধের এমএফজি (ম্যানুফেকচারিং ডেট ও লাইসেন্স) ডি,এ,আর (ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেজিঃ) ইক্সপি (এক্সপেয়ার ডেট), এমআরপি (মেক্সিমাম রিটেইলার প্রাইম) সহ ওষুধের ৬টি দিক নিয়ন্ত্রণ করা হয় ওষুধ প্রশাসনের হেড অফিস ঢাকার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে বিভাগীয় অফিসগুলো লোকাল মাকেটগুলো পরিদর্শনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, ফার্মেসী লাইসেন্স পেতে হলে জাতিয়াতা, ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক সলভেন্সি, ট্রেজারি চালান, প্রতিষ্ঠানের বিবরণ এবং ফার্মাসিষ্ট সহ ২টি আবেদন ফরম পূরণ করার বিধান রয়েছে। প্রতিটি ফার্মাসিস্টে অবশ্যই একজন করে ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় ঐ ওষুধের বিক্রয় নিষিদ্ধ বলে গন্য হবে। ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশন পড়বে এবং ওষুধ নিশ্চিত হওয়া, সেবনবিধি চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝিয়ে দেয়া এবং প্রাথমিক ধারণা থাকবে ওষুধের গ্র“প জানার জন্য। সেক্ষেত্রে ফার্মাসিস্ট হতে হলে ন্যূনতম এসএসসি পাস এবং বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে ৩ মাস প্রশিক্ষণ শেষে সনদপ্রাপ্ত হতে হবে। সেই সাথে উক্ত লাইসেন্সটি বছরান্তে নবায়ন করার শর্ত রয়েছে। বিএমপি থানাধীন ড্রাগ অফিসের হিসেন অনুযায়ী ৬শ’ লাইসেন্সসহ ফার্মেসী রয়েছে। বাকি প্রায় ৫০টির লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন। প্রতিটি ফার্মেসীতে ১ জন ফার্মাসিস্ট বাধ্যতামূলক হলেও তা অধিকাংশ ফার্মেসীতে নেই এবং যেসব ফার্মেসীতে ফার্মেসিস্ট রয়েছে দাবি করা হয় তাদের বেশির ভাগ সনদপত্র বিহীন। এমনকি জানেই না যে, ফার্মাসেস্ট সনদপত্র থাকতে হবে। নগরীর সদর রোড, রূপাতলী, নথুল্লাবাদ, নাজির মহল্লা সহ স্থানগুলোতে ফামের্সীতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় ড্রাগ অফিসের কেউ এসে এ বিষয়টি তদন্ত করে না। তখন বলা হয় না ড্রাগ অফিস কোথায়? এ ব্যাপারে কতিপয় মালিক ড্রাগ অফিসের ঢিলেমী এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেন। বিভিন্ন সূত্রে বরিশাল ড্রাগ অফিসকে ম্যানেজ করে অনেক নামী দামী ব্রান্ডের ইনজেকশন, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ফুড সাপ্লিমেন্টারি পণ্য ওষুধ হিসেবে নগরীর কাটপট্টি, জেলখানার মোড, সদর রোডসহ বিভিন্ন মার্কেটে সাপ্লাই করা হয়। দুর্নীতির এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে।

এদিকে ফার্মেসী লাইসেন্স পেতে গেলে নির্ধারিত সরকারি ফি একহাজার ৫ শত এবং জেলা ও উপজেলার জন্য ৭শ’ ৫০ টাকার বাইরে কমপক্ষে ২-৩ হাজার টাকা উপড়ি দিতে হয় ড্রাগ অফিসকে। বাইরে অফিসের কর্তাব্যক্তিরা ২০ দিনের কাজ ৪/৫ মাস ঘুরিয়ে টাকা হালাল করে বরিশাল অফিস থেকে আবেদন ফরম ঢাকা ডিরেক্টের জেনারেল (ডিজি) অফিসে পাঠানো হয় চূড়ান্ত করার জন্য। এদিকে ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলো কোন নতুন আইটেম বের করার জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে তা ড্রাগ অফিসের অনুমোদন পেতে হয়। এক্ষেত্রেও গুণত হয় উপরি টাকা। যা তাদের ঐ অফিসের ভাষায় কিগার সিলোনা। নগরীর কয়েকটি কোম্পানির সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে ফার্মেসী মালিক সংগঠনের সিন্ডিকেটের কারণে ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রম অচলাবস্থায় পড়েছে। বিসিসিতে কয়েকবার ওষুধের দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয় নকল, ডেটলেস এবং ফুড সাপ্লিমেন্টারি বিতর্কিত (পট) ওষুধ জব্দ করার জন্য। ঠিক তখন সিন্ডিকেটটি ধর্মঘট করে। এরপর বিসিসি মেয়র এবং সাংসদ এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুচের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংশা করা হয়।

বরিশাল ওষুধ প্রশাসন অফিসের এ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর এটিএম জাহিদ হোসাইন বলেন, জনবল সংকট, নিরসনে আমরা ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি। দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, তার তা জানা নেই। আর ওষুধের মার্কেটগুলোতে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানান এবং সেই সাথে ফুড সাপ্লিমেন্টারি ফার্মেসীতে বিক্রির অনুমতি নেই বলে জানান।