শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় – সাগর পাড়ে গণিত বিভাগ

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, শাবিঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার ঘুরে এলো সাগর সৈকত থেকে। এক আনন্দ ও সুখকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো সবার। দীর্ঘ চার বছরের অনার্স শেষে যখন সুযোগ এলো ভ্রমণের, প্রকৃতির মুক্ত হওয়ার তখন কারোরই যেন মনে এতোটুকু আনন্দের কমতি ছিল না। মুক্ত বাতাস যদি সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা সমুদ্রের নীল জলরাশির বুকে হয় তাহলেতো সে আনন্দের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিবারের মত এবারও শাবিপ্রবি’র গণিত বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা শত ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সবুজ আর নীলের সাথে মিতালী গড়ার লক্ষে হারিয়ে গিয়েছিল এমনই দেশের প্রকৃতির মায়াবী অপরূপের সন্ধানে। বিভাগের স্বনামধন্য দুইজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক তরুণ কুমার শীল ও সহকার অধ্যাক মো. শাহনূর এর তত্ত্বাবধায়নে ৩৬ জন শিক্ষার্থী হারিয়ে গিয়েছিল রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ছেঁড়াদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে। চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন ট্রেনের ছোট্ট একটি কামরায় যাবার দিন তাই চোখে ফুটে উঠেছিল আনন্দময় রঙ্গিন রেখা য ক্ষণিকের অপেক্ষাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯ টায় ট্রেন যখন ধীরে ধীরে চলতে থাকে তখনই সবাই হই-হুল্লুড়ে মেতে ওঠে। যেন শুরু হয়েগেল সেই আনন্দময়, স্মৃতিময় মহাকাব্যের প্রতিটি চরণের একেকটি অক্ষর শেষে একেকটি শব্দ। কামড়ার এক কোনে যখন ফয়ছল, রাফি, সুব্রত সিংহ, এজাজুল, পুষ্প, উর্মি জড়ো হয়ে ট্রেনের শ্র“তিকটু শব্দের সাথে অসাধারণ তাল মিলিয়ে কোরাস কন্ঠে একেক করে বাংলা গুণীশিল্পীদের ছাড়িয়ে যাচ্ছিল তখনই আরেক কোনে সারোয়ার, হাসান, জুয়েল, মিনাহজ তাস খেলা আর জম্মেশ আড্ডাটা জমিয়ে দিল। ভোরে চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর স্টেশনের পাশের হোটেল থেকে নাস্তা শেষে ছোট্ট বাসে করে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা। ক্লান্ত দুপুরে সূর্যটা যখন ঠিক মাথার উপরে তখনই পৌঁছে সেই আঁকা-বাকা, উচুঁ নিচু সড়কের শহর রাঙামাটিতে। দুপুরের খাবার শেষে একটি বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন শেষে রাত্রি যাপন করা হয় একটি হোটেলে। পরদিন পুব আকাশটাকে বিদীর্ণ করে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই কাপ্তাই লেকের বুক চিড়ে ট্রলারে করে যাত্রা শুভলং ঝর্ণার শীতল জলের স্পর্শের আশায়। ঝর্ণায় ভয়হীন দুঃসাহসী আনন্দের প্রতিযোগিতা দেখে শিক্ষকরা কিছুক্ষণ চিৎকার করে থামানোর চেষ্টা। অবশেষে তরুণ তরুণীর বাধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই শিশুদের মত উল্লাসে মেতে ওঠে। কতক্ষণ ফটোশেসন শেষে ঝুলন্ত ব্রীজ পরিদর্শন করে রওনা বান্দরবান এর পথে। সূর্য যখন পশ্চিমে প্রায় ডুবো-ডুবো তখন শহরের অদূরে বালাঘাটায় অবস্থিত বৌদ্ধদের তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দিরের বেদিতে।

একঝাঁক জ্ঞানসন্ধিৎসুরা নীলগিড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য নেমে পড়ে। চোখে সেই মেঘ ও পাহাড়ের মিতালী গড়া নীলগিড়ী জয়ের অপেক্ষা পেছনে ক্যাম্পাসের প্রিয়জনদের কথা মনে পড়ে সবার। বঙ্গোপসাগরের তীরে বাংলাদেশের তথা পৃথিবীর অন্যতম মনোরম ও দীর্ঘসমুদ্র তীর স্থান ক্যাপ্টেন কক্সের স্মৃতি বিজরিত কক্সবাজারে। সেখানে রাত্রি যাপন শেষে পরদিন ভোরে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিদর্শনের যাত্রা শুরু। কক্সবাজার থেকে প্রথমে টেকনাফ তারপর উপকুল থেকে জাহাজে করে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১২ কিলোমিটারের নারিকেল জিঞ্জিরা নামে খ্যাত এ দ্বীপটিতে। সাড়ি সাড়ি নারিকেল গাছ কেয়া বন, কাটা যুক্ত গুল্মের  ঝোঁপে ভরা এই দ্বীপটিতে। চারিদেকে সমুদ্র সৈকত দ্বারা পরিবেষ্টিত রাশি রাশি পাথর আর শৈল জমে তৈরি হয়েছে এই প্রবাল দ্বীপটি। সারাদিন সমুদ্রের ঢেউ আর সমুদ্রের নীলের সাথে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা সবার। সৈকতে উল্লাসে মেতে থাকতে দেখে সমুদ্রে জোয়াড় যেন আরো প্রবল হল। একের পর এক সুবিশাল ঢেউ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যেন মিতালি করতে যেন কোন কমতি রাখলনা। মুনিরা সুলতানা হ্যাপির অসুস্থতা সবার উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়। না, অবশেষে সেও সুস্থ। সবার সাথে পরদিন ছেঁড়াদ্বীপে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার রওনা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। সমুদ্রের গর্জন আর একের পর এক সমুদ্রের সুবিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়তে দেখে সবারই কিছুটা হলেও আবেগপ্রবণ হয়ে যায়।

দীর্ঘ সাত দিনের আনন্দময় ভ্রমণে সাফল্যের ষোল কলা পূর্ণ করার তৃপ্তি নিয়ে ৩০ নভেম্বর সকালে সিলেট ফেরা। সাথে করে নিয়ে আসা হলো সমুদ্রের সেই গর্জন আর নীল জলরাশির ঢেউ যা শিক্ষার্থীদের আজীবন দুটি কান ও চোখকে ব্যস্ত রাখবে। বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল খান তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘ সাত দিনের প্রতিটি মূহুর্তে খণ্ড খণ্ড কিছু স্মৃতি ক্যামেরায় বন্দি করে রেখেছি আর বাকি টুকু হৃদয়ে। এম আর জুয়েলের মতে, দীর্ঘ চার বছরের শিক্ষাজীবনে বন্ধুত্বের প্রতিটি মুহুর্ত যতটানা দৃঢ় ও উজ্জ্বল সাত দিনের সুখ স্মৃতি সবশেষে তা নীল সমুদ্রের বিশালতা নিয়ে আরও গাঢ় হবে। স্মৃতির ডায়রিতে নিয়ে আসা হল নতুন জীবনের নতুন এক মহাকাব্য। আগামীদিনে এসব সুখকর স্মৃতি মনে করিয়ে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করবে এমন ভাবনা সবার।