আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন বাউল ও পালাগান আজ হারিয়ে যাচ্ছে

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া ॥ কালের বির্বতনে আবহমান গ্রাম বাংলার শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী বাউল ও পালাগান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। “দিন দুনিয়ার মালিক আল্লা করি তোমার বন্দনা, ওহে দয়াল রাব্বানা আমি তোমায় যেন ভুলিনা। শ্রী মধুসূধন বিপদভঞ্জন, ব্রজের বজ্রানন্দ তুমি নারায়ণ-আমি ভুজিব তোমার রাঙা চরণ”। একসময় বাউল শিল্পীদের কন্ঠে বাউল ও পালাগানের এসব নানাধরণের বন্দনার মাঝে মুখরিত হয়ে উঠত গ্রামবাংলা। শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পরপরই পাড়া-গাঁ মুখরিত হয়ে উঠত বাউল ও পালাগানে। সারারাত জেগে গ্রামের নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ উপভোগ করত সেই বাউল ও পালাগান। বর্তমানে মডার্ণ ব্যান্ডের যুগে পূর্বের সেসব বাউল ও পালাগান আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। যেকারনে অসংখ্য বাউল শিল্পীরা আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে কোন কোন এলাকায় প্রয়াত সাধকদের স্মরণে এখনো প্রচলিত রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাউল ও পালাগানের। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রখ্যাত বাউল শিল্পী বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের প্রয়াত খোরশেদ আলম বয়াতীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর বারপাইকা দুশুমী বাজারে আয়োজন করা হয় বাউল গানের। খোরশেদ আলম বয়াতী স্মৃতি সংসদ ও এলাকার বিশিষ্ট লোকজনের উদ্যোগে প্রয়াত শিল্পীর জন্মস্থানে অনুষ্ঠিত বাউল গানের সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকার প্রখ্যাত বাউল শিল্পীরা। দীর্ঘদিন পরে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাওয়া বাউল গান উপভোগ করার জন্য আগৈলঝাড়াসহ পাশ্ববর্তী গৌরনদী, উজিরপুর, গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া, কালকিনি উপজেলার হাজার-হাজার নারী ও পুরুষ দর্শক ভক্তের সমাগম ঘটে। পালাগানে বাউল শিল্পীদের মুসলিম ধর্ম ও হিন্দুধর্মের আবির্ভাবের ওপরে পালাগান পরিবেশন করা হয়। আবহমান বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বাউল ও পালাগানকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লি¬ষ্ট সকলের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এসব মরমী শিল্পীরা।