মহাজোট সরকারের ৩ বছরে প্রতিশ্র“তির সাথে প্রাপ্তির মিল কোথায়?

শাহীন হাসান, বরিশাল ॥ কেটে গেছে মহাজোট সরকারের তিনটি বছর। ২০০৮ সালের ২৯ডিসেম্বর সেনাসমর্থিত অনির্বাচিত তত্তাবধায়ক সরকারে পরিচালনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করে আ’লীগ তথা মহাজোট সরকার। মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনায় আনেক প্রতিশ্র“তির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আনেক স্বপ্ন, আনেক আশা নিয়ে দেশের সাধারণ জনগন মহাবিজয় উপহার দেয় বর্তমান মহাজোট সরকারকে। আজ তিন বছর বছর পূর্ণ হলো সেই সরকারের। এ সময়ে সরকারের সাফল্য-ব্যার্থতা মূল্যায়ন, স্বপ্ন-আশা ও বাস্তাবতার ফারাক খুজছে সেই সাধারণ জনগন। বিশাল জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সরকারের প্রতিশ্র“তির সাথে প্রাপ্তির হিসেব মিলাচ্ছে জনগন। বিরোধীদল বর্তমান এ মহাজোট সরকারকে সম্পূর্ণ ব্যার্থ ঘেষনা দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবী করলেও সাধারণ মানুষের ধারণা প্রতিশ্র“তি রক্ষায় সরকার আন্তরিক। প্রতিশ্র“তির সব পূরণ করতে না পরলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, যোগাযোগ মন্ত্রীর কারণে পদ্মা সেতুতে দাতা গোষ্ঠীর অর্থায়ন বন্ধ সহ কয়েকজন মন্ত্রির অতিকথন, সরকারি প্রশাসনে অনিয়ম দূর্ণীতি, দলীয় অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের এক শ্রেনীর নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, দেশব্যাপী ছাত্রলীগের দখল-সন্ত্রাস ও ভর্তি বানিজ্যের সাথে দু’দিন আগে ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় সংক্রান্ত ঘটনায় মিরপুরে কামাল মজুমদারে সাংবাদিক নিধন সরকারের আনেক সাফল্যকে বিবর্ণ করে দিয়েছে। যে কারণে বর্তমান মহাজোট সরকারের নীল আকাশে মেঘ জমেছে। আগামী দু’বছরে এ মেঘ কাটিয়ে উঠতে হলে আনেক সতর্কতার সাথে সামনে এগুতে হবে সরকারকে। গত তিন বছরে মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। শিক্ষা ও কৃষিতে সরকারের সাফল্য চোখে পরার মত হলেও গুম, গুপ্তহত্যা ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ম্লান করে দিয়েছে সে সাফল্যকে।

সংসদ পরিচালনায় বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ও বিরোধী দলের প্রতি আচরণ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নেতিবাচক মনোভাব বিগত বছরের চেয়ে উল্লেখ্ যোগ্য হারে বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু, এমডিজি অর্জনে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সফলতা, নারী শিক্ষায় সরকারের অগ্রগতি, জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ যে জলবায়ু পরিবর্তনের অণ্যতম শিকার বিষয়টি প্রমান করা সহ আইসিটি ক্ষেত্রে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান মহাজোট সরকার। এ সকল সাফল্যের পাশাপাশি সরকারে অনেক ব্যার্থতায় ব্যাথিত ভূক্তভোগী জনগন। আ’লীগ তথা মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া পঁচটি অগ্রাধিকারের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছিলেঅ অন্যতম। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে আ’লীগ নেতারা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে বক্তব্য দিতেন, আজ ক্ষমতায় এসে তারাই বলছেন সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব না।

বানিজ্যমন্ত্রী বলেছেন বাজারে কম যান, অর্থমন্ত্রী বলছেন কম খান। দ্রব্যমূল্য ছাড়াও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করার কথা থাকলেও সে ক্ষেত্রে ব্যার্থ বর্তমান সরকার। ক্রসফায়ার’র সাথে মহাজোট সরকারের নতুন সংযোজন গুম বা গুপ্তহত্যা। যা আতঙ্কিত দেশবাসি। তত্তাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা আ’লীগের আন্দোলনের ফসল দাবী করলেও কারো সাথে কোন আলোচনা না করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ হাতে পাওয়ার আগেই আদেশের দোহাই দিয়ে”ঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ করে অনিশ্চয়তা অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে দেশবাসী সহ দেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিন বছর শেষে সরকারের সময় আর মাত্র দুই বছর।

সরকারের সফলতার তুলনায় ব্যার্থতা, প্রশংসিত উদ্যোগের তুলনায় সমালোচিত উদ্যোগ, সফল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপদেষ্টার তুলনায় সমালোচিতদের বহরই বেশী। সময় বেশী নেই আগমী জনরায়ের। এ অবস্থায় সরকারকে মনে রাখতে হবে জনগন কখনো ভূল সিদ্ধান্ত নেয়না। সেই সিদ্ধান্তের সময় খুবই সন্নিকটে। দেখতে দেখেতে কেটে যাবে সামনের দুটি বছর।