হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আগরতলা

নিজস্ব সংবাদতাতা ॥ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা এখন সুসজ্জ্বিত। রঙিন তোরণ আর বর্ণিল ফেস্টুনে সয়লাব। কারণ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ জানুয়ারি বুধবার দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগরতলা আসছেন। আর তাঁকে স্বাগত জানাতেই এই ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার।

স্বার্বভোমত্বের কারণে আগরতলা বা ত্রিপুরা রাজ্য বাংলাদেশের থেকে পৃথক হলেও দুদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলে উভয় অংশের জনগণ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির কারণে বৃহত্তর কুমিল্লা ও আগরতলার জনগণ পৃথক দুটি রাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তাদের আত্মার বন্ধন কখনো ছিন্ন হয়নি।

এছাড়া ৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের অসংখ্য বাংলাদেশী বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার দেশ ছেড়ে আগরতলা ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তুলেছে। কিন্তু দেশত্যাগ করলেও তারাও ভুলতে পারেনি প্রিয় মাতৃভূমিকে। তাই যখন সেই মাতৃভূমি তথা বাংলাদেশের সরকার-প্রধান আসছেন তখন সরকারি উদ্যোগে ব্যাপক আয়োজনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মাঝেও দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ।
 
এদিকে, শেখ হাসিনার এই সফরকে কেন্দ্র করে আগরতলাসহ ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকাতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের চেক পোস্টগুলোতেও নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোটা রাজধানী জুড়ে তৈরি করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়।

১১ জানুয়ারি বুধবার শেখ হাসিনা দুই দিনের সফরে আগরতলা আসছেন। এদিন ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দিল্লি থেকে আগরতলা আসবেন। বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী ১২ জানুয়ারি ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এতে তাকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেয়া হবে। এদিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে আগরতলাজুড়ে সাজসাজ রব পড়ে গেছে। রাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। এইসব তোরণে শোভা পাচ্ছে শেখ হাসিনার ছবি। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় টানানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন। এর মধ্যে গত সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর থেকে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গাড়ীর মহড়া দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আগরতলাজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর)। রাজ্য পুলিশকেও নিরাপত্তার বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে সতর্ক রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মানুষের কাছে আগরতলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে আগতলার নাম গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে। পাকিস্তান শাসনামলে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে। তাঁর মুক্তির দাবিতে বাঙালির দুর্বার আন্দোলনে নতি স্বীকার করে শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় আইয়ুব সরকার। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এই ঘটনার পরই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন।

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলাসহ ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন ত্রিপুরা সরকার আপন করে কোলে টেনে নিয়েছিল শরনার্থী বাঙালিদের। দীর্ঘ ৯ মাস আপন মমতায় অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও এখানকার সাধারণ জনগণ। তাই আগরতলা তথা ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
:আজকের বাংলা