শর্ত সাপেক্ষে চলতি অধিবেশনে সংসদে ফিরতে চায় বিএনপি

খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনেই ফিরতে চায় বিএনপি। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি তাদের কিছু শর্ত রয়েছে। শর্ত পূরণ হলে তারা এ অধিবেশনেই যোগ দিতে পারে। এ ব্যাপারে যেকোনো সময় বিরোধী সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে অধিবেশনের যেকোনো কার্যদিবসে যোগ দিতে পারে বিএনপিসহ বিরোধী দল। ২৭ কার্যদিবসের এ অধিবেশন শেষ হবে আগামী ৮মার্চ।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার যদি নিজেদের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিল জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরপর উত্থাপন করে এবং বিরোধী দলকে কথা বলার সুযোগ দেয় তাহলে তারা চলতি অধিবেশনেই যোগদান করবে।

১২তম অধিবেশনে বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আব্দুল হামিদ এডভোকেট বলেন, বিএনপি সংসদে আসার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি তুলেছে। তারা এ বিষয়ে একটি বিল আনারও দাবি তুলেছে। কিন্তু তারা তো চাইলেই বিল আনতে পারে। তিনি বলেন, বিলটি সংসদে সাবমিট (উত্থাপন) করুক। এরপরে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সরকারি দল সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত একটি বিল এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। বিরোধী দল এ বিলের সঙ্গে একমত না। এটা স্বাভাবিক। তারা (বিরোধী দল) একটি বিল এনে আলোচনা করুক। বিরোধী দলকে সংসদে ফেরার আহ্বান জানিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, সবসময়ই আমি একটি কথা বলি তারা সংসদে এলে সংসদের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়। তারা এলে আমিও খুশি হই।

গত রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংসদে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সংসদে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি সংসদীয় দল নির্ধারণ করবে।

বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক গতকাল মঙ্গলবার রাতে জানান, এখনো সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে সংসদে যদি জনগণের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে বিএনপি সংসদ অধিবেশনে যোগদান করবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি নিজেদের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরপর উত্থাপন করে তাহলেও বিএনপি সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই যোগদান করবে।

তিনি বলেন, সীমান্তে ফেলানীর লাশ নিয়ে সংসদে নোটিশ দিলে আলোচনা করতে দেয়া হয়নি। একইভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কাকারির ঘটনায় কথা বলতে দেয়া হয়নি। সরকার যদি এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেয়ার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে বিএনপি জনগণের কথা বলার জন্য সংসদে যাবে।

সংসদ সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার গত সোমবার রাতে ভোরের কাগজকে জানান, আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করিনি, সংসদে যাবনা তাও বলিনি। যেহেতু এ সংসদ কার্যকর নয়, সংসদে নিন্ম পর্যায়ের রুচি বিবর্জিত কথা বলা হয়, যে সংসদে সাংবাদিকদের জারজ সন্তান বলা হয়, কোনো সাংবাদিকদের এর প্রতিবাদ করতে দেখিনি। সে সংসদে যাওয়া থেকে আমরা বিরত রয়েছি। পরিবেশ তৈরি হলেই আমরা সংসদে যাব।

তিনি বলেন, আমরা প্রায় সাড়ে ৬শত মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছি এগুলোর একটিও আলোচনা হয়নি। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা যেটাকে মাছের বাজার বলেন, স্পীকারকে বলেন, আড়তদার সেখানে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে আমরাই প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদে উপস্থিত থেকেছি। ইতিপূর্বে কোনো বিরোধীদল সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দেয়নি। তিনি এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্যের ও সমালোচনা করেন।

২৭ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে যোগ না দিলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহ বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সদস্যপদ বাতিল হচ্ছেনা। তবে ৩৭ কার্যদিবস চললে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের কয়েকজনের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যোতো। এমন প্রশ্নের জবাবে এমকে আনোয়ার বলেন, ৩৭ কার্যদিবস অনেক লম্বা সময়।

তিনি জানান, এ অধিবেশনে যোগ দেয়ার ব্যাপারে বিএনপির সংসদীয় দলের কোনো বৈঠক ইতিমধ্যে হয়নি, কোনো বৈঠক আহ্বান ও করা হয়নি। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে চলে। এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি সংসদে উত্থাপনের জন্য তারা সংসদে যোগ দেয়ার কথা ভাবছেন। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে এই দাবি তারা তুলেছেন। সংসদে তুললে বিএনপির এই দাবির বিষয়টি আরও যৌক্তিক হবে।

তিনি বলেন, যারা বলছেন, বিএনপি যথাস্থানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে না, তাদের মুখও বন্ধ হবে। ওই সদস্য বলেন, বিএনপি অনেক দিন অধিবেশনে যাচ্ছে না। এ জন্য একটি যৌক্তিক বিষয়ের ওপর আলোচনার জন্য সংসদে যাওয়ার কথা ভাবছে দলটি।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সর্বশেষ গত বছরের ২৪ মার্চ সংসদে উপস্থিত হয়েছিল।