অভিযানের নামে বিনোদন স্পট থেকে আটকে ক্ষুব্দ অভিভাবকরা

শাহীন হাসান, বরিশালঃ অভিযানের নামে যাচ্ছে তাই করে বড়েচ্ছেন বরিশাল থানা পুলিশ। বিনোদন স্পট থেকে প্রেমিক যুগলদের ধরে নিয়ে বন্দি করছেন পুলিশের খাচায়। যা সম্পূর্ন বে-আইনি বলে উল্লেখ করলেন খোদ ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার। এ প্রতিবেদকের সাক্ষাৎকার গ্রহনের পর টনক নরে যায় পুলিশের। পূর্বে ঘোষিত পুলিশের অভিযান চালানোর কথা ছিল নগরীর স্কুল-কলেজ গুলোর সামনে আড্ডা দেয়া কথিত রোমিও স্টাইলের মেয়েদের উত্তপ্তকারী ইভটেজারদের। কিন্তু পুলিশের কনেষ্টবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া নব এস আই দেলোয়ার, আবু তাহের ও পিএসআই চিন্ময় তাদের অভিযান চালায় বিনোদন স্পট ত্রিশ গোডাউন ও বিআইডব্লিউটির মাঠে। অভিযানে আটক করা ১৮ জন কিশোর-কিশোরীকে। আটকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রীতিমত পোয়াবারো অবস্থা পুলিশের। রাত ১০ টা থেকে কোতয়ালি মডেল থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে অনুরোধ করতে থাকেন ভাই প্লিজ আটকক্রতদের কোন ছবি পত্রিকায় দিবেন না। তবে আমাদের সমস্যা হবে।

পুলিশের প্রাপ্ত তথ্য মতে, রোমেওদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ইভটিজিংয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। রোমিওদের আটক করা হলেও বড় ভাই কিংবা অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। তিন দিন ধরে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল এদের বিরুদ্ধে। প্রথম দফায় ৯ প্রেমিক যুগলকে আটক করছে কোতয়ালী থানা পুলিশকে। তবে আটকের পরপরই ধৃতদের মুক্ত করতে এ্যাডভোকেট, ক্ষমতাসীন দলের মহানগরের নেতারা, বিরোধী দলের নেতাসহ তাদের অভিভাবক মহল খবর পেয়ে উপস্থিত হন কোতয়ালী থানায়। আটককৃতদের ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের একাধিক বক্তব্য ছিল। যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইনের ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলে কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, গতকাল সকালে উল্লেখিত ৩ পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরের ত্রিশ গোডাউন ও বিআইডব্লিউটির মাঠ থেকে ১৮ জন কিশোর-কিশোরীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। আটককৃতরা হলো- কাশিপুর এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে কবির (১৮), ক্যাডেট কলেজ এলাকার হারুনের মেয়ে লাকি (১৬), পটুয়াখালী লোলানিয়া গ্রামের জামাল হাওলাদারের ছেলে রাকিব (২০), নগরের মধুমিয়ার পোল এলাকার বিমল চন্দ্রের মেয়ে কবিতা (১৭), পটুয়াখালীর ইমরান (২০), বটতলা এলাকার হুমায়ন ইসলামের ছেলে ফিরোজ আহমেদ, হাতেম আলী কলেজ রোডের আ. ছালাম মিয়ার ছেলে আরমান (১৭), নবগ্রাম রোডের মোসলেমের মেয়ে ইভা (১৯), কাউনিয়ার শাহজাহানের ছেলে ফয়সাল (২২), মধুমিয়ার পোল এলাকার চাঁন মিয়ার মেয়ে শারমিন (২১), গোলাম কিবরিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (২০), কাশিপুরের মোসলেম হাওলাদারের মেয়ে সুমি (১৬), পিরোজপুরের আতিকুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান (২০), সায়েস্তাবাদের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে ছালমা (১৮), দিনারের পোলের সেলিম সরদারের ছেলে সোহাদ (১৮), পুরানপাড়ার আলম মিয়ার মেয়ে শিরীন (১৪), বরিশাল ডিসি গেট এলাকার কুদ্দুসের ছেলে বাহাদুর (১৮) এবং গীর্জা মহল্লার জব্বার মিয়ার মেয়ে মুক্তা (১৭)। এদের ১৪ জনকে ত্রিশ গোডাউন এবং বাকি চারজনকে বিআইডব্লিউটি’র মাঠ থেকে আটক করা হয়। এ ব্যাপারে রাতে কোতয়ালী থানার ওসি শাহেদুজ্জামানের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করে তার ফোন ব্যস্ত পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সেকেন্ড অভিসার এসআই কমোলেস চন্দ্র হালদার বলেন, যাদের অভিভাবকরা এসেছে শুধুমাত্র তাদেরকেই মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এএসআই মহিউদ্দিন বলেন, তাদের আটকের কোন নিয়ম নেই। বিনোদন পার্কে সবাই ঘুরতে যেতে পারে। এতে পুলিশের উচিত হয়নি তাদের আটক করা। এ ব্যাপারে বিএমপি ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জিল্লুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা গত তিন দিন যাবৎ মাইকিং করেছি যে, স্কুল কলেজের সামনে কোন রকম ইভটিজিং বা বিনা কারণে কিশোর-কিশোরীদের ঘোরাফেরা করতে দেখলে তাদের আটক করা হবে। এরপর অভিভাবকরা এসে মুচলেকার মাধ্যমে মুক্ত করে নিবেন। তবে বিনোদন পার্ক থেকে যখন তাদের আটক করা হয়েছে এমন বিষয়টি ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেয়া হবে। কিন্তু আটককৃতদের যদি আপত্তিকর অবস্থায় পায়; তাহলে আটক করতে কোন বাধা থাকবে না।

কোতয়ালী থানার এসআই দেলোয়ার এবং সেকেন্ড অফিসার কমলেশ জানান, আপত্তিকর অবস্থায় তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। চলমান সময় অনুযায়ী এসব বিষয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য তাদের এই অভিযান।