প্যারাসিটামল প্লাস, সাবধান!!!

তৌফিক মারুফ, কালেরকন্ঠ ॥ নাপা এক্সট্রা, এইস প্লাস, পাইরা প্লাস, রেনোভা প্লাস, টেমপল প্লাস, জেরিন এক্সপি, পল প্লাস, ফিবি প্লাস, হেপা প্লাস, ফাস্ট প্লাস_ব্যথার জন্য বড়ি যারা খান তাদের কাছে অতি পরিচিত কিছু নাম। তবে ব্যবহারকারী জানে না, বেদনা তাড়াতে গিয়ে নিজের অজান্তে কিডনি ও লিভারকে ঠেলে দিচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে।

ওষুধ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, দেশের কমপক্ষে ৬০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এখন প্যারাসিটামল বিপি ৫০০ মিলিগ্রাম এবং ক্যাফিনো ইউএসপি ৬৫ মিলিগ্রাম সমন্বিত ট্যাবলেট তৈরি করছে_যদিও একেকটির দাম একেক রকম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই ৩২৫ মিলিগ্রামের বেশি প্যারাসিটামল শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তার সঙ্গে ক্যাফিনো যোগ করে প্যারাসিটামলকে করে তোলা হয়েছে আরো বেশি বিপজ্জনক।

রিকশাচালক মোবারক আলী গ্রিন রোডের এক ফার্মেসির সামনে রিকশা থামিয়ে ফার্মেসিতে ঢুকে বললেন, ‘ভাই গায়ে জ্বর জ্বর লাগতাছে। মাথাডা ব্যথায় ফাইট্টা যায়। কোনো ওষুধ দেন।’ বিক্রেতা এক পাতা ‘নাপা’ বের করে হাতে দিতে গিয়েও কী মনে করে ফেরত দিলেন। দিলেন এক্সেল প্লাস (excel plus)। মোবারক এবার কিছুটা বিস্মিত’আগে তো জ্বর অইলে প্যারাসিটামল খাইতাম, হেই ট্যাবলেট নাই!’ বিক্রেতা বলেন, ‘বেশি বুঝার দরকার নাই, যেটা দিলাম নিয়ে যান, এগুলো সবই প্যারাসিটামল। তবে ‘প্লাস’টা নতুন, এগুলো অনেক বেশি কার্যকর, তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে।’

কিছুক্ষণ পরই পাশের আরেকটি ফার্মেসিতে দেখা যায়, চিকিৎসকের কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এক স্কুলছাত্র এসে প্যারাসিটামল চাইলে বিক্রেতা তাকে ধরিয়ে দেন পাইরা প্লাস (pyra plus) নামের ট্যাবলেট।

‘এক্সেল প্লাস’ ট্যাবলেটটি হাতে নিয়ে দেখা যায় এটি বাংলাদেশের এসিআই লিমিটেডের তৈরি। ‘পাইরা প্লাস’ তৈরি করেছে রেনেটা লিমিটেড। এগুলো প্যারাসিটামল বিপি ৫০০ মিলিগ্রাম এবং ক্যাফিনো ইউএসপি ৬৫ মিলিগ্রাম সমন্বিত ট্যাবলেট। এরপর ওই ফার্মেসিসহ আরো বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায় সবখানেই আছে এই ‘প্লাস’ যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যারাসিটামল।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্যারাসিটামলের যথেচ্ছ ব্যবহার এমনিতেই নর্বনাশ ডেকে আনে মানুষের জন্য। ক্যাফিনো যুক্ত বা প্লাস ব্র্যান্ডের প্যারাসিটামল মানুষের কিডনির ও লিভারের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও আতঙ্কের বিষয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, এমনিতেই সাধারণ প্যারাসিটামল একটানা দীর্ঘদিন সেবনে কিডনি ও লিভারের সর্বনাশ ডেকে আনে। তার ওপরে এই প্যারাসিটামলের সঙ্গে ক্যাফিনো যুক্ত হলে আরো বেশি ক্ষতিকর কিডনির জন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, প্যারাসিটামলে লিভারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তবে এটা অল্পস্বল্প ব্যথানাশক হিসেবে বেশি কার্যকর হওয়ার ফলে এটাকে একেবারে নিষিদ্ধ করা বা বাদ দেওয়ার কথা বলা যায় না। প্যারাসিটামলসহ সব ওষুধই সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত। ক্যাফিনো যুক্ত প্যারাসিটামলে একই সঙ্গে কিডনি ও লিভার দুটোরই ক্ষতি করে। ক্যাফিনোর প্রভাবে অনেকেরই প্রসাব বেড়ে যায়, যেমন প্রভাব পড়ে কফি খাওয়ার পর।

প্রবীণ লিভার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান বলেন, কফিই হচ্ছে ক্যাফিনো। এটা লিভারের জন্য আলাদা করে ক্ষতিকর না হলেও প্যারাসিটামলের ডোজ বেশি হলে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই প্যারাসিটামল খেতে হবে সতর্ক থেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্যারাসিটামল প্লাস বা ক্যাফিনো যুক্ত প্যারাসিটামল অবশ্যই ক্ষতির। দেশে যখন এটা প্রথম চালু হয়, তখনই আমরা এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এতে করে লিভার ও কিডনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্যারাসিটামলের সঙ্গে অন্য কোনো ওষুধ যুক্ত করলেও তা সরাসরি দ্রুত লিভার ও কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া আমাদের দেশে প্যারাসিটামলের যথেচ্ছ ব্যবহারও এই ক্ষতির মাত্রাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।’

এদিকে পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে এই যুক্ত প্যারাসিটামল নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনও একই নির্দেশনা জারি করেছে। ভারতের ওষুধ প্রশাসন থেকে অন্য উপকরণযুক্ত প্যারাসিটামলকে সর্বোচ্চ ৩২৫ মিলিগ্রামের (প্রতিটি) মধ্যে তৈরির জন্য বাধ্যবাধকতা দিয়েছে।

বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে যকৃতের অসুখ ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার, ফ্যাটি লিভার, ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসজনিত লিভার রোগ, পরজীবীজনিত লিভার রোগসহ লিভারের অন্যান্য রোগে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি লোক আক্রান্ত। এর মধ্যে কেবল দেড় কোটি লোক লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে ও আট লাখ লোক হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময় হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। পাশাপাশি শহর কিংবা গ্রামে এ রোগটি ভয়ানক দ্রুততায় বাড়ছে। এ রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে দেশে আধুনিক নানান সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তা ঠিকভাবে কার্যকর নয়।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে কিডনিজনিত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার লোকের কিডনি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছর আগে এর হার ছিল অর্ধেক। দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ তাদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা তার উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না, তা জানে না বলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। লক্ষণ দেখা দিলেই ছোটেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এরই মধ্যে আক্রান্তদের প্রায় ৭০ ভাগের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তখন তাদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস কিংবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ দুটোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, কেবল প্যারাসিটামলই নয়, আরো অনেক ওষুধই সরাসরি কিডনি ও লিভারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। তাই যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি ওষুধ লেখার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্যারাসিটামলের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বেশি।

দেশের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্যারাসিটামল প্লাস সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকা দরকার। একইভাবে চিকিৎসকদেরও উচিত প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা। কারণ এর ডোজ বেশি হলে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে মাত্রা কম থাকলে খুব একটা সমস্যা হয় না।

আন্তর্জাতিক উদারাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র_আইসিডিডিআর-বির ক্রোনিক ডিজিজ বিভাগের প্রধান ড. দেওয়ান আলম বলেন, চিকিৎসকদের মধ্যে বেশির ভাগই এখন রোগীর তাৎক্ষণিক সুস্থতা বা উপশম দেওয়ার উপায় খোঁজেন। এ জন্য যে ওষুধ দ্রুত কার্যকর তাই লিখে দেন। অনেক চিকিৎসকই ওই ওষুধের দূরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। এ নিয়ে গবেষণা কাজও খুব কম।

ড. দেওয়ান আলম আরো বলেন, প্যারাসিটামলের সঙ্গে ক্যাফিনো যুক্ত বা অন্য কোনো কিছু যোগ করলে তা কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর প্রভাবেব কথা সব চিকিৎসকেরই জানা থাকা উচিত।

ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতের মহা ওষুধ নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ৩২৫ মিলিগ্রামের বেশি ক্ষমতার কোনো সমন্বিত প্যারাসিটামল তৈরির জন্য আর কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স না দেওয়া পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন অধিক প্যারাসিটামল সেবন লিভার নষ্টের মারাত্মক কারণ হতে পারে’ মর্মে লেখা ছাপাতে নির্দেশ জারির বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন থেকেও ৩২৫ মিলিগ্রামের বেশি কোনো সমন্বিত প্যারাসিটামল তৈরি না করার নোটিশ জারি হয়েছে বলেও ওয়েবসাইটের আরেক সূত্র থেকে জানা গেছে।

আমেরিকা ও ভারতের পদক্ষেপ সম্পর্কে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ও অধ্যাপক সাইদুর রহমানের মতামত প্রায় একই ধরনের। তাঁরা বলেন, ‘সাধারণ প্যারাসিটামল ৩২৫ মিলিগ্রাম হলে কোনো কাজ করবে না। এ ক্ষেত্রে ৫০০ বা ক্ষেত্রবিশেষ ১০০০ মিলিগ্রামের দরকার হয় সারা বিশ্বেই এমনটা চলে। তবে ক্যাফিনো যুক্ত প্যারাসিটামল রোধে আমেরিকা ও ভারত এ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেই।’

এ ছাড়া সম্প্রতি ব্রিটেনের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা ব্রিটিশ জার্নাল অব ফার্মাকোলজিতে প্যারাসিটামলের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলেছেন, প্যারাসিটামল মানুষের লিভারের ওপর প্রভাব ফেলে। তার ওপর মাত্রা ঠিক না থাকলে এটা মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। তাই প্যারাসিটামল সেবনে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।

ওষুধ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ গেজেটের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের (অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস) সর্বশেষ তালিকা অনুসারে ২০৯টি ওষুধের মধ্যে ১৩৬ নম্বরে রয়েছে প্যারাসিটামলের নাম। ওর‌্যাল, লিক্যুইড, সাপোজিটরি ও ট্যাবলেট ক্যাটাগরির এ ওষুধটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও প্রচলিত। কমপক্ষে ১১০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই প্যারাসিটামলের কোনো না কোনো ক্যাটাগরির ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে। এর মধ্যে প্রথমে হাতে গোনা দু-একটি প্রতিষ্ঠান প্যারাসিটামল প্লাস তৈরি শুরু করলেও বছর দুইয়ের মধ্যে এ সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের অন্যতম পরামর্শক ডা. আবদুল মান্নান বাঙ্গালী বলেন, একদিকে যেমন প্যারাসিটামল প্লাস মানুষের কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকারক বলে আলোচিত হচ্ছে, অন্যদিকে দামের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে একটি সাধারণ ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট যেখানে মাত্র ৫০-৬০ পয়সায় পাওয়া যেত, সেখানে এখন মাত্র ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিনোযুক্ত ওই প্যারাসিটামলের প্রতিটির দাম নেওয়া হচ্ছে দেড় টাকা বা তারও বেশি। সরকারের উচিত এ প্রবণতা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া।

এদিকে ওষুধের লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষ হিসেবে ওষুধ অধিদপ্তরের পক্ষে উপপরিচালক সেলিম বারামী বলেন, ‘অন্যসব ওষুধের মতোই ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষেই আমরা প্যারাসিটামল প্লাস আইটেমের অনুমোদন দিয়েছি। এখন যদি ওই বোর্ড এটা বাতিল বা নিষিদ্ধ কিংবা সংশোধনের কথা বলে, আমরা তখন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’

বাংলাদেশ ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি ও স্বাস্থ্য সচিব মো. হুমায়ন কবীর বলেন, ‘প্যারাসিটামল ও প্যারাসিটামল প্লাসের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আগে কিছুই বলেনি। তবে এখনো যদি এ রকম কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলেন, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি বা মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করার জন্যই নতুন কৌশল হিসেবে এই ক্ষতিকর প্যারাসিটামল প্লাস চালু করেছে। চিকিৎসকরাও এখন ওষুধ কম্পানির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে এই প্লাস প্যারাসিটামল সেবনেও পরামর্শ দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফার্মাসিউটিক্যালস প্রফেশনালসের মহাসচিব জাভেদ ইকবাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিআইয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করেই ভারতে কম্বাইন্ড প্যারাসিটামল ৩২৫ মিলিগ্রামের বেশি তৈরি না করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই এখন বাংলাদেশেও এ বিষয়টি নিয়ে সরকার, ওষুধ অধিদপ্তর, ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কমিটি ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। কারণ বেশি মাত্রায় প্যারাসিটামল কিডনি ও লিভারের যেমন ক্ষতি করে, তেমনি ক্যাফিনো স্নায়ুর ওপর চাপ তৈরি করে, পাশাপাশি ঘুম নষ্ট করে।

সংবাদ : কালেরকন্ঠ ওয়েব