প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করছেন -মির্জা ফখরুল

খোন্দকার কাওছার হোসেনঃ প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই ইসি পুনর্গঠনে সংলাপের দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা রাষ্ট্রপতির কাজ নয়। তার কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া।

গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে জনদুভোর্গ শীষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায়  অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আ ন ম আখতার হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে গণতন্ত্রের উপর স্বৈরতন্ত্রের আঘাত নেমে এসেছে। দমননীতির প্রতিবাদও করতে দিচ্ছে না পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার কোন  তন্ত্রই বিশ্বাস করছে না। জনগণ নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। তাদের আগে ছিল মুজিবতন্ত্র, আর এখন হচ্ছে ক্ষমতাতন্ত্র। তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে একদলীয় শাসন কায়েম করা। কারণ, আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী নিজেই বাকশালের প্রশংসা করেছেন এবং তিনিই বলেছেন বাকশাল ঠিকই ছিল।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য বলছে-বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচতে আন্দোলন করছে। তবে তাদের কথা সত্যি নয়। বিএনপি যুদ্ধাপারধীদের বিচার চায়। তবে সে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে, দেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও হত্যা গুম  থেকে বাঁচতে বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের কোন অপপ্রচারে কাজ হবে না, সময় শেষ হয়ে আসছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।

সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা ১৮ ডিসেম্বরের ককটেল বিস্ফোরণ ও বিএনপির সময়ে জেএমবির ককটেল বিস্ফোরণ একই সূত্রে গাঁথা বলছেন, তাদের মনে রাখা উচিত বিএনপি ঐ সময়ে জেএমবি সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, হয়রানি করে লাভ হবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন জনগণের আন্দোলনে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ আন্দোলনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষা করবো। এ সময় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামারও আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফকে একটু পড়োশোনার পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলুন। আমাকে উপদেশ না দিয়ে কারা অশালীন কথা বলে তা জনগণকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনারা কোন ভাষায় কথা বলেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে নতুন ইস্যু যোগ করল বিএনপি
গুম, খুন, গুপ্ত হত্যা ও বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে নতুন ইস্যুযোগ করল বিএনপি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এ কথা জানান।

রিজভী বলেন, সরকারের মদদে গুম, খুন, গুপ্ত হত্যা ও বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে আগামী ২৬ ডিসেম্বর (আগামীকাল সোমবার) জেলায় জেলায় পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যোগ করছি।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, এতে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রস্ফীতি বাড়বে এবং বিদ্যুৎভিত্তিক উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিপর্যস্ত হবে জনজীবন।

আত্মীয় স্বজন দিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বসিয়ে সেখান থেকে চড়াদামে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের কাছ থেকে বর্ধিত মূল্য নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ

দেশব্যাপী থানা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গতকাল শনিবার ব্যাপক হারে বাধা দেয়ারও অভিযোগ তোলেন রিজভী।

তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে ও ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সরকারের বাহিনী (পুলিশ-র‌্যাব) ও আওয়ামী ক্যাডাররা যেভাবে হামলে পড়েছিল তা এখনো অব্যাহত রেখেছে।

গতকাল শনিবার দেশব্যাপী থানা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গেলে তারা নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে।