ডানা মেললো বাংলার দোয়েল

মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনঃ কম্পিউটার হল একটি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ  করতে, গাণিতিক কাজ সম্পাদন করতে এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কম্পিউটার বলতে আমরা সাধারনত ডেস্কটপ কম্পিউটারকেই বুঝি। আর ল্যাপটপ কম্পিউটার হল কম্পিউটারের বহনযোগ্য সংস্করণ। এদের প্রধান পার্থক্য আকার বা সাইজে। ল্যাপটপ কম্পিউটারে কিছু মৌলিক উপাদন ব্যবহার করা হয় এবং উপাদানগুলো দুটো প্রধান অংশে বিভক্ত স্ক্রীন এবং কী-বোর্ড। বহনযোগ্যতার কারণে বর্তমানে ল্যাপটপ কম্পিউটার-ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বর্তমান সরকার বাংলাদেশে ল্যাপটপ এসেম্বল করার উদ্যোগ নিয়েছেন যা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। গত ১১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিতরণ ও বাজারজাতকরণ কার্যক্রম এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো দেশে এসেম্বলকৃত বহুল প্রতীক্ষিত এই সাশ্রয়ী ল্যাপটপ “দোয়েল”-এর। ল্যাপটপটির ব্র্যান্ড নাম দেয়া হয়েছে আমাদের জাতীয় পাখি “দোয়েল”-এর নামে।

১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টেলিফোন শিল্প সংস্থায় (টেশিস) একসময় শুধু টেলিফোন সেট উৎপাদন করা হতো। তবে এ কাজের ক্ষেত্র কমে আসায় টেশিসের মাধ্যমে নতুন সব উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। তারই একটি ল্যাপটপ এসেম্বল প্রকল্প। টেশিসের নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাপটপ এসেম্বল করার জন্য প্রাথমিকভাবে ১৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে এ সংক্রান্ত  কাজ চলে আসছে। গত ০৮ জুলাই টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেডের (টেশিস) গাজীপুর কারখানায় দোয়েলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শ ও সহযোগিতায় মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান 'থিম ফিল্ম ট্রান্সমিশন' (টিএফটি) এবং কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে টেশিস। এর নকশা, গবেষণা এবং উন্নয়নের কাজ করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান 'গণনা টেকনোলজিস'। দোয়েল ল্যাপটপের কনটেন্ট প্রস্তুতকরণ, অপারেটিং সিস্টেম অনুবাদকরণ থেকে শুরু করে এর সব পরিকল্পনার কাজও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কমপ্লিট নক ডাউনের (A common form of knock-down is a complete knock-down (CKD), which is a complete kit needed to assemble a product. It is also a method of supplying parts to a market, particularly in shipping to foreign nations, and serves as a way of counting or pricing. CKD is a common practice within the automotive industry, the bus and heavy truck industry, and the rail vehicle industry, as well as electronics, furniture, and in other products. Businesses sell knocked down kits to their foreign affiliates or licensees for various reasons, including to avoid import taxes, to receive tax preferences for providing local manufacturing jobs, or even to be considered as a bidder at all (for example, in public transit projects with "buy national" rules) মাধ্যমে ল্যাপটপ এসেম্বল করা খুবই সাদামাটা ধরণের একটি কাজ। কিন্তু এই সহজ কাজটিই আমরা এতদিন করতে পারিনি; কিংবা করতে চাইনি। পুরো পৃথিবীতে কমপিউটার যন্ত্রাংশের মূল্য বর্তমানে এমন সস্তা হয়ে গিয়েছে যে, সেগুলো এনে এখানে জোড়া দিয়ে বাজারজাত করাটা তেমন জটিল কিছু নয়। বর্তমানে টেসিস কারখানায় প্রতিদিন এসেম্বল করা হচ্ছে প্রায় ৩৫০টি ল্যাপটপ। সে হিসাবে এখন প্রতি মাসে কম-বেশী ১০ হাজার ল্যাপটপ এসেম্বল করা সম্ভব হবে। এখনো পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন শুরু হয়নি। মালয়েশিয়ান টিএফটি কোম্পানির কর্মকর্তারা এ কাজে এখনো সহায়তা করছেন। এ সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশিরা দক্ষ হয়ে উঠলে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক ল্যাপটপ এসেম্বল করা সম্ভব হবে এবং পরবর্তিতে বিদেশি কোম্পানির সহায়তাও প্রয়োজন হবে না।

এর খুচরা যন্ত্রাংশ মালয়েশিয়া এবং চীন থেকে আনা হয়েছে। সরকারি মুঠোফোন কোম্পানি টেলিটকের বিভিন্ন সেন্টারে দোয়েলের বিপণন-কার্যক্রম চালানো হতে পারে বলে শুনা যাচ্ছে। তবে, প্রাথমিকভাবে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হবে এবং পরে সর্বসাধারনের জন্য বাজারে ছাড়া হবে। এই ল্যাপটপ বাজারে এলে বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে তাদের তৈরী ল্যাপটপের দাম কমাতে বাধ্য হবে।  ‘দোয়েল’ ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের দাম পড়বে মডেলভেদে ১০ থেকে ২৬ হাজার টাকা।

সকল গ্রাহকের চাহিদা এক ও অভিন্ন নয়, একেকজন ল্যাপটপে একেক ধরনের কাজ করে থাকেন। টেশিসের ওয়েবসাইটে (http://www.tss.com.bd) দেয়া তথ্যানুযায়ী চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মোট পাঁচটি ভিন্ন মডেলে “দোয়েল” ল্যাপটপ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আর কনফিগারেশনের ওপর ভিত্তি করে মডেলগুলোর দামেও পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। মডেলগুলো হলো “প্রাইমারী মডেল-২১০২”, “বেসিক মডেল-০৭০৩”, “স্ট্যান্ডার্ড মডেল-২৬০৩”, “অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-১” এবং “নিউ অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-২”।

দোয়েল “প্রাইমারী মডেল-২১০২” ল্যাপটপে ভিআইএ (৮০০ মেগাহার্টজ) প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এটি উইন্ডোস সিই ৬.০/গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের। অন্য চারটি উইন্ডোস/লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের। দোয়েল “বেসিক মডেল-০৭০৩” ও “স্ট্যান্ডার্ড মডেল-২৬০৩” ল্যাপটপে ইনটেল অ্যাটম প্রসেসর (যথাক্রমে ১.৬৬ গিগাহার্টজ ও ১.৮ গিগাহার্টজ) ব্যবহার করা হয়েছে। দোয়েল “অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-১” ল্যাপটপে ইনটেল পেন্টিয়াম প্রসেসর (২.১৩ গিগাহার্টজ) এবং “নিউ অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-২” ল্যাপটপে ইনটেল কোর আই থ্রি প্রসেসর (৩ এম ক্যাশসহ ২.১০ গিগাহার্টজ) ব্যবহার করা হয়েছে।
দোয়েল “প্রাইমারী মডেল-২১০২” মডেলটিতে রয়েছে ১০ ইঞ্চি এলসিডি প্যানেল, ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম, ১৬ গিগাবাইট নান্ড ফ্ল্যাস ডিস্ক ড্রাইভ, ০.৩ মেগা পিক্সজেল ইন্টিগ্রেটেড ওয়েবক্যাম, ওয়াইফাই সংযোগ সুবিধা, ইথারনেট লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং সমর্থন, ২টি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, এসডি স্লট, পাওয়ার ব্যাকআপ টাইম দুই ঘন্টা এবং অপারেটিং সিস্টেস হিসেবে থাকছে গুগল অ্যানড্রয়েড।

দোয়েল “বেসিক মডেল-০৭০৩” মডেলে রয়েছে ১০.১ ইঞ্চি ডাব্লিউএক্সজিএ এলইডি ব্যাকলিট, ইনটেল এনএম ১০ চিপসেট, ইনটেল জিএমএ ৩১৫০ ইন্ট্রিগেটেড গ্রাফিক্স, ১ গিগাবাইটের ডিডিআর থ্রি র‌্যাম, ২৫০ গিগাবাইট সাটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ১.৩ মেগা পিক্সজেল ইন্টিগ্রেটে ওয়েবক্যাম, ওয়াইফাই, ইথারনেট লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং সমর্থন,  ইউএসবি ২.০ পোর্ট, এসডি স্লট ফোর-ইন-ওয়ান, থ্রি-সেল ব্যাটারী এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে থাকছে ওপেনসোর্স লিনাক্স।
দোয়েল “স্ট্যান্ডার্ড মডেল-২৬০৩” মডেলে ১২.১ ইঞ্চি ডাব্লিউএক্সজিএ এলইডি ব্যাকলিট, ইনটেল অ্যাটম প্রসেসর, ইনটেল এনএম ১০ চিপসেট, ইন্টেল জিএমএ ৩১৫০ ইন্ট্রিগ্রেটেড গ্রাফিক্স, ২ গিগাবাইটের ডিডিআর থ্রি র‌্যাম, ৩২০ গিগাবাইট সাটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ১.৩ মেগা পিক্সজেল ইন্টিগ্রেটে ওয়েবক্যাম, ওয়াইফাই, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং সমর্থন, ২টি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, এসডি স্লট ফোর-ইন-ওয়ান, ব্লুটুথ, সিক্স-সেল ব্যাটারী এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে থাকছে ওপেনসোর্স লিনাক্স।

দোয়েল “অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-১” মডেলটি উচ্চ-কনফিগারেশনে তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে ১৪ ইঞ্চি ডাব্লিউএক্সজিএ এলইডি ব্যাকলিট, ইনটেল পেন্টিয়াম প্রসেসর, ইনটেল এইচএম ৫৫ চিপসেট, ২ গিগাবাইটের ডিডিআরথ্রি র‌্যাম, ৩২০ গিগাবাইট সাটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ডিভিডি রাইটার, ১.৩ মেগা পিক্সজেল ইন্টিগ্রেটে ওয়েবক্যাম, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং সুবিধা, ৪টি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, এসডি স্লট ফোর-ইন-ওয়ান, ব্লুটুথ, সিক্স-সেল ব্যাটারী এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে থাকছে ওপেনসোর্স লিনাক্স।

দোয়েল “নিউ অ্যাডভান্সড মডেল-১৬১২-১” মডেলটিও উচ্চ-কনফিগারেশনে তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে ১৪ ইঞ্চি ডাব্লিউএক্সজিএ এলইডি ব্যাকলিট, ইনটেল কোর আই থ্রি প্রসেসর, ইনটেল এইচএম ৫৫ চিপসেট, ২ গিগাবাইটের ডিডিআরথ্রি র‌্যাম, ৩২০ গিগাবাইট সাটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ডিভিডি রাইটার, ১.৩ মেগা পিক্সজেল ইন্টিগ্রেটে ওয়েবক্যাম, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং সুবিধা, ৪টি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, এসডি স্লট ফোর-ইন-ওয়ান, ব্লুটুথ, সিক্স-সেল ব্যাটারী এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে থাকছে ওপেনসোর্স লিনাক্স।

বাংলা লেখালেখির জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে জাতীয় কি-বোর্ড লে-আউট। এ ছাড়া প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব পাঠ্যবই এর সফ্ট কপিও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর ল্যাপটপের সবগুলো ফিচার সহজে বোঝার জন্য এতে একটি বিশেষ ম্যানুয়াল দেওয়া হতে পারে।

লেখকঃ প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।