চিনি-ময়দা ও ক্যামিক্যাল দিয়ে বানানো হচ্ছে রসালো গুড়

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ চিনি-ময়দা ও চিটাগুড় দিয়ে অসাস্থ্যকর পরিবেশে বিষাক্ত ক্যামিক্যাল মিশিয়ে বাহারি রঙ্গের খেজুরের গুড় তৈরি করে বরিশালের গৌরনদীসহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে দেদারছে বিক্রি করছে একটি অসাধু গুড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে বাহারি রঙ্গের গুড় তৈরির অজানা অসংখ্য তথ্য। ভ্রাম্যমান আদালত গত ৪ জানুয়ারি টরকী বন্দরের অভিযান চালিয়ে গুড় ব্যবসায়ী অরুন সাহা ও দিলীপ সাহার দুটি গুড়ের কারখানায় তৈরী ও মজুদ করা ২০ মন ভেজাল গুড় জব্দ করেছে। স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক এসব ভেজাল পাটালী গুড় তৈরীর অপরাধে ওই দুই গুড় ব্যবসায়ীর প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে মোট একলাখ টাকা জরিমানাও করেছে। তার পরেও থেকে থাকেনি অসাধু গুড় ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক চিটা গুড়, চিনি ও রং করার জন্য বিষাক্ত ক্যামিক্যাল হাইড্রোজ ব্যবহার করে তৈরী ভেজাল পাটালী গুড় খেয়ে মানব দেহের কিডনী আর লিভারজনিত রোগের সংক্রমন ঘটে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ভেজাল গুড় তৈরির মালিক পক্ষের দাবি চিনি ও বিষাক্ত ক্যামিক্যাল হাইড্রোজ ব্যবহার ছাড়া গুড় তৈরি হয় না। এসব ভেজাল গুড় খেয়ে অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের বেকীনগরের শাহ এন্টারপ্রাইজ গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, সম্পুর্ণ অসাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে কারিগররা গুড় তৈরি করছেন। কারখানার মধ্যের দুটি হাউজের মধ্যে রয়েছে নষ্ট দুর্গন্ধযুক্ত ও চিটাগুড়ের স্তুপ। কারখানায় কর্মরত গুড় তৈরির কারিগর রাজশাহী সদরের কাটাখালী গ্রামের রনজিত সরকার জানান, কারখার মধ্যে বসে ৬০ কেজি চিনি, ১৫ কেজি ময়দা, ১০ কেজি নষ্ট দুগর্ন্ধযুক্ত (ঝোলা) গুড়, ১০ কেজি চিটা গুড় ও ৫ কেজি খেজুরের পাটালী গুড় মিশিয়ে বিশাল আকৃতির কড়াইতে (স্থানীয় ভাষায় তাফাল) জাল দেয়া হয়। শেষে ১০০ কেজির ভেজাল গুড়ের মধ্যে ৫’শ গ্রাম বিষাক্ত ক্যামিক্যাল হাইড্রোজ ও সালফেট মিশিয়ে বাহারি রং করে খেজুরের পাটালী গুড় তৈরি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির মূল্য পাইকারী হিসেবে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা। আর গুড় প্রতিকেজি পাইকারী বিক্রি করা হয় ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায়। অধিক মুনাফার আসায় শাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক দিলীপ শাহ ও অরুন শাহ দীর্ঘদিন যাবত দাপটের সাথে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে এ গুড় কারখানা থেকে ২’শ থেকে আড়াই’শ মন গুড় গৌরনদীসহ পাশ্ববর্তী কালকিনি, বানারীপাড়া, স্বরুপকাঠী, কোটালীপাড়া, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদীসহ বিভিন্ন উপজেলার মোকামে একটি অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। উপজেলার পশ্চিম বার্থী গ্রামের ফিরোজ বেপারী জানান, স্থানীয় বাজার থেকে তিনি দুই কেজি খেজুরের পাটালী গুড় ক্রয় করেছিলেন। ওই গুড়ের তৈরি পিঠা খেয়ে তাদের পরিবারের ৮ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেসহ গুরুতর চারজনকে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইভাবে জানালেন, সুন্দরদী গ্রামের সাকিল মাহমুদ, রমজানপুর গ্রামের ওমর আলী সরদারসহ অনেকে।

গত ৪ জানুয়ারি টরকী বন্দরে বরিশালের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তানিয়া আফরোজের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি ভ্রাম্যমান আদালত ভেজাল বিরোধী অভিযান চালানো হয়। এসময় ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আব্দুর রাশেদ খান, বরিশাল র‌্যাব-৮ এর উপপরিদর্শক মোঃ মহিদুল ইসলাম, জেলা ভেজাল বিরোধী মনিটরিং কর্মকর্তা জি.এম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ কনজুমার রাইট সোসাইটির বিভাগীয় সম্পাদক মাইনুদ্দিন আহম্মেদ মামুন উপস্থিত ছিলেন। এসময় আদালত টরকী বন্দরের গুড় ব্যবসায়ী অরুন সাহা ও দিলীপ সাহার দুটি গুড়ের কারখানায় তৈরী ও মজুদ করা ২০ মন ভেজাল গুড় জব্দ করে। স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক এসব ভেজাল পাটালী গুড় তৈরীর অপরাধে ওই দুই গুড় ব্যবসায়ীর প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে মোট একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিষাক্ত ক্যামিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল গুর তৈরি করা প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রবীন্দ্র নাথ গাইন রবীন বলেন, বিষাক্ত ক্যামিক্যাল সালফেটে শারিরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যা মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।