বেসরকারি স্কুল ও কেজিতে ছাত্র নিয়ে কাড়াকাড়ি

শাহীন হাসান, বরিশাল ॥ নূতন বছর ও নূতন ক্লাস শুরু হতে না হতেই নগরী ও শহরতলীর কতিপয় মাধ্যমিক ও কিন্ডারগার্টেনের কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা নানা প্রলোভনের দ্বারা ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। মানসম্মত স্কুল যাচাইয়ের ব্যাপারে হিমশিম খাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবক মহল। জানা গেছে, ঘন ঘন স্কুল গড়ে ওঠার ফলে নগরী ও শহর তলীর কতিপয় স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। এ মধ্যে হাইস্কুলগুলো অন্যতম। স্কুলগুলোর শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের নানা ছলেবলে, কৌশলে, বুঝিয়ে, শুনিয়ে তাদের স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তির জন্য অনুরোধ করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিনা বেতনে পড়ার অনুমতি, সেই সাথে বিনা বেতনে স্কুলেই কোচিং এর সু ব্যবস্থা, কম্পিউটার শিক্ষা সহ ইভটেজিং প্রতিরোধেরও নিশ্চয়তা দিয়ে থাকেন। এক এক দিন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ একই বাড়িতে লবিং এর জন্য যেয়ে থাকেন। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন অভিভাবকবৃন্দ। নিরুপায় হয়ে অভিভাবকরা চাতুরতার মাধ্যমে লবিং-এ আসা ব্যক্তিবর্গকে শুভ আশার বানী শুনিয়ে বিদায় দেন। এখনও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না তাদের ছেলেমেয়েদের কোথায় ভর্তি করবেন?

এদিকে অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, নূতন বছরের শুরু হতে এখনো বাকি। পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে যেসব স্কুলের এসএসসি কিংবা জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হবে সেই সব স্কুলেই তারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ভর্তি করবে শতভাগ আশাবাদী। তারা তাদের মেয়েদের স্কুলে গমন ও আগমনকালে পথেঘাটে ইভটিজিং বিষয়টিকেও মাথায় রেখে স্কুল নির্বাচন করবেন। এদিকে কিন্ডারগার্টেন মালিকসহ শিক্ষক শিক্ষিকারাও বসে নেই। ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে তারা। ইতিমধ্যে নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থান সয়লাব হয়ে গেছে ভর্তি সম্পর্কিত রং বেরংয়ের পোস্টার ও ব্যানারে। কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ দিন ক্ষণ হিসাব না করে ছুটে যান অভিভাবকদের দুয়ারে দুয়ারে। ছাত্র-ছাত্রীর মা-বাবাকে যথাসাধ্য ভাবে বুঝিয়ে আয়ত্তে আনতে পারলেই হলো। এ ব্যাপারে তারা মায়েদের বেশি বুঝিয়ে থাকেন। কারণ মায়েরা বেশি বেশি কিন্ডারগার্টেনের ভক্ত। ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহে নগরীর কিন্ডারগার্টেনগুলোর তুলনায় শহরতলীর স্কুলগুলোর ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। কিন্ডারগার্টেন সূত্রে জানা গেছে, নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন, যার ফলে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। এছাড়া প্রাইমারী স্কুলগুলোতে বিনা বেতনে পড়াসহ প্রতিমাসে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছে সরকার। যার কারণে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। যার কারণে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা নানা কলাকৌলন অবলম্বন করে তাদের স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে মাঠে নেমে পড়েছে। কখনো কখনো তারা যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা, বই-পুস্তকের দাম কম, নাচ, গান, কম্পিউটার, খেলাধুলা, পিকনিক, শিক্ষা সফর প্রভৃতি বিষয়াদির উপর অভিভাবকদেরকে যথাযথভাবে জ্ঞান দিয়ে থাকেন। আর অভিভাবকরা ওই সব ছলা কলায় পড়ে সঠিক স্কুল নির্বাচন না করে ভর্তি করান শুধুমাত্র সাইনবোর্ড সর্বস্ব কোন কিন্ডারকার্টেনে।

কিন্ডারগার্টেনগুলোর দেয়া নীতিমালার মধ্যে একাধিক কথা লেখা থাকলেও ভর্তির পর অভিভাবকরা দেখেন ভিন্নরূপ। সেখানে বইয়ের দাম লাইব্রেরীর দামের দ্বিগুণ। এমনকি খাতাপত্রের দামও চড়া। সেই সাথে শিক্ষার গুণগত মানও মানসম্মত নয়। সবকিছু মিলে বাচ্চা ভর্তির পর তারা পড়ে যান বিপাকে। না পারেন বাচ্চা অন্য স্কুলে নিতে; না পারেন পড়ালেখা বন্ধ করতে।