‘ক্যাম্পেইন ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের বিশ্ব ভ্রমন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী ৫ বাংলাদেশী

সাইদ মেমন, বরিশাল ॥ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে ৩৩টি দেশ ভ্রমন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত ব্যবসায়ী ৫ বাংলাদেশী। ‘ক্যাম্পেইন ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের বিশ্ব ভ্রমনের তাদের শ্লোগান ছিলো “উই ডিমান্ড সেইফ রোড” বা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেদে “দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ এ্যাসোসিয়েশন” এর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে এই ভ্রমনে নেমে পড়েন এই পাঁচ ব্যবসায়ী বন্ধু।

বিশ্ব ভ্রমন করা এই পাঁচ ব্যবসায়ী বন্ধু হলেন দলনেতা মিজানুর রহমান ওয়াহেদ ওরফে সোহেল, মুহিদ মোল্লা, আজাদ খান, ইলিয়াস উদ্দিন ও মোহাম্মদ বেল্লাল হাওলাদার।
 
এর মধ্যে দল নেতা মিজানুর রহমান ওয়াহেদ ওরফে সোহেল হলেন বরিশাল নগরীর সন্তান। নগরীর ব্রাউন রোডের বাসিন্দা সাবেক কমিশনার মাসুদুর রহমানের ছোট ভাই দলনেতা সোহেল। গতক সোমবার সন্ধ্যায় সোহেল সঙ্গীদের নিয়ে নিজ শহর বরিশালে এসেছেন। এ প্রতিনিধির সাথে ভ্রমনের লক্ষ্যে উদ্দেশ্যে, সুখকর ও কষ্টদায়ক স্মৃতির কথা বলেছেন। দলনেতা সোহেলের বর্ণনা অনুযায়ী সফরে কিছু কথা তুলে ধরা হলো।

বিশ্ব ভ্রমনে বের হওয়ার কারণ
গত ১১ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন সোহেল। সেই দেশের সফল ব্যবসায়ী বনে গিয়ে নাগরিকত্বও নিয়েছেন। কিন্তু মনে প্রাণে খাটি বাঙালী। দেশের জন্য টানও রয়েছে অসীম। দেশ প্রেমিক এই ব্যক্তিকে আফ্রিকায় প্রায়ই ভারতীয় হিসেবে চিহ্নিত হতে হতো। কারণ ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি দেশ রয়েছে অনেকেই জানে না। এই কারণে কষ্টবোধ হতো। সেই কষ্টবোধ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে ভ্রমনে বের হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন। এই পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেদে গড়ে তোলেন “দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ এ্যাসোসিয়েশন”। সেই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অপর ৪ ব্যবসায়ী বন্ধু চুয়াডাঙ্গার মুহিদ মোল্লা, নোয়াখালীর ইলিয়াস উদ্দিন, ঝিনাইদহের মোহাম্মদ বেল্লাল হাওলাদার ও মাদারীপুরের আজাদ খান ভ্রমনে বের হওয়ার জন্য সম্মতি দেন। ২০০৯ সালে সংগঠনটির ব্যানারে ভ্রমনে বের হওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন।

দেশই বাঁধা
যেই দেশের জন্য এই ভ্রমন, সেই দেশেরই পর্যটন মন্ত্রণালয় কোন সহায়তাই করেনি বলে অভিযোগ করেন সোহেল। দেশের পর্যটন এলাকাসমূহসহ উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় এলাকার ভিডিও ও পোষ্টার চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় পযটন মন্ত্রনালয়ে। তারা কোনভাবেই সহায়তা না করায় ইন্টারনেট থেকে যা পাওয়া গেছে তাই নিয়ে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
 
সহযোগিতা
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত তাদের ভ্রমনে বের হওয়ার সকল সহযোগিতা করেন। এছাড়াও সেই দেশে ভ্রমন করা সকল দেশের রাষ্ট্রদূতরা অকৃত্রিমভাবে সহায়তা করেছেন বলেন সোহেল। এমনকি তাদের ভ্রমনে বের হওয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দক্ষিন আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ২৫ দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
 
ভ্রমন শুরু
অবশেষে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু করেন তাদের বিশ্ব ভ্রমন। দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেদ থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেন।

যে সব দেশ ভ্রমন করেন
পোর্ট এলিজাবেদ থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে যান জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে মোজাম্বিক। এরপর একে একে মালয়, তানজানিয়া, কেনিয়া, ইথিউপিয়া, সুদান, সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, সিরিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, ইতালী, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড,  বেলজিয়াম, হল্যান্ড, জার্মানী, অষ্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারত। গত ২৩ ডিসেম্বর তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন। এর মধ্যে জর্ডান ও তুরস্ক দুইবার যেতে হয়েছে।

ভ্রমনে ব্যয়
এই দেশ সমূহে ভ্রমন করতে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রবেশের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত এই টাকা ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন সোহেল।

দেশের পতাকা
বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে এসেছেন ৫২টি ইমিগ্রেশন অফিসে। সাথে টাঙ্গিয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কুয়াকাটা ও কক্সবাজারের দৃশ্য সম্বলিত ছবি টানাতে ভূল করেননি তারা। কারণ পর্যটকরা দেখে আসবেন বাংলাদেশ। পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পাবে বাংলাদেশ এই কারনে পতাকা আর দৃশ্য টানানো হয়েছে বলেন সোহেল।
 
সুখকর স্মৃতি
সকল দেশেই সহযোগিতা পেয়েছেন। কোথাও কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের।
নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে পেয়েছেন বেশি আতিথেয়তা। বিশেষ করে পুলিশের সহযোগিতার কথা স্মরণ রাখার মতো বললেন সোহেল। ভারতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানের পুলিশ সার্বক্ষনিক তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। পাকিস্তানীরা ভাই বলে সম্বোধন করে পেট পুড়ে খাইয়েছে। থাকতে দিয়েছেন। ঠকবাজ দোকানীর তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত নেয়া টাকা পুলিশ উঠিয়েছে। পুলিশ কর্তা টাকা না পেলেও নিজের পকেট থেকে অতিরিক্ত নেয়া টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানী পুলিশের সেবার জন্য এই ভ্রমনকারীরা ধন্যবাদ চিঠি পাঠাবেন বলে জানান। ভারতের কোন সড়কে টোল নেয়া হয়নি বলে জানিয়ে সোহেল বলেন, এতে অন্তত ৪/৫ হাজার রুপী বেচে গেছে। সেই দেশের মানুষজনও তাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছে।

দুঃখকর স্মৃতি
গ্রীসে মার্কেটে গিয়ে ফিরে দেখেন গাড়ির জানালার কাচ ভেঙ্গে কম্পিউটারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। কেনিয়ার “রোড অফ হেল” বা ‘নরকের রাস্তা’ পার হওয়া কষ্টকর ছিলো। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে দেশের বেনাপোলের কাষ্টমস কর্মকর্তা।

দেশে কোন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো ভ্রমন করা গাড়িটি। কিন্তু কাষ্টমস কর্মকর্তা মাগরুব হোসেনের কারণে তা পারা গেলো না বলেন সোহেল। মাগরুব হোসেন তাদের কোন ধরনের সহায়তাতো করেনি উল্টো তার জন্য তিনদিন বেনাপোলে থাকতে হয়েছে। তার ব্যবহার এতই নিম্নমানের ছিলো যে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হয়েছে বলেন সোহেল। কোন দেশেই গাড়ি প্রবেশের জন্য টাকা দিতে হয়নি। তা জানানো পরেও এই মাগরুব হোসেন গাড়ীর জন্য তিন লাখ টাকা জমা দিতে বাধ্য করেছেন। গাড়ি নিয়ে দেশ থেকে বের না হলে এই তিন লাখ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। এই কারণে গাড়িটি কাউকে দেয়া যাবে না। কোন শিপে ফেরত নেয়া হবে জানিয়ে সোহেল বলেন, দেশে একমাস থাকার পরিকল্পনা রয়েছে।