মোনাই পাগলের আশ্রম প্রাঙ্গনে দেশ-বিদেশের ভক্তদের মিলন মেলা

গৌরনদী ডটকম ॥ বরিশালের হিন্দু অধুষ্যিত ও বিলাঞ্চল বলেখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপার নামকস্থানে ভক্তদের অনুদানে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে দৃষ্টি নন্দন করা শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী মোনাই পাগলের আশ্রম। মোনাই পাগলের আবির্ভাব উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।

আশ্রমের পুরোহিত ঠাকুর দাস জানান, ভক্ত সংঘ সেবাশ্রমের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় মাঘী পূর্নিমার তিথিতে দু’দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মেলার উদ্বোধন করেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ঐতিহ্যবাহী মোনাই পাগলের আশ্রমের বাৎসরিক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে গৌরনদী-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের দু’পাশ্বসহ জোবারপার এলাকার দু’কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় বিভিন্ন ষ্টল বসেছে। আসতে শুরু করেছে দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্তবৃন্দরা। আশ্রমের ভক্ত অনিমেষ মন্ডলসহ একাধিক ভক্তরা জানান, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে রক্ষণা বেক্ষনের মাধ্যমে মোনাই পাগলের আশ্রমটি হতে পারে আগৈলঝাড়ার একটি পর্যটন কেন্দ্র।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জোবারপার গ্রামের হালদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল। তার পিতা গৌর মোহন হালদার। মোনাই পাগলের জন্ম হয়েছে কতসালে তা কেউ বলতে না পারলেও মৃত্যু হয়েছে বাংলা ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ। ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে মোনাই পাগলকে ঘিরে জানা গেছে অসংখ্য চমকপ্রদত্ত তথ্য। সবর্দা সত্য কথা বলা, ন্যায় পথে চলা ও পরোপকারী ছিল মোনাই পাগলের প্রধান বৈশিষ্ট। এ ছাড়াও অত্র অঞ্চলে হিন্দু ধর্মের ধর্ম প্রচারক হিসেবে তিনি (মোনাই পাগল) ব্যাপকখ্যাতি অর্জন করেন। সৃষ্টি কর্তার কাছ থেকে লাভ করা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন তিনি। চমকপ্রদ ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে, ওই এলাকার জনৈক নিলকান্ত ঘরামী তার জমাজমি নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। কোন ভাবেই তিনি বিপদ মুক্ত হতে পারছেন না। উপায়অন্তুর না পেয়ে নিলকান্ত মোনাই পাগলের কাছে গিয়ে তার বিপদের কথা খুলে বলেন। বিপদ মুক্ত হওয়ার জন্য মোনাই তাকে সাতদিন ধৈর্য্য ধরে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করার কথা বলেন। তার পরামর্শের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন নিলকান্ত। সাতদিন পর সে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হন। ওই এলাকার জনৈক সূর্যমনি মোনাই পাগলের দর্শন চান। সূর্যকে পরীক্ষা করার জন্য তিন বছর না খেয়ে জঙ্গলঘেরা পাহারে পাঠিয়ে দেয় মোনাই। এই ঘটনাটি অত্যন্ত চমকপ্রদ্যত্ত। সূর্য মনির চোখ বন্ধ করে মুখে একটি পাতা দিয়ে মোনাই তাকে নিক্ষেপ করেন। কিছুক্ষন পর সূর্য মনি চোখ খুলে দেখতে পান সে এক জঙ্গলঘেরা পাহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিন বছর পর হঠাৎ একদিন মোনাই পাগল সূর্য মনির সাথে জঙ্গলঘেরা পাহারে দেখা করেন। সেখানে বসে মোনাই পাগল সূর্য মনিকে আর্শীবাদ করে ডান হাত ধরে নিক্ষেপ করলে সূর্য তার বাড়ির উঠানে এসে পৌঁছে যান। তাৎক্ষনিক সূর্যমনি দৌড়ে মোনাই পাগলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মোনাই তার ঘরেই অবস্থান করছেন। মোনাই পাগলের এহেন অসংখ্য চমকপ্রদত্ত কাহিনী রয়েছে।

জীবিতবস্থায় বাংলা ১৩৫৫ সালে মোনাই পাগল আশ্রম তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৩৭৩ সালের ২৮ জৈষ্ঠ শ্রীমৎ স্বামী মনোহর গোস্বামী ওরফে মোনাই পাগল দেহত্যাগ (মৃত্যুবরন) করেন। মোনাই পাগলের ব্যবহৃত পানসি নৌকাটি এখনও আশ্রমের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। ভক্তরা প্রায়ই মোনাই পাগলকে তার পানসি নৌকায় বিচরন করতে দেখেন। মোনাইর মৃত্যুর পর নিলকান্ত ঘরামি আশ্রমের জন্য ৩৩ শতক জমি দান করেন। জীবিত অবস্থায় মোনাই পাগলের নিজ হাতে শুরু করা আশ্রমের কাজটি তার মৃত্যুর পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভক্তদের অনুদানে তিলে তিলে গড়ে তোলা হয় নয়নাভিরাম একটি আশ্রম। বাংলা ১৩৯৪ সালে মোনাই পাগলের আশ্রমটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়। ৩ একর ৬০ শতক জমির ওপর নয়ানাভিরাম আশ্রমটিতে আটজন ভক্ত নিঃস্বার্থ ভাবে কর্মরত রয়েছেন।

আশ্রমের পরিচালক শ্রী ঠাকুর দাস আরো জানান, মোনাই পাগলের আবির্ভাব উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্র“য়ারি) সন্ধ্যায় দু’দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়। ভক্ত সংঘ সেবাশ্রমের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় মাঘী পূর্নিমার তিথিতে দু’দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মেলার বাংলাদেশসহ বার্মা, নেপাল ও ভারত থেকে হাজার-হাজার ভক্তরা সমবেত হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।