বরিশালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা নেই!

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ বরিশালের সদর উপজেলার রিকশাচালক হাবিব মিয়ার আট বছর বয়সী ছেলে মিরাজের বাম পায়ে দুই মাস আগে একটি পাগলা ককুর কামড় দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের কাছে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা না থাকায় মিরাজকে বাইরে থেকে প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেন। স্থানীয় ওষুধের দোকানে হাবিব মিয়া খোঁজ করে জানলেন, জলাতঙ্ক রোগের পাঁচ ডোজের টিকার দাম পড়বে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। দরিদ্র রিকশাচালক হাবিব মিয়া বিপাকে পড়েন। এত টাকা দিয়ে টিকা কেনার সাধ্য নেই তাঁর। পরে কবিরাজি চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক, পানিপড়াসহ বিভিন্নভাবে তার ছেলেকে ভালো করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেসবে কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে তাঁর আদরের সন্তান মারা যায়। বরিশালের সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা না থাকায় এলাকার দরিদ্র লোকজনকে এভাবেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে প্রায় ২ বছর ধরে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওই টিকা সরবরাহ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশালের কয়েকটি ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বাজারে দুটি ওষুধ কোম্পানির ‘রাবিপুর’ ও ‘বেরোরাব’ নামের টিকা কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোর প্রতিটি পাঁচ ডোজের দাম দুই হাজার ৭৫০ থেকে তিন হাজার টাকা। এদিকে সকল ওষুধের দোকানে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যায় না। আর সরবারহের তুলনায় চাহিদা বেশী থাকায় ওষুধ ব্যবসায়ীরা এর ফায়দা নিচ্ছেন কোম্পানি নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে প্রতি ডোজে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশী মুল্য নিয়ে।

বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এম নুরুল ইসলাম চুন্নুবলেন, ‘ককুরে কামড়ানো অসচ্ছল পরিবারের রোগীরা প্রায়ই টিকা নিতে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে আসেন। কিন্তু টিকা না থাকায় তাঁদেরকে ফিরিয়ে দিতে হয়। কিছু লোকজন মনে করে, এখানে টিকা আছে। আমরা ইচ্ছে করে তাঁদের দিচ্ছি না।’ একই ধরনের মন্তব্য করেন আগৈলঝাড়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সহিদুল ইসলাম ও গৌরনদীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রবীন্দ্রনাথ গাইন রবীন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডাঃ মতিউর রহমান জানান, পুর্বে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে ঢাকার মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট থেকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা সরবরাহ করা হতো। সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি প্রতিষেধক টিকা ৩৫ টাকায় কিনতো এবং জনসাধারনকে বিনামূল্যে সরবরাহ করতো। কিন্ত ২ বছর যাবত মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট থেকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশন থেকে জনসাধারনকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

সিভিল সার্জন এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘জেলার কোন সরকারি হাসপাতাল ও পৌরসভা কার্যালয়ে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা নেই। ঢাকা থেকে এটি সরবরাহ করা হচ্ছে না। সমস্যাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বেশ কয়েকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি।