বিয়ের আগেই পড়ুন – সিদ্ধান্ত নিন

মোহাম্মদ গোলাম নবী: যদিও লেখার শিরোণাম বিয়ের আগে পড়ুন, সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু যাদের বিয়ের বয়স ২/৩ বছর মাত্র তারাও পড়তে পারেন। কাজে লাগবে। কয়েকটি বিষয় শেয়ার করার জন্য এই লেখা।

১. অনেকেই বলতে শুনি একটু গুছিয়ে নেই তারপর বিয়ে-সংসার করার কথা ভাবব। তাদেরকে বলতে চাই, সংসার ব্যাপারটা এমনই যে এখানে গুছিয়ে নেওয়ার কিছু নেই। সারাটা জীবন ধরেই সংসার গোছাতে হয়। ফলে, গুছিয়ে শুরু করব বলে কিছু নেই। যা শুরু করতে হবে সেটা শুরু করে দেওয়াই ভালো।

২. তাহলে প্রশ্ন হতে পারে বিয়ের জন্য কি কোন প্রস্তুতি দরকার নেই? অবশ্যই আছে। দু’জনের সংসার চালানোর মতো ন্যুনতম প্রস্তুতি থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে সংসারটা দু’জনের। আর সংসারের জিনিসপত্র ধীরে ধীরে হতে থাকবে। সাজানো সংসারের চেয়ে সংসার সাজানো মনে হয় অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে।

৩. অনেকে মনে করেন ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ, এসি, ঘরের সব আসবাবপত্র, আইপিএস, গাড়ি, এমনকি বাড়ি পরযন্ত রেডি করে তারপর বিয়ে। মজার ব্যাপার হলো এর মধ্যে একমাত্র বাড়িটা দীর্ঘমেয়াদের হলেও বাকি জিনিসপত্র সংসার জীবনে একাধিকবার  চেঞ্জ করার দরকার হয়। মূলত, সংসার জীবনে নতুন নতুন জিনিস যতো কেনা হয় তারচেয়ে বেশি খরচ হয় পুরনো জিনিসপত্র কিনতে বা মেরামত করতে। তখন মনে হয় গুছিয়ে শুরু করার কিছু নেই। ফলে, গুছিয়ে শুরু করার জন্য যে ৪০ বছর বয়সে বিয়ে করল। তার অবস্থা ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করার মানুষটির মতোই হয়। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে দেখুন।

৪. অনেকে আবার গুছিয়ে শুরু করা বলতে তার চাকরি কিংবা ক্যারিয়ার বোঝান। চাকরি কিংবা ক্যারিয়ারের শেষ বলে কিছু নেই। এটা একটা মোহ। এই মোহে পড়ে বিয়ে বিলম্বিত করার পর একটা সময়ে গিয়ে তারা বোঝেন যে, কাজটি ঠিক করেননি। কিন্তু তখন ফিরে আসার সময় থাকে না। অনেককে দেখেছি ক্যারিয়ার তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে বিট্টে করেন। এরা সাধারণত আম ও ছালা দুটোই হারিয়ে থাকেন।

৫. বিয়ে একটা শারীরিক ও মানসিক বন্ধন। এখানে বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। সেসঙ্গে মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। দুই পরিবার থেকে আসা দু’টি পৃথক মানুষ যখন এক ছাদের নিচে থাকেন তাদেরকে অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। এটা মনে রেখে বিয়ে করত হবে।

৬. বিয়ের একটি ফলাফল হলো প্রজন্ম বিস্তার! অর্থাৎ সন্তান। একটি পরিবারের সন্তান ওই পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিজেদের ভোগ বিলাস, চাওয়া পাওয়া অনেক কিছুর চেয়ে তখন সন্তানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সন্তানের বেড়ে উঠার জন্য কল্যাণকর নয় এমন ধরনের আচরণ থেকে বাবা মাকে সবসময় বিরত থাকতে হবে। যার অভাব ইদানীংকালে খুব চোখে পড়ে।

৭. বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স কতো, সেনিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে আমি মনে করি ২৫/২৬ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করাটাই ভালো। আমি নিজে অবশ্য ২৪ বছর বয়সে বিয়ে করেছি।

৮. বিয়ে করার মধ্য দিয়ে নিজের সংসার হওয়া মানে, মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়। একথাটা মনে রাখতে হবে। যে বাবা-মা আপনাকে বড় করেছে। আজকে এই অবস্থায় আসতে সাহায্য করেছে। তাকে কখনো অবহেলা করবেন না। মা-বাবা যতোদিন বেঁচে থাকবেন (স্বামী ও স্ত্রী দু’জনের জন্যই প্রযোজ্য) তাদের চাহিদার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে সময় দিতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে একসময় আপনিও ওই অবস্থায় যাবেন।

এটা একটা ৩০ মিনিটের লেখা। লেখার সময় শেষ। আরো কিছু বলার ছিলো। পরে কখনো বলব। আজ আমার বিয়ের ১৮ বছর পূর্তি হলো! মনে হলো, কিছু কথা আজকে যারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তাদেরকে বলে ফেলি!! আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর আপনাদের বলি বিয়ে করুন। সংসারের দায়িত্ব নিন। এটা আনন্দের বিষয়। ভালো থাকুন।


পূর্বে প্রকাশিত: http://mgnabi.wordpress.com