প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচিত্র প্রদর্শন – প্রতিরোধে মাঠে নামবে বিএনপি

খোন্দকার কাওছার হোসেন : দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচিত্র প্রদর্শনকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করে তা প্রতিরোধে মাঠে নামবে বিএনপি। শীঘ্রই এ লক্ষ্যে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) ও বিএনপিপন্থি সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যাক্তি ও বুদ্ধিজীবিরা মাঠে নামছে বলে  দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় ছবি প্রদর্শন জাতীয় সংস্কৃতির ওপর একটা বিরাট আঘাত। এর সঙ্গে শুধু সাংস্কৃতিক কিংবা জাতীয় সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালানোর প্রশ্ন জড়িত নয় বানিজ্যিক স্বার্থও প্রতক্ষ্যভাবে জড়িত।

দলটির বিবেচনায়, যারা ভারতীয় চলচিত্র বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তারা বিভিন্ন বিবেচনায় জাতীয় দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ তারা বিদ্বেষের বিষবাস্প নয়, তারা যা বলছেন তা জন মানুষের সরব উচ্চারণ।

দলটির মতে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, আছে নিজস্ব মূল্যবোধ, পৃথক ইতিহাস, ঐতিহ্য। চলচিত্র এমন একটি মাধ্যম যেটির মাধ্যমে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতীর আনন্দ বেদনা, সুখ-দুঃখ ও নিজস্ব জীবনবোধ প্রতিফলিত হয়। জাতি গঠনে এবং নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য চলচিত্র বিশেষ মাধ্যম ভাবা হয়।

এ কারণে ইতিমধ্যেই ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। বিএনপি ওই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এ নিয়ে জাসাস কর্মসূচি দেবে বলেও জানান বিএনপির এক নেতা।

সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল ঢাকা মহানগর কমিটি ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে প্রদর্শন এবং ভারতীয় সকল আগ্রাসনের প্রতিবাদে এক মানব বন্ধনের আয়োজন করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ মানববন্দনে প্রধান অতিথি ছিলেন। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গত রোববার এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাজনৈতিক ভাবে একটি জাতিকে পরাধীন করতে হলে তাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হবে। সরকার সে পথেই দেশকে নিয়ে যাচ্ছে।

রিজভী বলেন, বিএনপি সমর্থিত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেবে। সে কর্মসূচির প্রতি বিএনপির সমর্থন থাকবে। পরবর্তীতে যা করার দল করবে।

দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচিত্র প্রদর্শনের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় ছবি প্রদর্শন জাতীয় সংস্কৃতির ওপর একটা বিরাট আঘাত।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আমাদের সংস্কৃতিব্যক্তিরা। আমরা ওই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি।

এ নিয়ে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস কর্মসূচি দেবে বলে রিজভী জানান।

বিশিষ্ট গীতিকার, চলচিত্র ব্যক্তিত্ব ও বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার গতকাল সোমবার দুপুরে ভোরের কাগজকে বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, উপমহাদেশের কোনো চলচিত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলবেনা, সেখানে তারই উত্তরসূরীরা এই বিজয়ের মাসে ভারতীয় ছবি দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক, এটা কোনো ভালো কাজ হয়নি। এটাকে মেনে নেয়া কঠিন হবে।

তিনি বলেন, বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাস হাজার বছরের। আমাদের চলচিত্রে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির মতো ছবি রয়েছে, যেটার মাধ্যমে একটা আন্দোলন আমরা তৈরি করতে পেরেছিলাম। আমার লেখা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গান রয়েছে। যা আজো মানুষকে আন্দোলিত করে। বাইরের সংস্কৃতি আমরা চাইনা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে ভালো চলচিত্র হয়না এ অজুহাতে ভারতীয় চলচিত্র আমদানী করা হয়েছে। এটা ঠিক না। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমাদের চলচিত্রকে সরকারিভাবে পৃষ্টপোশকতা দেয়া হয়নি। আমাদের ভালো স্টুডিও নেই, ল্যাবরেটরী নেই, ক্যামেরা নেই, কবে হবে তার লক্ষনও নেই। এসবের সমাধান না করে হঠাৎ করে বলবেন চলচিত্রে আমরা দেওলিয়া এটা মেনে নেয়া যায়না।

তিনি বলেন, এর ফলে আমাদের দেশে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে, কর্মহীন হয়ে পড়বে, তাদের ক্রোধ বাড়বে, আক্রোশ তৈরি হবে। দেশের মানুষ এমনিতেই নানান সমস্যায় জর্জরিত। ফলে তারা প্রতিবাদ করতে মাঠে নামবে এটাই স্বাভাবিক।