এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ নদী বন্দর এলাকারবাসিন্দা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম ম্যাধম বৃহত্তর ৪টি রুটের ফেরি সার্ভসের অবস্থা এখন সচনিয়। এ রুট গুলোতে মাত্র ২০ ফেরিতে প্রতিদিন চার হাজারের অধিক যানবাহন চলাচল করছে। ফেরি সংকট আর প্লুটুনের দুরাবস্থার কারনে প্রতিনিয়তই এ অঞ্চলের লক্ষ যাত্রীকে চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। চলতি বছরে মধ্যে এ সমস্ত ফেরি রুটে কমপক্ষে আরো ১৬ টি ফেরির প্রয়োজন হলেও আগামী ২০১৩ সালের জুন মাসের আগে নতুন কোন ফেরি পাচ্ছে না এ অঞ্চলবাসী। তাবে তা নিয়েও রয়েছে নানান বির্তক। কেননা এডিপি আর্থায়নে ২০০৯ সালের শুরুতেই যে নতুন ১০টি ফেরি নির্মন কাজের উদ্যেগ নিলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২টি ফেরি নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এবং বাকিগুলো দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু যাত্রীরা এ দূর্ভোগের অবসান চায়।
সূত্র মতে, দেশের বৃহত্তর ৫ ফেরি সার্ভিসের মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-চরজানাজাত, ভোলা- লক্ষ্মীপুর ও লাহারহাট-ভেদুরিয়া নামের ৪টি ফেরি সার্ভিস দক্ষিণাঞ্চলবাসী অন্যতম ভরসা। কিন্তু এ সার্ভিস গুলোতে ফেরি সংকট আর প্লুটুনের দুরাবস্থা এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে এ ৪টি নৌরুটে ৩৮টির মতো ফেরি চলাচলের ছাড়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ ফেরি সব সময় চলতি ও বার্ষিক মেরামতে থাকে। মানদাতার আমলে চলাচলকারী এর মধ্যে প্রতিদিনই কোন না কোন বিকল হয়ে পরছে। তাই প্রতিদির গড়ে এ রুট গুলোতে ২০টির বেশী ফেরি চলাচল করছে না। কিন্তু এ রুট গুলোতে প্রতিদিন পারাপার করছে কমপক্ষে ৪ হাজার যানবাহন। সল্প সংখ্যক ফেরি সার্ভিসের কারনে প্রতিদিনই নদীর এপার ওপারের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সিরিয়াল লেগে থাকে। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীর চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে প্রতিদিনই।
বিআইডব্লিউটিসি’র এক জরীপে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর রাজধানী মুখি হওয়ার অন্যতম যোগাযোগ পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে বর্তমানে বিভিন্ন টাইপের ১০টি ফেরি চলাচল করছে। গড়ে প্রতিদিন ৩৫শ’ যানবাহন এই রুটে চলাচল করে থাকে। এই রুটের জন্য ১৫টি ফেরি প্রয়োজন। একই ভাবে মাওয়া-চরজানাজাত রুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করে। গড়ে এই রুট থেকে সাড়ে ১৬শ’ যানবাহন চলাচল করে থাকে। এই রুটের জন্য ১৯টি ফেরি প্রয়োজন। ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ৫টি কে-টাইপ ফেরির প্রয়োজন। এখানে গড়ে ১শ’১০টি যানবাহন চলাচল করে থাকে। তবে এ রুটের জন্য আশার কথা হলো ভোলাসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের নৌরুটে ২০১১ সালের ৯ জুলাই কৃষাণী নামে একটি নতুন কে টাইপ ফেরি চালু করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া লাহারহাট-ভেদুরিয়া পয়েন্টে ৬টি ইউটিলিটি ফেরির প্রয়োজন। এ রুটে গড়ে ৮৫টি যানবাহন চলাচল করে থাকে।
বিআইডব্লিউটিসি’র অপর এক জরীপে বলা হয়েছে, যাত্রীদের এ দুরাবস্থা লাগবের জন্য চলতি বছরে মধ্যে এ সমস্ত ফেরি রুটে কমপক্ষে ৩৫টি ফেরির প্রয়োজন আছে। কিন্তু আগামী ২০১৩ সালের আগে নতুন কোন ফেরি পাচ্ছে না এ অঞ্চলবাসী।
সূত্র অনুযায়ী দেশের নৌপথে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সর্ব শেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৫টি রুটের জন্য ১০টি নতুন ফেরি ও ৫টি পন্টুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত ১০টি ফেরির এর মধ্যে রয়েছে একটি রো-রো, ফেরি, দু’টি কে টাইপ ও সাতটি ইউটিলিটি ফেরি। ৫টি পন্টুনের মধ্যে রয়েছে একটি রো-রো পন্টুন ও চারটি ইউটিলিটি পন্টুন। আগামী ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে ২টি ফেরির কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এবং বাকিগুলো দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কাজের ধীর গতির কারনে ২০১৩ সালেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা বির্তক।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফেনে আলাপকালে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে নতুন ১০ ফেরি নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোট ৫০টি ফেরির মাধ্যমে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত সুষ্ঠু ফেরী সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব হবে বলে।