বরিশাল নগরীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে ভাড়াটিয়ারা দিশেহারা

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ নতুন বছরের শুরুতেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাড়ির মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির নামে লোহার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে ভাড়াটিয়াদের মাথায় । বরিশাল নগরীর প্রতিটি এলাকায় ভারার জন্য হাজারো বিল্ডিং, ফ্লাট বাসা, টিনের ঘর রয়েছে। তার মধ্যে দিন মজুর কিংবা খেটেখাওয়া মানুষের পরিমান বেশি। যে যার সাধ্যমতো প্রত্যেকেই থাকে বাজেট মতো ভাড়া বাসায়। আবার বিত্তবান ব্যক্তিরা থাকে তাদের সাধ্যমতো বিল্ডিং কিংবা ফ্লাট বাড়িতে। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই বাড়ির মালিকরা তাদের বাড়ি ভাড়া জানুয়ারি অর্থাৎ ২০১২ সালের প্রথম মাস থেকে বৃদ্ধি করার নোটিশ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিত্তবানদের তেমন কোন সমস্যা না হলেও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে নগরীর হাজারো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। নতুন বছর শুরুর আগ থেকেই নগরীর বাড়িওয়ালারা তাদের কোন বাসা প্রতি কত টাকা বৃদ্ধি করা হবে তা জানিয়ে দিয়েছে ভাড়াটিয়াদের। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির কথা শুনেই অনেক ভাড়াটিয়াদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ঘর ভাড়া বৃদ্ধির কথা শুনেই অনেকে ঘর ছেড়ে কম টাকা ভাড়ায় অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধন্ত নিয়েছে। আর এই ঘর পরিবর্তনের ঝামেলাসহ পরিবহন বাবদ করতে হয় পোহাতে হয় অতিরিক্ত খরচের চাপ।

দেখা গেছে খেটে খাওয়া মানুষ সাধারণত ৮শ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা বাড়ি ভাড়ার মধ্যে পুরো পরিবার নিয়ে থাকার চেষ্টা করে। আর বিত্তবান ব্যক্তিরা বিল্ডিং কিংবা ফ্লাট বাড়ি ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকার মধ্যে থাকছে। আর ওই সকল প্রতি বাসা কিংবা ফ্লাট বাড়ির মালিকরা ২শ’ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত বাসা বাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাড়িওয়ালারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য বিসিসি’র অজুহাত দেখিয়ে খেটে খাওয়া মানুষদের বিপাকে ফেলছে। দেখা গেছে একজন দিন মজুর প্রতিদিন যে কয় টাকা আয় করে তা দিয়ে মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বর্তমান বাজারে চলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তার ভিতরে বাড়িওয়ালারা ৬মাস কিংবা বছর অন্তর ভাড়া বৃদ্ধি করছে। খেটে খাওয়া কিছু মানুষ তাদের নানা সমস্যার কথা বলে জানায়, ভাই যে ক’টাকা আয় করি তা দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে খেয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও পূর্বে বাসা ভাড়া যা ছিলো মোটামুটি চলতো। কিন্তু ঘর মালিকরা তাদের পকেট ভারি করার জন্য আমাদের বাসা ভাড়া চলতি বছরে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বাড়িওয়ালাদের কাছে ঘর ভাড়া না বাড়ানোর বিষয়ে অনুরোধ করলে তারা বলে, মনে চাইলে থাকেন, নইলে বাসা ছেড়ে চলে যান। তবে বাড়িওয়ালাদের এই অভিব্যক্তির কোন প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই। তারা আরো বলে, ভাড়া থাকো কথা বলবে ভাড়াটিয়ার মতো। মালিক হতে যেওনা। তোমরা চলে গেলে আমার ঘর খালি থাকবে না।

দেখা গেছে, বিভিন্ন অফিস কিংবা কোম্পানীতে চাকুরী করা মানুষের অনেকেরই নতুন বছরে মাসিক বেতন বৃদ্ধি করছে না মালিকরা। তাদের ক্ষেত্রেও মালিকদের একই আচরণ শুনতে হচ্ছে। তবে কেন ভাড়াটিয়াদের প্রতি এই অবহেলার দৃষ্টি। কেন এত অনিহা। ভাড়াটিয়া সে কি মানুষ না। এমন প্রশ্নের উত্তর খুজছেন নগরীর খেটে খাওয়া ভাড়াটিয়ারা। তবে এই অভিযোগ জানানোর জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ বিভাগ। নগরীর সিরাজ মহলের ভাড়াটিয়া জামাল জানায়, জানুয়ারি মাস থেকেই আমার বাসা ভাড়া ৩০০ টাকা বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালা। পলাশপুরের নয়ন শিকদার জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এই টিনের ঘরের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ২০০ টাকা। কিন্তু আমার মাসিক আয় তো ২০০টাকাও বৃদ্ধি করেনি মালিক। কি করে বাড়িওয়াকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেব। এর প্রতিবাদ করতে গেলে অন্যসব বাড়িওয়ালার মতোই ব্যবহার পাওয়া যায়।

সাগরদী শিকদার পাড়ার ভাড়াটিয়া সায়েম জানায়, আমি আমার মা-বাবাকে নিয়ে ৮শ’ টাকা ভাড়া বাসায় ছিলাম। কিন্তু নতুন বছরের অজুহাত দেখিয়ে বাড়িওয়ালা ২শ’ টাকা বাসাভাড়া বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করেছে। কাউনিয়া এলাকার তানিয়া জানায়, আমি ১২শ’ টাকায় গত এক বছর ধরে এই ঘরে আছি। কিন্তু নতুন বছর শুরু হওয়ার কারণে বাড়িওয়ালা আমাদের এই ছোট ঘরটির ভাড়া বাড়িয়ে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ রকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে নগরীর প্রতিটি ভাড়াটিয়াদের মুখে মুখে। তারা আরো অভিযোগ করেন, ভাই কম টাকায় থাকি বলে বর্ষার দিনে ঘর থেকে পানি পরে, শীতের দিনে ঘরে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে একটি বাড়িওয়ালার অনেক ভাড়ার ঘর রয়েছে এবং তাদের জন্য একটি টয়লেট রয়েছে। তাও আবার নেংরা। দেখা গেছে, নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোডের রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর টয়লেট।

অপরদিকে জানা যায়, নগরীর উত্তর কাউনিয়া, পশ্চিম কাউনিয়া, কাউনিয়া বিসিক, কাউনিয়া প্রধান সড়ক, নতুন বাজার এলাকা, সাগরদী এলাকা, ভাটিখানা এলাকা, হযরত কালুশাহ সড়ক মীরা বাড়ি এলাকা, বাংলা বাজার এলাকা, বেলতলা এলাকা, আলেকান্দা এলাকা, জিয়া সড়ক, নথুল্লাবাদ এলাকা, গোরস্থান রোড এলাকা, কাজী পাড়া এলাকা, বাজার রোড এলাকা, বান্দ রোড এলাকা, পলাশপুর এলাকা, পুরানপাড়া এলাকা, মতাসার এলাকা, কাশিপুর এলাকা, চৌমাথা এলাকা, বগুড়া রোড, সদর রোড, হাসপাতাল রোডসহ নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড তো আছেই। ওয়ার্ড ছাড়াও বিভিন্ন অলিতে গলিতে ভাড়িটিয়াদের বাসা ভাড়া বাড়িয়েছে বাড়িয়াওয়ালারা। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া হাজেরা খাতুন স্কুল সংলগ্ন বাড়িওয়ালা নজরুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধির কারণেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে হচ্ছে এবং সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমাদের ঘর বাড়া বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

অপরদিকে দেখা গেছে, নগরীর কাউনিয়া এলাকার কিছু বাড়িওয়ালাদের চলতে হয় ভাড়াটিয়াদের উপর নির্ভর করে। আর এই ভাড়াটিয়াদের টাকার বিনিময়ে তাদের মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের সকল খরচই চলছে। তবে কিছু ভাড়াটিয়ার বাসা ভাড়া একটু দেরিতে দেয়া হলে তাদের উপর চালানো হয় স্টীম রোলার। করা হয় অকথ্য ভাষায় গালাগাল। কিছু কিছু বাড়িওয়ালারা তাদের বাসার ঝিয়ের কাজও করাচ্ছে ভাড়াটিয়ার মেয়ের দ্বারা। আবার কোন কোন বাড়িওয়ালা তাদের সংসারের বাজারও করাচ্ছে ভাড়াটিয়া কর্তাদের দিয়ে। আর ওই সকল ভাড়াটিয়াদের নেয়া হচ্ছে না কোন পারিশ্রম।

এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এ বছর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এখন পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কোন নোটিশ দেয়নি বাড়িওয়ালাদের। বিসিসি’র আওতাধীন ভাড়াটিয়ারা নগর পিতা সিটি মেয়র অ্যাড. শওকত হোসেন হিরনের কাছে দাবী জানায়, বাড়িওয়ালারা যাতে সিটি কর্পোরেশনের নোটিশ ব্যতিত নতুন বছরে অবৈধভাবে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি না করে এবং তাদের বাসা ভাড়া দিতে একটু দেরি হলে যেন অকথ্য ভাষায় গালমন্দ না করে সে ব্যাপারে তিনি দৃষ্টি রাখেন।