কুড়লিয়া বাজারে এখনো বইছে শোকের মাতম – উজিরপুরে নিহত কলেজ ছাত্র স্বপন সমদ্দার হত্যার বিচারের দাবিতে স্বোচ্চার

সাকিল মাহমুদ আউয়াল, উজিপুর ॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কুড়লিয়া গ্রামে মেধাবী কলেজ ছাত্র স্বপন সমদ্দার খুন হওয়ার গতকাল রবিবার ৬ দিন পার হলেও হত্যাকারী অমল মন্ডল ব্যতিরেকে বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারে ব্যার্থ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। প্রথম দিন থেকেই নিহতের ভাই মামলার বাদী তপন  সমদ্দার মামলাটি সি.আই.ডি. তে প্রেরনের দাবী করে আসছে। কুড়লিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান পাঠ বন্ধ রেখে এবং পার্শ্ববতী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করে  শোক পালন কর্মসূচী অব্যহত রেখেছে।

অন্যদিকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকাস্থ বরিশাল বাসীর উদ্যোগে স্বপন সমদ্দার হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসির দাবিতে এবং শিশু, নারী ও সাধারন জনতার  উপর পুলিশের  নির্বিচারে গুলি বর্ষনের প্রতিবাদে মানব বন্ধন কর্র্মসূচী পালিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডঃ চিন্ময় হাওলাদারের  সভাপত্তিত্বে অনুষ্ঠিত  মানব বন্ধন কর্র্মসূচীতে আরো বক্তৃতা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আরিফ, সাবেক ছাত্র নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন, যুবনেতা কামরুল হাসান নাসিম, রফিকুল ইসরাম জাহিদ, প্রনয় কান্তি বিশ্বাস, এডভোকেট অমিতাভ বিশ্বাস, মানব বন্ধন কর্র্মসূচী পরিচালনা করেন ছাত্রনেতা মনোজ বাড়ৈ। মেধাবী কলেজ ছাত্র স্বপন সমদ্দার হত্যাকান্ডের ছয় দিন পার হলেও কুড়লিয়া পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও কালে হাজার হাজার নীরিহ গ্রামবাসীর উপর পুলিশের ছোরা গুলিতে ১৬ জন গ্রামবাসী অহত হয়েছিল। অহতরাকে কোথায় কেমন আছে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রসাশন কোন খোঁজ খবর নেননি বলে আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। জল্লা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সাময়িক বরখাস্থ  কৃত সোবেদার দেলোয়ার হোসেন ওই এলাকার ৪০০ নিরীহ গ্রামবাসীকে আসামী করে মামলা দায়ের করার কারনে  গ্রামবাসীরা আতংকিত হয়ে পরার ফলে শ্রমিক শ্রেনীর মানুষের আয় রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্বপন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা  উজিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক শামীম শেখ গ্রেফতার কৃত অমল মন্ডলকে ১০ দিনের রিমান্ডের  আবেদন করে আদালতে প্রেরন করলেও এখনো রিমান্ড শুনানি হয়নি। কুড়লিয়া বাজারে প্রতিদিন  শোকার্ত নারী পুরুষ সকাল সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। গ্রামের সাধারন মানুষদের ৩ কিলোমিটার ও ৫কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারফা ও সাহেবের হাট থেকে  পায়ে হেটে নিত্য প্রয়োজনীয়  হাট বাজার করতে হচ্ছে। কুড়লিয়া পুলিশ ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিহত স্বপনের সমাধির পাশে প্রতিদিন শতশত শোকার্ত  মানুষ নয়নাশ্রু ঝড়াচ্ছে। শোকার্ত মানুষের আহাজারিতে কুড়লিয়া গ্রামের আকাশ বাতাশ প্রতিনিয়ত প্রকস্পিত হচ্ছে। অন্য দিকে হত্যাকারী অমল মন্ডলের বাসা কুড়লিয়া বাজারের মধ্যে হওয়াতে তার স্ত্রী অনীতা মন্ডল তার দুই মেয়েকে নিয়ে শংকা আর হতাশার মধ্যে দিন রাত পার করছেন বলে তিনি অভিযোগের সুরে অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কান্না কাটি করছেন। উজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার রায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুড়লিয়া গ্রামের হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখার এক সভায় স্বপন হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি হবে বলে ঘোষনা করেছেন।

অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবী চন্দ বলেন, কুড়লিয়া গ্রামে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যপারে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং শোকার্ত মানুষের পাশে থেকে তাদের দাবী আদায়ের মিছিলে সামিল হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর ভোর রাতে কুড়লিয়া পুলিশ ক্যাম্পের সামনের রাস্তায় ১০০ গজের মধ্যে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী অরুন সমদ্দার নিহত স্বপনকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে তিনি তাকে উদ্ধার করে স্থানিয় কালু ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন এবং স্বপনের বাড়িতে খবর দেন। বাড়ীর লোকজন এসে স্বপনকে জড়িয়ে ধরলে তিনি তাদেরকে বলেন অমল মন্ডল ও তার শালা দুলাল রায় তাকে মেরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে, স্বপনের অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পথে স্বপন মারা যায়।