সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের অপরাধে পরিবারের সামনে উলংগ করে মারধর

ও হামলা মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করায় অমরেন্দ্র মল্লিককে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করেছে স্থানীয় এমপি ও পৌর মেয়রের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অমরেন্দ্রর বাড়িতে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের সঙ্গে তাকে উলংগ করে বেধড়ক মারপিট করে ওই সন্ত্রাসীরা।

পরে প্রকাশ্যে পেটাতে পেটাতে পৌরভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে পৌর মেয়র ডাকাত নায়েক শফির নেতৃত্বে পিতা ও পুত্রকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এসময় অমরেন্দ্রর বিবাহিত কন্যা কাদঁতে কাঁদতে পৌর ভবনে হাজির হলে তাকেও পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে শ্লীলতাহানী করা হয়। পরে পিতা পুত্রের নামে একই দিন চুরি ও মারপিটের মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়।

মধ্যযুগীয় এ ঘটনাটি সীতাকুন্ড পৌর এলাকায় গত ৫ মে ঘটলেও কোন পত্রিকায় সংবাদ হয়নি। স্থানীয় সাংবাদিকরা সাহসই পাননি- এ নিয়ে কোন সংবাদ লেখার। এর আগে সীতাকুন্ডে তীর্থযাত্রীদের গণডাকাতি করা হলেও কোন খবর হয়নি। অমরেন্দ্র চট্টগ্রামে চিকিৎসাও নিতে পারেন নি। তিনি ঢাকায় পালিয়ে এসেছেন। আজ আমার অফিসে বসে তার ওপর বর্বর যুগের কায়দায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের আমিরাবাদ মায়াকুঞ্জের এলাকার অমরেন্দ্র মল্লিক সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৫ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। তিনি সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধ ও কল্যান কমিটির সভাপতি। ওই সংগঠনের ব্যানারেই তিনি সীতাকুন্ডের স্থানীয় এমপি আবুল কাশেম মাস্টারের ভাগ্নের হাতে শতাধিক সংখ্যালঘু জেলে পরিবার অবরুদ্ধ হওয়ার প্রতিকার চাইতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি ব্যানারে লিখেছিলেন, চট্টগ্রামে নৌকার কান্ডারী ও মাঝিমাল্লা কর্তৃক হামলা মামলা নির্যাতন ও বাপ দাদার ভিটে ভূমি সহায় সম্পত্তি জবরদখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। এমপি ভাগ্নে বন বিভাগের গাছপালা উজাড় করে জাহাজ ভাংগার ইয়ার্ড তৈরী করে সংবাদ শিরোণাম হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারী জমির পর তার লোলুপ দৃষ্টি গিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর জমির ওপর পড়ে। তিনি টাকা নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে দিতে সংখ্যালঘুদের নির্দেশ দেন। কিন্তু হিন্দুরা নিজেদের বাপ দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারগুলোর বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও শ্মশানঘাটে যাওয়ার রাস্তায় মুরগির খামার তৈরী করে এমপির ভাগ্নে। এর প্রতিবাদে সংখ্যালঘু পরিবারগুলো ঢাকা চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে প্রশাসন এ ঘটনায় তদন্ত ও মামলা নেয়ার কথঅ বললে তারা অবরোধ তুলে নেন। মামলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তনন্তর নামে ঝুলে রয়েছে। এরই ফাঁকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কাড়তেই তারা সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলেই এমপি ও পৌর মেয়র বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সংখ্যালঘুদের নামে একের পর এক মামলা দেয়া হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শচীন্দ্রলাল দের নামেও একটি ৫০৬ ধারায় হুমকির মামলা দেয়া হয়েছে। তিনিও ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

যেভাবে সপরিবারে নির্যাতিত হলেন অমরেন্দ্র
নির্যাতনের শিকার অমরেন্দ্র মল্লিক খোড়াতে খোড়াতে আমার অফিসে এসেছিলেন। তার এক হাত ভেংগে গেছে। শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। কাদতেও যেন ভুলে গেছেন তিনি। একটি সভ্য সমাজে কিভবে জনসমাক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা বুঝেও উঠতে পারছেন না। বর্তমানে ঢাকায় গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত আমাকে তার সন্ধান দেন। বলেন, অসুস্থ থাকার কারণে অমরেন্দ্রর পাশে দাড়াতে পারিনি। সংখ্যালঘু নিয়ে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ সরকারও এর পাশে দাড়াবে বলে মনে হয়না। আপনারা সাংবাদিকরা এর জন্য কিছু করুন।

আমি তাকে আমার অফিসে আসতে বলি। কোনক্রমে অফিসে হাজির হয়ে অমরেন্দ্র তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলা মামলা ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করায় কর্মকান্ডে স্থানীয় এমপি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন। গত ৫ মে দুপুর আড়াইটায় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী আমার বাড়িতে যান। তারা গিয়েই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়–য়া পুত্র শিমুল মল্লিককে বেধড়ক মারধর শুরু করে। আমি খবর পেয়ে বাড়ি যাই। আমাকে সামনে পেয়ে আমার ওপরেও চড়াও হয়। আমরা দ্রুত ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা দড়জা লাগানোর সময় দেয়নি। ঘড়ের ভেতর ঢুকে আমাকে ও আমার পুত্রকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে মারধর করতে থাকে। আমাকে পরিবারের সামনেই উলংগ করে ফেলে পেটাতে থাকে। পরে আমাকে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া বেঁধে কিল ঘুষি মারতে মারতে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। আরেকটি গ্র“প ঘরে ভাংচুর ও তল্লাশী চালায়। আমার কন্যার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। পরে প্রকাশ্যে রাস্তায় পেটাতে পেটাতে পৌর ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে আামকে ও শিমুলকে আটক করে। আমার বিবাহিত কন্যা পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে সেখানে উপস্থিত হলে তাকেও পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এসময় পৌর মেয়র কক্ষে ঢুকে গালিগালাজ করতে থাকেন। তিনি চিৎকার দিয়ে বলেন, শুয়ারের বাচ্চা, সংবাদ সম্মেলন করিস। এখন তোর আইন কানুন কই? কথায় কথায় তিনি থাপ্পড় মারতে মারতে নিচে ফেলে দেন। একই সঙ্গে শিমুলকেও মারা হয়। একপর্যায়ে পৌর মেয়র চিৎকার দিয়ে বলেন, চোখ বেধে দুরমুজ দিয়ে এর হাড্ডিগুড্ডি চুড়মার করে দাও। এরপরই আমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেধে লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করে কয়েক কাউন্সিলর। এসময় আমার শরীর অবশ হয়ে পড়ে। আমি তাদের পা ধরে বলি, আমার শরীর অবস হয়ে গেছে। আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। এ অবস্থায় মারধর করলে আমি আর বাচবো না। তারা আমার কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। একজন কাউন্সিলর আমার পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল নিয়ে যায়। এরপর মাটিতে ফেলে আমার বুকের ওপর উঠে তামাশা করেই নাচতে থাকে। পাশের কক্ষে আমার মেয়েকে আটকে রেখে তার বুকে হাত দিয়েছে। অশ্লীল গালিগালাজ করে যা করা হয়েছে তা বাবা হয়ে আমি কিভাবে বলবো? বিকাল চারটা পর্যন্ত আমদের সেখানে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। আমরা নিস্তেজ হয়ে পড়লে আমাদের বেঁধে থানার দিকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় হাজার হাজার মানুষ আমাদের করুন দৃশ্য দেখতে থাকে। আমি বলতে থাকি আপনারা দেখুন, আমাদের ওপর কিভাবে অত্যাচার হচ্ছে। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। হাত পা নাড়াতে পারছিনা। আমাকে আগে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাও। তারা আমাকে উল্টো মারধর করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমার অবস্থা দেখে একজন চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। চিকিৎসক কিছু এক্সরে করতে দেন। আমি বললাম আমাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করেন। তিনি আমাকে হাসপাতালে রাখতে রাখতে পারলেন না। আমাকে ফোন করে ওসি মনিরুল ইসলাম গালিগালাজ করতে থাকেন। বলেন, শুয়োরের বাচ্চা হাসপাতাল থেকে স্বেচ্চায় থানায় চলে আয়। নইলে পেটাতে পেটাতে নিয়ে আসবো। রাতে গিয়ে দেখি একজন এসআই একটি মামলা লিখছেন। আমাদের নামে চুরি ও মারপিটের মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা নাকি আামদের বাড়িতে যেসব লোকজন গেছে তাদের মারধর করেছি। পরের দিন আমাকে ও পুত্রকে আদালতে চালান দেয়া হয়। আমি থানার ওসিকে বলেছিলাম, আমার উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা তো নিজের চোখে দেখেছেন। আমি পুলিশের কর্মকর্তা থাকতে এ ধরনের অনেক মৌখিক এজাহার নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই কর্মকর্তা কোন এজাহার নেননি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভেঅকেট রানাদাস গুপ্ত বলেন, অমরেন্দ্রর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমি তাকে মামলা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি নিজেই পঙ্গু হয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি সাংবাদিকদের সহায়তা চান।

শেষ কথা:
অমরেন্দ্রর কি একটাই অপরাধ তিনি সংখ্যালঘু ? এর আগেও বিএনপি চার দলীয় জোট সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতিত হয়েছিলেন। এটা স্পষ্ট। কিন্তু সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলেই তা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। দুটি দলই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে থাকে। বর্তমান সরকার ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের তদন্ত করতে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। অথচ অন্যদিকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। এটা দেশের জন্য অপমান। কারণ দেশের প্রায় সবাই অসাম্প্রদায়িক। গুটিকয়েকের জন্য দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে দেয়া যায়না।


গত ৫ এপ্রিল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে অমরেন্দ্র মল্লিক ও শচীন্দ্র দে

নির্যাতনের কয়েকদিন পরেও দাগ যায়নি অমরেন্দ্র মল্লিকের শরীর থেকে


নির্যাতনের শিকার অমরেন্দ্রর পুত্র শিমুল মল্লিক


আমার অফিসে বসে নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন অমরেন্দ্র মল্লিক একটি হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

অমরেন্দ্রের সংবাদ সম্মেলন করার সংবাদ
এতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী কর্তৃক চট্রগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাপ দাদার ভিটে মাটি জবর দখল. Click This Link

সাংবাদিকদের জন্য…
যে কোন সাংবাদিক এ লেখা ছাপাতে পারেন। আর অমরেন্দ্রর সঙ্গেো যোগাযোগ করতে পারেন। তার মোবাইল নং-০১৭১২৮৬৮৬৫৬ । তিনি এখন ঢাকাতেই চিকিৎসাধীন। আগামী কাল সাপ্তাহিক বুধবারে ক্ষমতাসীন আোয়ামী লীগের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে।

Source : http://www.somewhereinblog.net/blog/Saemuzzaman/29157626