অন্তত একটা কোরবানি দিন প্রধানমন্ত্রী

ফজলুল বারী, সিডনি ॥ সীমান্তে বিএসএফ’র নিষ্ঠুরতার যে ভিডিও চিত্রটি এনডিটিভির কল্যাণে আমরা দেখলাম তা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার মন্ত্রিসভার সদস্যের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে তা জানার ইচছা দেশবাসীর।এ নিয়ে সরকার কী কী করবে বা আদৌ করবে কিনা তা দেখার আগেই আমরা ওই নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ’এর ৮ সদস্যকে বহিষ্কারের খবর দেখেছি(এসব নিয়মিত বাহিনীতে কী এভাবে বহিষ্কার না ক্লোজড, বিচার-কোর্ট মার্শাল হয়? কনফিউজড!)।

সে যাই হোক এভাবেতো নজিরবিহীন একটি নিষ্ঠুরতার ঘটনার শেষ অথবা মাটিচাপা হয়ে যাবে না! ফালানীর ঘটনার পর এ ঘটনার রেশও অনেক দূর যাবে। মহাজোট সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা-কলঙ্কের নজির হয়ে থাকবে এ ঘটনা। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তার একান্ত বিশ্বস্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি, উপদেষ্টা গওহর রিজভির কী গতি করেন তা দেখার অপেক্ষা সবার। এই দুইজন মিলে গত তিন বছরে দেশের পররাষ্ট্র কূটনীতিকে নামাতে নামাতে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে এখন আর বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে পাখির মতো গুলি করে তো মারছেই, রীতিমতো দিগম্বর করে সাপের মতো করে পেটাচ্ছে! এর দায়দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দীপু মনি, গওহর রিজভিকে ওখান থেকে দ্রুত সরাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি তার জন্য ফরজ এই কোরবানির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন, তাহলে কিন্তু এসব কিছুর সমুদয় দায়দায়িত্ব তার একাউন্টেই চলে যাবে। এখন পর্যন্ত দেশের মানুষ এসব নিয়ে এখনও সরাসরি তাকে দায়ী করে কিছু বলছে না।

তিস্তা চুক্তির ফুটো বেলুনের গল্প আজকাল আর শোনা যায় না। মনমোহনের সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা হিল্লি-দিল্লি করতে করতে এতই পরিশ্রম করেছেন যে, সে সুবাদে আমাদের দেশের বরাতে অশ্বডিম্বটি ভালোই এনেছিলেন! সেই নিস্ফলা সফরের পর, ‘এইতো মাত্র তিনমাস, আর কিছুদিন সবুর করো রসুন বু্নেছি’ বলে তারা দেশের মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেন’। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ইলিশ-জামদানির প্যাকেট নিয়ে তোষামোদি করতে চলে যান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অফিসে! এর রেজাল্ট হচ্ছে সর্বশেষ মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ‘দয়া করে’ দেবার মতো পানি তিস্তায় নেই! এরপর আবার গাঁজাখুরি বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ইজ অন দ্য বর্ডার অব পাকিস্তান’! আশ্চর্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসবের প্রতিবাদ পর্যন্ত করলো না!

বিএসএফ’এর সীমান্ত সন্ত্রাসের সীমা-পরিসীমা যে এখন মানুষের স্বাভাবিক ধারণাকেও হার মানাচ্ছে, তা কী এসব নতজানু নীতির কুফল না? ভারত অবশ্যই আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ বন্ধুত্বের আমাদের দরকার আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কী সঠিক পথে আছে বাংলাদেশ? মমতা পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী। তিনি বোঝেন পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ। এবং তিনি ভারতীয়। সেভাবেই কাজ-রিঅ্যাক্ট করেন। আমরা কী আমাদের স্বার্থ দেখব না? কিন্তু আমরা যে আমাদের স্বার্থ দেখছি তার নজির কই? তা কী ভারতীয় গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে তিতাসের বুক চিরে তৈরি করে দেওয়া নদী হন্তারক বাঁধ? আশ্চর্য! প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পোর্টফলিও ব্যবহার করে গহওর রিজভি, মশিউর রহমানরা আদতে ভারতীয় স্বার্থের দেখভালে নিয়োজিত বলে বাজারে যে অভিযোগটি আছে এর জবাব কী?

এনডিটিভির নিউজক্লিপিংটা যতবার দেখি গা কাঁটা দিয়ে ওঠে! এত খাতির-বন্ধুত্বের(!) দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর কতিপয় সদস্য আমাদের সঙ্গে এমন উন্মত্ত আচরণ করতে পারে! বাংলাদেশি সেই তরুণকে সাপের মতো করে পিটিয়ে মাটিতে শুইয়ে বুকে পা দিয়েছে বিএসএফ নামধারী সেই জানোয়ারগুলা! এরপর তাকে দিগম্বর করে বেঁধে পিটিয়েছে! এ যেন তেমন একটা যুবককে না, তারা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে বাংলাদেশের হৃদয়! বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের গায়ে এসে লেগেছে সে আঘাত! মোদ্দা কথা, হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীকে হার মানানো ইন্ডিয়ার বিএসএফ নামধারী এই নিপীড়ক বাহিনীর ক্যাডাররা বর্ডারে শুধু ভিডিও’র বাংলাদেশি একজনকেই এমন ব্রুটালি পেটায়নি, এভাবে মাটিতে শুইয়ে পিটিয়েছে গোটা বাংলাদেশের মানুষকে। বিন্দুমাত্র হায়া-শরম থাকলে এ ঘটনায় সবার আগে পদত্যাগ করতেন দীপুমনি। কিন্তু সে আশা করেও লাভ নেই। এখন দেখি শেখ হাসিনা কী করেন। বাংলাদেশ কিভাবে মিনমিনে স্টাইলের প্রতিবাদ করে। নিষ্ঠুরতম ঘটনার জন্য বিএসএফ’র ৮ সদস্যের কথিত বহিষ্কার না, মনমোহন সিং তথা ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক দুখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে। এর প্রতিবাদে যদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেউ এমন একটি নিষ্ঠুর রাষ্ট্রজাত ভারতীয় গরু বাংলাদেশের মুসলমানদের খাওয়া হারাম ঘোষণা করে একটা আওয়াজ দিতেন, ব্রুটালদের দেশের পণ্য বর্জনের আওয়াজ দিতেন দেশবাসীর উদ্দেশে, কাজে লাগত। জেগে ওঠো, প্রতিবাদ করো বাংলাদেশ—জাগো বাহে কোনঠে সবাই…

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক