বরিশাল সদর উপজেলা আ’লীগ নেতাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে কর্মীরা

বরিশাল সংবাদদাতাঃ বরিশাল সদর উপজেলা আ’লীগের বর্তমান অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। নেতাকর্র্মীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাধারণ সমর্থকরা দলটির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। জানা গেছে, শহরতলীর চরকাউয়া ইউনিয়নটিতে বরাবরই বিএনপির ঘাটি হিসেবে চিহ্নিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আ’লীগের অবস্থান চাঙ্গা হয়ে ওঠে। একাধিক নেতাকর্মী তফন অন্যান্য দল থেকে আ’লীগের পতাকা তলে এসে নিজেদেরকে জড়িয়ে নেয়। এতে সমর্থকরাসহ ভোটার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, ওই সময় ইউনিয়নটিতে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আ’লীগ সমর্থন ছিল।

বলা বাহুল্য, শতাংশের ওই ধারাটি বেশি দিন আওয়ামী নেতাকর্মীরা ধরে রাখতে পারেনি। ইউনিয়নের উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দলের পোষ্ট পজিশনের অবস্থানকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে যে যার মতো করে অর্থ লুটের ধান্ধায় মাঠে নেমে পড়েন। দলের সাধারণ সমর্থকরা মনে করেন কাবিখা, টি,আর, ৪০ দিনের কাজের কর্মসূচিসহ নানাবিধ সরকারি বেসরকারি কাজের অনুদাই চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সব কাজের একটা বড় অংশ নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে নিত। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি হলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জানা গেছে, বিগত দিনে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ ৯ ওয়ার্ডের নেতাদের মাধ্যমে বন্টন করা হত। আর ওই সব নেতারা সুবিধা মতো ব্যক্তিদেরকে কাজের টিকেট দিয়ে দিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৬নং ওয়ার্ডের আ’লীগের কতিপয় সমর্থক জানায় যে, কখনো কখনো কর্মসূচির কাজের টিকিট বা অনুমতি একই ঘরের মধ্যে ৫ জন সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার বলে বন্টন করে দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া একাধিক নেতাকর্মীরা কর্মসূচির কাজে অংশগ্রহণ না করেও দলের ক্ষমতায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরবাড়িয়া ইউপির কতিপয় নেতা ৪০ দিনের কাজের লেবার দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজও করাতেন। সবকিছু মিলে আ’লীগের নেতাকর্মীরা লুটতরাজের রাজনীতির দিকেই নিজেদের বেশি মনোনিবেশ করাতেন। এছাড়া নিজ দলের নেতাকর্মীদের সাথে ভাগ বাটায়োরা নিয়ে অহরহ ছোট খাট সংঘর্ষ লেগেই আছে। কিছুদিন আগে ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা শাহীনকে তুচ্ছ ঘটনায় রক্তাক্তভাবে জখম করলে তাকে শেবাচিমে ভর্তি হতে হয়।

এদিকে এ বছর ঈদুল আযহার গরুর হাট নিয়েও আ’লীগ কর্মীদের মাঝে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। ইউনিয়নের পুরাতন গরুর হাট ছিল কাগাশুরায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তালতলী ও কাগাশুরার নেতাকর্মীদের মাছে টাকা-পয়সার ভাগবটোয়ারা নিয়েও নানাবিধ সমস্যা ও রেশারেশির সৃষ্টি হয়। তখন দলের হাইকমান্ড চরবাড়িয়া ইউনিয়নের আ’লীগের সভাপতি আ. খালেক এর হাতে গরু হাটের দায়দায়িত্ব অর্পণ করেন। নেতাকর্মীদের এহেন রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি কোনটাই মেনে নিতে পারেনি চরবাড়িয়া ইউপির আ’লীগ সমর্থকরা। যার ফলে দলের প্রতি আস্থা হারিয়েছে তারা। যার নজির দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত হওয়া ইউপি নির্বাচনে। দল থেকে অনুমতি পেয়ে ইতালী শহীদ আ’লীগের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর সাথে বিপুল ভোট ব্যবধানে পরাজিত হয়। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, কতিপয় নেতাকর্মীর কারণেই ভোটে আ’লীগের ভরাডুবি হয়েছে।

জানা গেছে, ইউনিয়নটিতে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন হলে এখনও এর সঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে না ইউনিয়ন আ’লীগের পক্ষ থেকে। এদিকে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের আ’লীগ সভাপতি আ. খালেক এর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অত্র ইউনিয়নের কতিপয় নেতাকর্মীর কারণেই বর্তমানে আ’লীগের এই অবস্থা। সে জানায় যে, যে পোস্টে যাকে খাটে না তাকে সেই পোস্টে হাইকমান্ড দেয়ার ফলে সমর্থকদের মাঝে নানা স্নায়ুবিক ক্ষোপের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ইউপি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেনি। তবে দলে আসন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলের অবকাঠামো আরো মজবুত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।