রাজাকার আদম আলীর ফাঁসি দেইখা মরতে চাই “ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি”

গৌরনদী ডটকম ॥ রাজাকার আদম আলী সরদারের প্রত্যক্ষ ইশারায় পাক সেনারা আমার ভাই (মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত গন কবরসহচর) মুজাহার বেপারীকে তার শশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ১৯ বছর বয়সে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত রাজাকার আদম আলীর ফাঁসি দেইখা মরতে চাই।

আবেগআপ্লুত ও কান্নাজড়িত কন্ঠে আজ বুধবার দুপুরে কথাগুলো বলেছেন, রনাঙ্গন কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বংকুরা গ্রামের মৃত তাজেম আলী বেপারীর পুত্র জাকির হোসেন বেপারী (৫৯)। শুধু জাকির হোসেনই নয় ওই ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের মৃত ফরমান সরদারের পুত্র ও চিহ্নিত রাজাকার আদম আলী সরদারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সনের হত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের বিস্তার অভিযোগ করেন, চন্দ্রহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান হাওলাদার, সাহেব আলী সিকদার, ৯০ বছরের প্রবীণ ব্যক্তি রমেশ চন্দ্র মিস্ত্রিসহ অনেকেই।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সেইদিনের নির্মম কাহিনীর বর্ননা। সেই লোমহর্ষক বর্ননা করতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। খলিলুর রহমান একটি গণকবর দেখিয়ে বলেন, সেইদিন (১৯৭১ সনের ১৩ আশ্বিন) ১০/১৫ জন পাক সেনাদের সাথে নিয়ে চন্দ্রহার গ্রামে অভিযানে আসে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আদম আলী সরদার। ওইদিন রাজাকার আদম আলীর প্রত্যক্ষ ইশারায় চন্দ্রহার গ্রামের নেপাল হালদার, অন্তঃস্বত্তা সীমা রানী সেন গুপ্ত ও রুহিনী ঠাকুরকে একসাথে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আমরা গ্রামবাসীদের সহায়তায় ওই তিনজনের লাশ একত্রে মাটি চাঁপা দিয়ে রেখেছি। একইদিন একই গ্রামের ব্রমা ঠাকুর, সুশীল চন্দ্র হালদার ও অজ্ঞাতনামা দু’জন জেলেকে একত্রে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেইদিন পালিয়েও নরপশুদের কবল থেকে রেহাই পায়নি হীরা লাল হালদারের ১১ বছরের শিশু পুত্র কালা চাঁন হালদার, রাধা কান্ত মাঝির ১৩ বছরের শিশু পুত্র কমল মাঝি ও ১২ বছরের পুত্র সুভাষ চন্দ্র মাঝি। রাজাকার আদম আলী সরদার বাগানের মধ্যে পালিয়ে থাকা শিশুদের ধরে এনে পাকসেনাদের কাছে সোর্পদ করার পর পাকসেনারা ওই তিন শিশুকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

৯০ বছরের প্রবীণ ব্যক্তি রমেশ চন্দ্র মিস্ত্রি কাঁপাকাঁপা স্বরে বলেন, ওই বছরের ১৪ আশ্বিন রাজাকার আদম আলীর উপস্থিতিতে পাকসেনারা আমার বড়ভাই কৃষ্ণকান্ত মিস্ত্রির বসত ঘরসহ তিনটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। একইদিন রহমান ফকিরের বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন বেপারী বলেন, রাজাকার আদম আলী নিজেই চন্দ্রহার গ্রামের মোহাম্মদ আলী ফকিরের কন্যা নুরজাহান বেগম ওরফে নুরীকে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের কাছে সোর্পদ করে। পাকসেনারা নুরীকে দীর্ঘদিন গৌরনদী কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পে আটক করে রেখে গণধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে নুরী বীরঙ্গনার স্বীকৃতি পাবার আশায় বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও রাজাকার আদম আলী সরদার পাকসেনাদের নিয়ে চন্দ্রহার ও বংকুরা গ্রামের একাধিক নারীর সম্ভ্রব্যহানী করেছে।

তিনি আরো বলেন, রাজাকার আদম আলী সরদারের প্রত্যক্ষ ইশারায় পাক সেনারা আমার ভাই (মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত সহচর) মুজাহার বেপারীকে বাটাজোর গ্রামের তার শশুর হাচেন আলী বেপারীর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ১৯ বছর বয়সে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত রাজাকার আদম আলীর ফাঁসি দেইখা মরতে চাই।

সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আদম আলী সরদার তার স্ব-পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর চট্টগ্রামে আত্মগোপন করেছিলো। পরবর্তীতে দেশে ফিরে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি বাটাজোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।