জীবনের দাম এত কম

ওয়াকিল আহমেদ হিরন: জীবনের দাম এতই কম! বিশ্বের কোনো কোনো দেশে পোষা কুকুর-বিড়াল হত্যা করলে ১০ বছরের বেশি সাজার বিধান রয়েছে। এমনকি অনেক দেশে বেপরোয়াভাবে পথ চলার দায়ে সাজা ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ এ কেমন দেশ! রাস্তায় চালকের ভুলে সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে পড়লেও সর্বোচ্চ সাজা মাত্র তিন বছর। শুধু দু'একটি নয়, একসঙ্গে শতাধিক প্রাণ কেড়ে নিলেও একই শাস্তির বিধান। আইনের সীমাবদ্ধতায় গতকাল আবারও 'গুরুপাপে লঘুদণ্ডের' এমন একটি দুঃখজনক নজির স্থাপিত হলো চট্টগ্রামের আদালতে। বহুল আলোচিত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মর্মান্তিক ট্রাক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রসহ ৪৪ জন মর্মান্তিকভাবে নিহতের ঘটনায় চালক মফিজউদ্দিনকে দুটি ধারায় মোট পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফরিদা ইয়াসমিন গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। আইনবিদরা বলছেন, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বিচারক এর বেশি দণ্ড দিতে পারেননি। তারা এই আইনের সংশোধন দাবি করেন। শুধু আইন বিশেষজ্ঞই নয়, মিরসরাইয়ে নিহত স্কুলছাত্রের বাবা-মা এবং শিক্ষকরাও আইন সংশোধনের দাবি তুলেছেন।
আইনজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা প্রচলিত দুর্বল এই আইনকে পরিবর্তন করে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় অপরাধীরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তি আরও কঠোর করার দাবি সব শ্রেণী-পেশার মানুষের দীর্ঘদিনের। তবে এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্ঘটনা আগামীতে যেন কমে আসে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবশ্য মামলার বাদী কবির আহমদ নিজামী বলেন, বিচার দ্রুত হয়েছে, এটুকুই সান্ত্বনা। এতগুলো জীবনের বিনিময়ে এটুকু শাস্তি সন্তুষ্ট হওয়ার মতো নয়।

আগস্ট মাসে মানিকগঞ্জে ভয়াবহ একটি সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী আশফাক মুনীর মিশুকসহ অন্যরা। তাদের অকাল মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানায়। যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ ও জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে অদক্ষ এবং অযোগ্য চালকদের লাইসেন্স না দেওয়ার দাবিতে লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে জনতা ঈদের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করে। এই অনশনের প্রতি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা সংহতি জানিয়েছিলেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুদিন সড়ক দুর্ঘটনা কমলেও পরে আবার আগের অবস্থা।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর দায়ে একটি ধারায় ট্রাকচালক মফিজকে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। চালকের দোষে দুর্ঘটনায় যাত্রী জখম হওয়ায় আরেকটি ধারায় তাকে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ দুটি সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে। এ সময় আদালত কক্ষে ট্রাকচালক মফিজ উপস্থিত ছিলেন।

রায় প্রসঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি আইনটি দুর্বল। এটা বদলাতে হবে। কে শোনে কার কথা। কোনো সরকারই জনগণের কথা শোনে না। এখন যা হওয়ার তাই হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরবে আর লঘুদণ্ড হবে। তাতে সরকারের কিছু যায়-আসে না। ক্ষতি আপনার-আমারই হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, আইনে যেটা আছে আদালত সেটাই দিয়েছেন। এর চেয়ে আদালতের বেশি কিছু করার নেই। এতগুলো শিশুর প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো_ চালকের মাত্র পাঁচ বছর শাস্তি হলো_ এটা যথেষ্ট কি-না, এর জবাবে তিনি বলেন, সরকারের উচিত আইনটি আরও শক্তিশালী করা। এ নিয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ফৌজদারি শাস্তির বিধান পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে নেই। কারণ, দুর্ঘটনা কেউ ইচ্ছা করে ঘটায় না। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সংশ্লিষ্ট বাস-ট্রাকের মালিক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের বিরাট অর্থ আদায় করা ছাড়া দুর্ঘটনা হ্রাসে আর কোনো কার্যকর পন্থা নেই। তিনি বলেন, চালককে শাস্তি দিয়ে দুর্ঘটনা কমেনি। বিদেশে আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামলে মালিককে জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশেও একই ধরনের বিধান করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমি এ বিচার মানি না। চালকের ভুলের জন্য একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ৪৪টি তাজা শিশুর প্রাণ চলে গেল। আর চালকের মাত্র পাঁচ বছর সাজা হলো। এটা মেনে নেওয়া যায় না। চলমান আইন বাতিল করে এরশাদ আমলের ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা বলবৎ করতে হবে। আগের আইনে বিচার না হলে আমরা ন্যায়বিচার পাব না। চালকরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ১৮ বছর ধরে আন্দোলন করছি। এ পর্যন্ত কারোরই সাজা হয়নি। এই শাস্তি বাস্তবায়ন হলে একটা শুভ সূচনা হবে।

সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই শাস্তি কোনোমতেই যৌক্তিক নয়। এতগুলো শিশুকে হত্যা করা হলো। শাস্তি হলো মাত্র পাঁচ বছরের। এটা কীভাবে হয়। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। হত্যা মামলায় যে শাস্তির বিধান আছে সড়ক দুর্ঘটনায়ও একই বিধান করা উচিত। তার মতে, প্রচলিত আইনের ধারা যথেষ্ট নয়।

মিরসরাই ট্র্যাজেডি প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের আইনে অনেক ফাঁক-ফোকর আছে। এ ফাঁক-ফোকর দিয়ে অপরাধীরা বের হয়ে যায়। তিনি বলেন, রায় সম্পর্কে মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই আমার। এটি আইনগত বিষয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা রোধে তার মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমি মন্ত্রী হওয়ায় আর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে না_ এটা বলতে পারি না। দুর্ঘটনা যাতে কমে আসে এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।

জানা গেছে, অতীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে চালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা করা হতো। ওই ধারায় শাস্তির বিধান ছিল সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। বর্তমানে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় চালকের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রচলিত ধারায় চালক দোষীসাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ তিন বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

আইনজীবীরা জানান, দেড়শ' বছরের আগে ব্রিটিশদের প্রণীত আইনে সাজার মেয়াদ ছিল সাত বছর। এরশাদ সরকারের আমলে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘাতক চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও জামিন অযোগ্য ধারা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু চালকদের আন্দোলনের মুখে এ শাস্তি বাতিল করে পুরনো ধারা বহাল করা হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সাজার মেয়াদ শিথিল করে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর করা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০৪ক ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও কার্যবিধির ৩০৪খ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনা আইন সংশোধন করে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন। একসঙ্গে ৪৪ স্কুলছাত্রের প্রাণহানির ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সাজা কম হওয়ায় এ রকম ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটবে। একই অভিমত ব্যক্ত করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী জানান, যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা রোধ করতে হলে বর্তমান আইনটি সংশোধন করা জরুরি।

মামলার বাদী মিরসরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহমদ মামলার রায়ের পর বলেছেন, তিনি তো প্রচলিত আইনেই এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। আসলে প্রচলিত আইন একেবারেই দুর্বল।

দুর্ঘটনায় নিহত আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হোসেনের বাবা জহিরউদ্দিন আইনের দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'আমি জানতাম ড্রাইভারদের পাঁচ থেকে সাত বছরের বেশি সাজা হবে।' প্রচলিত আইন সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, 'দেশের অনেক লোক এ দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে জুতার মালা খেয়েছেন। ইলিয়াস কাঞ্চনকে যে সভায় জুতার মালা (প্রতীকী) দেওয়া হয়, সেখানে মন্ত্রী শাজাহান খানও উপস্থিত ছিলেন। উনি তো সরকারেরই অংশ। আমার মতো সাধারণ লোক আর দাবি করে কী হবে?'

আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর সাদেকের এক কথা। নিজের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের হারিয়ে ঘটনার পর কয়েকদিন শুধুই কেঁদেছিলেন এ শিক্ষক। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনায় সারাদেশ মর্মাহত হয়েছিল। সবাই বলবে, এটা অতি নগণ্য সাজা। জানি, প্রচলিত আইনে সীমাবদ্ধতা আছে। আইন কঠোর করার দাবি জানান তিনি। তবে বিচার দ্রুত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন জাফর।

দুর্ঘটনায় নিহত আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র আবু ফিনুজনের বাবা রিদোয়ান বলেন, আমরা শোকার্ত। চালকের ফাঁসি হলেও আমার ক্ষতি পূরণ হবে না। তবে দ্রুত বিচার হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে বিপুল দাশ জানান, আলোচিত মিরসরাই ট্র্যাজেডি মামলার রায় নিয়ে নিহত ছাত্রদের পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রায়ের খবর মিরসরাইয়ে এসে পেঁৗছলে সচেতন মহল দেশের বর্তমান দুর্বল মোটরযান আইনের ব্যাপক সমালোচনা এবং ওই আইনকে সময়োপযোগী করে সংশোধনের দাবি জানায়।

জানা গেছে, গত ১১ জুলাই মিরসরাই সদর থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার আবুতোরাব-বড়তাকিয়া সড়কের পশ্চিম সৈদালী এলাকায় স্কুলছাত্র বহনকারী একটি মিনি ট্রাক খাদে পড়ে যায়। এ সময় ৩৭ ছাত্রসহ ৩৯ জন নিহত হয়। আহত হয় ১৮ জন। আহতদের মধ্য থেকে আরও ৫ ছাত্র চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ জনে। দুর্ঘটনার রাতে মায়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বাদী হয়ে মিনি ট্রাকচালক মোঃ মফিজুর রহমানকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের চার মাস ২৯ দিন পর গতকাল আলোচিত ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, আমি দেশের প্রচলিত আইনে বিচার দাবি করে এসেছি। অপরাধের তুলনায় অভিযুক্তের শাস্তি অত্যন্ত হালকা হওয়ার জন্য মোটরযানের বর্তমান দুর্বল আইনই দায়ী। তারপরও মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ হওয়ায় সরকার ও আদালতের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ট্র্যাজেডিতে নিহত ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের বাবা আনোয়ার হোসেন, ইমরান হোসেন ইমনের বাবা আবুল কাশেম, নয়ন শীলের মা নীলিমা রানী শীল রায় শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ আইন সংস্কার প্রয়োজন। একজন মানুষকে হত্যা করলে যেখানে আসামির যাবজ্জীবন কারাদ অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সেখানে ৪৪ জন ছাত্রকে মেরে ফেলার ঘটনায় অভিযুক্তের মাত্র ৫ বছর সাজা হয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তারা বলেন, মোটরযান আইন আরও সংশোধন করে যেন নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। তাহলে মিরসরাই ট্র্যাজেডির মতো এমন ঘটনার আর জন্ম হবে না।

ট্র্যাজেডিতে নিহত সামছুদ্দীনের মামাতো ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মোঃ আজাদ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত চালক মফিজুর রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দেশের দুর্বল আইনের কারণে এমন রায়ে আমরা খুশি হতে পারিনি।

আবুতোরাব প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের শিক্ষার্থী সরওয়ার উদ্দিন, মোঃ রুবেল, তনুশ্রী চৌধুরী, আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিলুফা ইয়াসমিন, মেরিনা আক্তার বলেন, দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে এ রায় ঘোষণা হয়নি। আমরা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। তারা মোটরযানের বর্তমান আইনকে সংশোধন এবং ট্রাফিক আইনের সঠিক বাস্তবায়ন দাবি করেন।

আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার কান্তি রায় বলেন, রাষ্ট্রীয় আইনের কাঠামোতে যে বিধান রয়েছে সে বিধান হিসেবে মামলায় রায় হয়েছে। ওই রায়কে আমাদের সম্মান করতে হবে। আইনের দুর্বলতার কারণে সন্তোষ প্রকাশ করার মতো রায় হয়নি। দ্রুত মামলার রায় ঘোষণা হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার দিন ৩৯ জন এবং দুর্ঘটনার পর আরও ৫ ছাত্রকে আমরা হারিয়েছি। জীবনের মূল্য টাকা অথবা কাউকে সাজা দিয়ে হয় না। ট্র্যাজেডির ঘটনায় আমরা অভিযুক্তের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছিলাম। দেশের প্রচলিত আইনে ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ রায় আমরা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি মোটরযানের বর্তমান আইনকে সংশোধন করে নতুন আইন করার পক্ষে মত দেন। শুধু আইন দিয়ে নয়, ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালক ও যাত্রীদের সচেতন হতে হবে।

Daily Shamakal