সাক্ষাতকার: তারা কি দুই সতীন? তারা ভদ্র মহিলা। তাদের দরকার মানসিক পরিবর্তন

কাজী সায়েমুজ্জামান: জরুরী অবস্থায় আপনি দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীর পক্ষে আইনী লড়াই করেছেন। এর এক বছর পর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: দু’বছর গণমাধ্যমে ও আদালতে লড়াই করে এসেছি। আজকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। নির্বাচন হয়েছে সরকার হয়েছে। আমি খুশীই ছিলাম। এখনো আছি। এক বছরে কাউকে বিচার করে আগামী চার বছরে কি করবে তা বলা উচিত না। ভালোই করছে। তবে সরকারের সামনে অনাকাংখিত অনেক সমস্যা এসে গেছে। প্রথমে হলো পিলখানায়। তবে যেভাবে আশা করেছিলাম সরকার সমস্যাগুলো সেভাবে সমাধান করছে না। প্রধানমন্ত্রীর কথা উঠলে বলবো তিনি খুব যোগ্য। তার দলের অনেক খেলোয়ার হয়ত ভালো করছে না। তিনি ভবিষ্যতে তা বুঝে হয়ত দলের সদস্য বদলাতে পারেন। তিনিই ভালো জানেন কে কতটা কাজ করেছে না করেছে। যত সমালোচনাই করি- সব মিলিয়ে বিচার করলে বলবো, আমি সন্তুষ্ট। তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলবো না। আর সেখানে বিরোধী দলেরও তো অবদান থাকার দরকার। তারা সংসদ বয়কট করে রেখেছে। একারণে একতরফা সরকারের সমালোচনা কিভাবে করি ? ভোটাররা তাদের নির্বাচিত করেছে। তারা সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু তারা সংসদে যাচ্ছেন না। এটা উচিত নয়। এগারো জানুয়ারির আগে আরেকটি সরকার ছিল। তখনকার অবস্থার সঙ্গে বর্তমানকে মেলানো কঠিন। তবুও দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগও একই পথে। লুটতরাজ চলছে। এর সব সত্য না হলেও তো কিছু সত্য। আগেরবার কয়েকজন লোক সরকার চালিয়েছিল। ফলে আজ বিএনপির এই অবস্থা। যদিও মানুষের মধ্যে তাদের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির ভোটের ব্যবধান কম। তারা শুধু আসন পায়নি। বিএনপি বলেছিল, বিরোধী দলেই হোক আর সরকারে হোক সংসদ বয়কট করবো না। আরও বলেছিল হরতালও করবো না। সংসদ তো বয়কটই করলো। বাকীটা দেখা যাক।

সায়েম: সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার দুর্নীতি দূর করতে কেন পারেনি বলে আপনার মনে হয়?

রফিক-উল হক: ওই সরকার যখন ক্ষমতা নেয়, আমরা সবাই আশা করেছিলাম তার দুর্নীতি দমন করবে এবং দেশে সুস্থ রাজনীতি ফিরে আসবে। কিন্তু সেটা হয়নি এজন্য যে, তাদের পেছনে ছিল সেনাবাহিনী। তারাই ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত। যৌথ বাহিনীর সব ছোকড়ারা ছিল। সরকার তাদের ও জরুরি অবস্থা দিয়ে দেশ চালাতে চেয়েছিল। একটি এক্সট্রিম কিছু করলে তার ফল কখনোই ভালো হয় না। সব বিষয়ে নরমাল ডেলিভারি ভালো। একটি বাচ্চা হলে ৯ মাসেই হওয়া ভালো, ছয়/সাত মাসে করতে গেলেই সমস্যা হয়ে যায়। তারা শুরুটা ভালো করেছিল। পরে আমরা দেখলাম, যাদের সমর্থনে সরকার পরিচালিত হচ্ছে সেই তথাকথিত সেনাবাহিনী দুর্নীতি দূর করতে গিয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পরেছিল। পরে দেখা গেছে তারা কিভাবে টাকা নিয়েছে। কিভাবে মানুষকে অত্যাচার করেছে। ব্যবসায়ীদেরও অত্যাচার করেছে। সেদিনতো আমাদের অর্থমন্ত্রী বললেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তারা যা ব্যবহার করেছে তা ডাকাতির শামিল। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়েছে কখনও মাইনস টু, কখনও রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দেয়ার জন্য। তারা কিংস পার্টি করবে বলে। এখনও মইনুদ্দীন সাহেব এর পক্ষে অনেক যুক্তি দিয়ে কথা বলেন। ফখরুদ্দীন সাহেবকেতো পাচ্ছি না। বেঁচে আছেন, তবে কোথায় আছেন খোদা জানেন।

সায়েম: ওই সব মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে তাদেও ওপর নানা ধরনের নির্যাতন ও অবিচারের কথা আপনি জানেন। এর পেছনে যারা দায়ী ছিল তাদের শাস্তি হওয়া উচিত কিনা?

রফিক-উল হক: আমি অনেক নির্যাতনের কথা জানি। তাদের বিচারের কথাটাতো আমি সবসময় বলে আসছি। তাদের যে ফাসিতে ঝুলাতে হবে, জেলে পাঠাতে হবে তা নয়। তারা যে নির্যাতন করে অপরাধ করেছে তার একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিত ছিল। তা না হলে ওই রকম আরেক এগারো জানুয়ারি হবে। এখন যদি আমরা ব্যবস্থা না নেই, মামলা দায়ের না করি, জবাব না চাই, তাহলে দু’বছর পর দেখা যাবে আবার ওই রকম একটি সরকার এসে গেছে। কিন্তু যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, মার খেয়েছেন, টাকা দিয়েছেন তারা নাম দিয়ে মামলা করলেই হয়। কিন্তু সেরকম হচ্ছে না। এখনো তারা ভয় পান। নিজের জান বাঁচানো ফরজ। সরকার কিভাবে চলছে ? যে কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে তথ্য দিয়েছিলেন তাকে ওএসডি করা হয়েছে। কয়েকশ’ কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে আছেন। আমার কাছেই মাঝে মাঝে মনে হয় খারাপ অবস্থা। অন্যরা ভাবছে কি জানি, কি করতে কি হয়। তার চেয়ে চুপ করে থাকি। কিছু না করাই ভালো। ওই সময় শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এই সেনাবাহিনীও শেখ হাসিনাকে কত নির্যাতন করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্যা দিতে অনিচ্ছুক হওয়ায় দায়ের করা হয়েছে। স্যা না দিলেই যত অত্যাচার ভোগ করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার কি উচিত ছিল না যারা নির্যাতন করেছে তাদের বিচার করা? অথবা নুন্যতম জিজ্ঞাসা করা যে কেন তোমরা এটা করেছ? সেদিক থেকে সরকার খুব একটা পদপে নিচ্ছে না। ফলে হচ্ছে কি? অন্যরা ভাবছে আবার একটা এক এগারো এসে গেলে কেউ কিছু বলবে না।

সায়েম: বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মামলা করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকীর সম্মুখিন হয়েছিলেন কিনা?

রফিক-উল হক: এটা পরিস্কার যে ওই সময় সেনাবাহিনী বা কোন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারের কেউ কোন রকম হুমকী দেননি। তারা কোন মামলা না নেয়ারও অনুরোধ করেননি। অন্যদিকে বলতে গেলে ডিজিডিএফআই আমাকে নিয়মিত আম পাঠিয়েছে। উপহার পাঠিয়েছে। লোকে হেসে বলেছে, আপনাকে ঘুষ দিয়েছে। এখন কথা বলা সোজা। সেদিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বলা এত সহজ ছিল না। সামান্য ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে বললেওতো ভয় ছিল। একবার তারা আমার মসজিদ ও হাসপাতাল ভাংগতে যায়। মসজিদ ভেংগে ফেলে। আমি মামলা করে একজন ক্যাপ্টেনকে আদালতে এনেছিলাম। তাতেই মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তিনি আমার ছেলেকে দুপুরের খাবার খাইয়ে বলেছিলেন, তোমার বাবা যা করেছে ভালো করেনি। তাকে তার ফল ভোগ করতে হবে। ভয় বলতে ওই টুকুই বলতে পারেন। আমি তাদের ফের আদালতে এনে মাফ চাইয়েছি। পরে তারা বুঝেছে এত সোজা নয়। দেশে আইন বলতে একটা কিছু রয়েছে।

সায়েম: আপনি প্রায়ই বলেন, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক ও অবৈধ ছিল। কি কি কারণে তারা অবৈধ ছিল?

রফিক-উল হক: এখন সবকিছু প্রকাশ হচ্ছে। এতে দেখছি এগারো জানুয়ারীর সরকার নিজেই একটি অবৈধ সরকার ছিল। ফখরুদ্দীন একজন উপদেষ্টাই হতে পারেন না। কারন তিনি মার্কিন নাগরিক। বিদেশী নাগরিকত্ব থাকলেতো কেউ সংসদেরই সদস্য হতে পারবেন না। সংসদ সদস্যের যোগ্যতা না থাকলে উপদেষ্টা হওয়া যায়না। তিনিই শুধু নন। তার উপদেষ্টাদের মধ্যে আরও কয়েকজন বিদেশী নাগরিক ছিলেন। তারা শুরুটা ভালো করেছিল। আমরা সবসময় চেয়েছি নির্বাচন হোক। গণতন্ত্র ফিরে আসুক। তারা নির্বাচন দেবো দেবো করে যত রকমের সংস্কার করার চেষ্টা করেছে। যা তাদের মতাবহির্ভূত ছিল। তারা শিতি লোক। আইন উপদেষ্টা ছিলেন। আইন সচিব ছিল। তারা বলতে পারতেন যে আমাদের এটা করার ক্ষমতা নেই। তারাও এজন্য দায়ী।

সায়েম: ভবিষ্যতে আরেকটা এগারো জানুয়ারী এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর পরষ্পরের এবং জনগনের প্রতি তাদের আচরণ কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

রফিক-উল হক: ভবিষ্যতে এরকম এগারো জানুয়ারি এড়াতে গেলে দুই বড় দলসহ অন্যান্য দল মিলে এক সঙ্গে দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। কারণ তারা একটা সুযোগ পেলে সেই সুযোগ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। গতবারের অজুহাত ছিল দুর্নীতি। দেখা যাবে এবার খাদ্যের দাম বেড়ে গেল। তারা মতা নিয়ে বলবে লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে ৫ম সংশোধনী বাতিলের রায় থাকতে কারো সামরিক আইন জারী করার সাহস হবে না। আমরা দুর্বল হয়ে গেলে এ সাহস আবার হবে।

সায়েম: দুটি দল সম্মেলন করেছে। এ সম্মেলন কতটা গণতান্ত্রিক হয়েছে? এটি গনতন্ত্রায়নে কোন ভূমিকা রাখবে বলে কি আপনার মনে হয়?

রফিক-উল হক: তাদের মানসিক পরিবর্তন না আসলে হবে না। এসব কাউন্সিল গণতন্ত্রায়নে ভূমিকা রাখা উচিত। রাখছে না যে তা নয়। না হলে তারাই বেশি তিগ্রস্ত হবে। দুনিয়ার নিয়ম হচ্ছে- নো বডি টেকস লেসন ফ্রম দ্যা হিস্ট্রি। দিস ইজ দ্যা আনফরচুনেট পার্ট অব হিস্ট্রি। এখন সবাই নেতিবাচক ভোটের চিন্তা করেছে। বিরোধিরা ভাবছে আওয়ামী লীগ অজনপ্রিয় হবে। আমি অটোমেটিক ভোট পাবো। এভাবে নেতিবাচক ভোটের চিন্তা করা উচিত নয়। বিরোধি দল হলেই যে সব জিনিসে বিরোধিতা করতে হবে এটা উচিত নয়। সরকারে থাকলেও যা ইচ্ছা তাই করবে তাও উচিত নয়। কিছু বিচার করা উচিত। বিএনপির কাউন্সিলের আগে যেভাবে দেশব্যাপী মারামারি-কাটাকাটি দেখছিলাম তাতে ভেবেছিলাম কাউন্সিলে আগুন জ্বলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। সবদিক বিচার করলে কাউন্সিল সফল হয়েছে। এর ফলে তাদের বোঝা উচিত ছিল যে, ঠিক আছে- মানুষ যখন আমাদের বিশ্বাস করে আমরা সেভাবে চলি।

সায়েম: নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া কি সঠিক হয়েছে?

রফিক-উল হক: নেতারাতো বলছেন এবারের কাউন্সিল হয়েছে আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। এবারের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আগের আইনে এটা ছিল না। বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর কাউন্সিল করতে হবে। তখন দেখা যাবে তারা কি করেন?

সায়েম: দুই নেত্রীর আইনী পরামর্শক হিসেবে দুজনের প্রতি আপনার প্রতি কোন পরামর্শ রয়েছে কি?

রফিক-উল হক: দু’জনের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে তারা মিলেমিশে কাজ করবেন। একে অপরের প্রতি বৈরীভাব ত্যাগ করবেন। একে অপরকে কিভাবে সাহায্য করা যায়তা দেখবেন। কটুক্তি পরিত্যাগ করে যা বলতে চান ভালোভাবে বলেন। একে অপরকে সম্মান দেখাবেন। এককথায় তাদের মানসিক পরিবর্তন দরকার। মুখে গণতন্ত্র বললে হয় না। জানে প্রাণে আপনাকে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতে হবে। তরপর আস্তে আস্তে সেটাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সায়েম: তৃতীয় কোন পক্ষ না আসার আগে ওনারা ঐক্যমত হন না কেন?

রফিক-উল হক: আমিতো এটাই বলছি, তারা কি দুই সতীন? তারা দুজন ভদ্র মহিলা। একে অপরকে তারা অনুসরণ করতে পারেন। উনি বললেন, আপনি ভারত থেকে সব নিয়ে আসলে ফুলের মালা দেবো। না নিয়ে আসলে কাটা দেবো। এসব না বলে ফোন করে বলতে পারতেন, ভারত যাচ্ছেন, দেশের স্বার্থকে রা করবেন আগে। কি তি ছিল একথা ফোন করে বলতে। প্রধানমন্ত্রীও তো ফোন করে বলতে পারতেন, আমি যাচ্ছি। আপনার মত কি বলেন? কোনটায় আপনার রিজার্ভেশন রয়েছে। সেগুলো আমি দেখবো। আমি ঠাট্টা করে বলি, যদি কেউ একজন বলে, আমি বেহেশতে দুটো প্লট পেয়েছি একটা প্লট আপনাকে দেবো। তারপরও আরেকজন বলবে না না না। বেহেশতের প্লট ও দরকার নেই। দেলোয়ার বলবেন, খবরদার ওতে নিশ্চয়ই গোলমাল আছে।

সায়েম: বিএনপি সংসদে যাচ্ছেনা । আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কোন আন্তরিক উদ্যোগ নেই। আপনার কি মনে হয়?

রফিক-উল হক: কোন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ বর্জন গণতন্ত্রের জন্য শুভ উদ্যোগ বলে আমার মনে হয় না। আশা করি তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা সংসদে যোগ দেবে। সবাই মিলে চেষ্টা করবে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য। গণতন্ত্র একতরফা হয় না। গণতন্ত্রের সরকার ও বিরোধী দুটি পক্ষই দরকার। সংসদ একটি সুপ্রীম হাউজ। সেখানে বিতর্ক হওয়া দরকার। সংসদের বৈঠক এখন একতরফা হয়ে গেছে। একারণে ল্ক্ষ্য করেছি সংসদের কোন সৌন্দর্য্য নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো বিদেশে কোন সংসদীয় প্রতিনিধি দল গেলে সরকারি বিরোধি দলের সবাই যাচ্ছেন। সুবিধাগুলো সকলই নিচ্ছেন। আর সংসদে যাওয়ার কথা বললে নানারকম অজুহাত। এখন মওদুদ সাহেব এসেছেন। বলছেন সেই রকম বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, পরিস্থিতি সরকার সৃষ্টি করতে পারছে না। তারা আমাদের অপমান করে। এজন্য সেখানে যাওয়া উচিত নয়। আমার কথা হলো যে অপমান করবে সে অপমানিত হবে। তোমাকে বসতে না দিক মাটিতে বসে কথা বলো। সংসদে গিয়ে তারা এ কথাই বলুক। বাইরে থেকে বললে কি লাভ? সংসদে বসে বললে মানুষ টেলিভিশনে বসে সরাসরি দেখতে পায়। তারপর তা কাগজেও ছাপা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা বলতে পারবে। আপনারা করেননি বলে দেশের আজ এ অবস্থা। আমার মনে হয় যারা নির্বাচিত হতে পারেনি তারাই ইন্ধন যোগাচ্ছে যে সংসদে যাবেন না। তা না হলে নির্বাচিত হয়ে সংসদে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকা উচিত নয়।

সায়েম: এ্যাটর্নী জেনারেলের অফিসের পারফরমেন্স কেমন বলে মনে হয় ?

রফিক-উল হক: বিনা দ্বিধায় বলা যায় খুবই খারাপ। এরকম নিকৃষ্ট এ্যাটর্নী জেনারেল বা এ্যাটর্নী জেনারেল গ্রুপ আমি কখনো দেখিনি। আমার মনে হয় এ্যাটর্নী জেনারেল এবং তার দল যেকোন গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে চেয়ে খারাপ আইন কর্মকর্তা। তারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। তারা ১১ জানুয়ারি সময়কালের মতো পারসিকিউটেড বা রাজনৈতিক কারণে হয়রানীর মাধ্যমে নির্যাতনকারী। তারা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে। আইনমন্ত্রী ভদ্রলোক। তার উচিত আইন কর্মকর্তাদের বলা- এটা সরকারের নীতি এটা নয়। এ্যাটর্নী জেনারেল নিজের দলের লোকই হতে হয়। তবে এখন খুব বেশি রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। ওরা পরবর্তীতে যাতে বিচারক হতে পারে এজন্য এসব করছেন। হয়ত তারাই বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হবেন। এটা বিচার বিভাগের জন্য খুব খারাপ। বিচার বিভাগ অবশ্যই স্বাধীন, যোগ্য, স্বচ্ছ এবং নির্দলীয় হতে হয়। দলের নাম করে আমরা বলতে পারি আদালতবা বিচারকের নাম। যেমন কাউকে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় গেলেন? তিনি দলের নাম বললেন, আর বুঝতে বাকী থাকেনা ওই আদালত ও বিচারকের নাম কি। তবে কিছু বিচারক আছেন যারা সত্যিকার অর্থে সাহসী। তারা ভয় ছাড়াই রায় দিয়ে থাকেন। এদের সংখ্যা কম।

সায়েম: এ্যাটর্নী জেনারেলের সঙ্গে আপনার বিরোধটা কোথায়?

রফিক-উল হক: কিছুদিন আগে মন্ত্রীসভা সিদ্ধান্ত হলো কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা হলে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু হবে না। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি সামান্য ব্যাপারে পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে। আর সেটাকে সহায়তা করার জন্য এ্যাটর্নী জেনারেলের পুরো অফিস গত দু’সপ্তাহ ধরে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আর তারা গ্রেফতারের পক্ষে। অথচ সরকারের নীতি হলো কোন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হবে না। জয় জয় জয় সাত বার বলে জয়ের পে লড়াই করছে। অথচ জয়তো কোন মামলা দায়ের করেনি। ড. তৌফিক-ই-এলাহীওতো মানহানীর মামলা করেনি। এ্যাটর্নী জেনারেল অভদ্রভাবে আদালতকে ভয় দেখান। তারা দলবল নিয়ে গিয়ে আদালতে হৈ হুল্লোড় ও গালাগালি শুরু করে। ভদ্রলোক বিচারকরা কি আর করবেন? বিচারকদেরও অভদ্র হতে হবে। আজও যেভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে বলেছেন। তাতে বয়স থাকলে আদালত অবমাননার মামলা করে দিতাম। সেসব করার বয়স আর সময়ও নেই।

সায়েম: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদালতকে আপনি ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলেছেন। এখনকার আদালতের অবস্থা কি?

রফিক-উল হক: এখনকার আদালতকে আমি ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলবো না। নিুআদালত স্বাধীন হয়েছে। এখন স্বাধীন আপনাকে করলাম। আপনি যদি তা ভোগ করতে না পারেন তাহলে সে স্বাধীনতা থেকে কি লাভ? তাদের কাছে রিমান্ড চাইলে সঙ্গে সঙ্গে রিমান্ড দিয়ে দেন। জামিন চাইলে সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখান করছেন। একবার বিবেচনাও করছে না যে তাদের সরিয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই। তারা স্বাধীন। ঠিক আগের মতোই চলছে। দু’একজন ব্যতিক্রম বিচারক রয়েছেন তবে তারা সংখ্যায় খুব কম। কম বেশি তারা আগের মতোই আচরণ করছে।
সায়েম: বিচারক পদে রাজনৈতিক নিয়োগের ফলে বিচার বিভাগের েেত্র কি ধরনের সমস্যা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

রফিক-উল হক: দলীয় ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ করলে সেখানে সত্যিকারের বিচার পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যোগ্যতা নয় দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলে নিয়ুক্তকে তো ওই দলকে সমর্থন করে রায় দিতে হয়। যারা বিচারক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের দুবছর পর কনফার্ম করতে হবে। এখন কোন দল কাউকে নিয়োগ দিলে সে কি তার বিরোধিতা করার সামর্থ্য রাখে? একজন বিচারককে দেখলাম বিচারক হওয়ার পর দল আর করেননি। এ কারণে তাকে কনফার্মও করা হয়নি। ওদিকে দল করতে গিয়ে প্রাকটিসও হয়নি। এখন না খেয়ে মরছে। সুযোগ্য লোকদের নিয়োগ না দিলে তাদেরই ক্ষতি করা হয়।

সায়েম: মহাজোট সরকারের একবছর শেষ হয়েছে। এ সরকারকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রফিক-উল হক: খারাপ বলবোনা। ভালোমন্দো মিলিয়ে গেছে। যেভাবে সরকার চালাচ্ছে যদি প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে বলি তিনি শতভাগ সফল। তার দলের সদস্যরা কেউ ফাউল করছে কেউ বল বাইরে পাঠাচ্ছে। দু’একজন ছাড়া কেউ গোল করতে পারছে না। খেলার মাঝে খেলোয়ার বদলায়। প্রধানমন্ত্রীও হয়ত বদলাবেন। আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য উচিত হবে – সকল সেক্টর থেকে লোকজন ডেকে তাদের সঙ্গে মাসে একবার করে হলেও বৈঠক করা। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, আপনারা বলেন- কোথায় আমার ভুল বা সফলতা রয়েছে। আলোচনা করলে ক্ষতি কি। আমার শেষ কথা সবারই আচরণে পরিবর্তন আনা দরকার।

সায়েম: আপনাকে ধন্যবাদ।

Writer : সায়েমুজজ্জামান

মানবাধিকার ও সংবাদকর্মী।

মত প্রকাশে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করিনা