ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আর কত?

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, শাবি ॥ রাজধানী ঢাকাসহ কমবেশি সারাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে নানা ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় মানুষের জনজীবন অনেকটা নিরাপত্তাহীন। প্রকাশ্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে শুধু যে টাকা হারাচ্ছে তা নয়। এদের মধ্যে কারো কারো নিজের প্রাণও হারাতে হয়েছে। ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। কেউবা অজ্ঞানপার্টি কিংবা মলমপার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। আর সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, অধিকাংশ ছিনতাই হচ্ছে দিনে দুপুরে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের সামনেও হচ্ছে ছিনতাই এর ঘটনা। ব্যাংক থেকে নগদ টাকা নিয়ে ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া ভুক্তভূগীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। শুধু রাজধানীতেই নয় দেশের নানা জেলা শহরেই ঘটছে এমন ঘটনা। যারা সর্বস্ব হারিয়ে যারা নিঃস্ব হয় তাদের আইনের আশ্রয়ের জন্য থানায় যাবার কথা কিন্তু তাদের নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই ছুটতে হয় হাসপাতালে। কারণ ছিনতাইকারীদের হাতে আহত হওয়া ওইসব মানুষের নিজের জীবনই হয়ে ওঠে বিপন্ন। আর যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাবেন ততক্ষণে অনেক আলামতই থাকে না। অভিযোগ করে যে ফল পাবেন তারও নেই শতভাগ নিশ্চয়তা। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানারকম ছিনতাই এর ঘটনা।

পত্রিকায় প্রকাশ, রাজধানীর কিডস অ্যান্ড ফিড নামের প্রতিষ্ঠানের অফিস এক্সিকিউটিভ আমজাদ আলী রাসেল ও ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শাহীনুর আলম ৬ ফেব্রুয়ারি একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কারযোগে এনসিসি ব্যাংক এলিফ্যান্ট রোড শাখায় গিয়ে ২৮ লাখ টাকা তোলেন। তারা টাকা নিয়ে অফিসে ফেরার উদ্দেশে প্রাইভেট কারে ওঠার সময়ে ব্যাংক সংলগ্ন রাস্তায় ওৎপেতে থাকা ৫-৬ জন ছিনতাইকারী তাদের টাকার ব্যাগ টানা হেঁচড়া করে। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আমজাদের দুই পায়ে দুই রাউন্ড ও আলমের ডান নিতম্বে একটি গুলি লাগে। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ছিনতাইকারীরা পায়ে হেঁটে এসেছিল। ছিনতাই করে পায়ে হেঁটেই পালিয়ে যায়। একই দিনের ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিন মাছ ব্যবসায়ী মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাছ কেনার জন্য  কারওয়ান বাজারের উদ্দেশে বাসে ওঠে। ৬টার দিকে বাস বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের বিপরীত পাশের সড়কে পৌঁছালে যাত্রীবেশে ৭-৮ জন ডাকাত বাসে ওঠে। একপর্যায়ে তারা মাছ ব্যবসায়ীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিবাদ করলে ডাকাতরা ছুরিকাঘাত করে। একইভাবে রামপুরার ওয়াপদা এলাকায় ভোরে একটি স্বর্নের দেকানে ডাকাতি হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা এলাকার নাইটগার্ডদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দোকানের তালা ভেঙে ৬০ ভরি স্বর্ন লুট করে জানায় দোকানের মালিক। ওই একই দিনে কক্সবাজারে ব্যবসায়ীর ১০ লাখ  টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাহ বাজারের কাঠের মার্কেট এলাকা এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুই ছিনতাইকারী মিন্টু নামের ওই ব্যবসায়ীর  কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

শুধু ব্যবসায়ী নয়, সব শ্রেণী পেশার মানুষই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া এসব মানুষ দেশেরই নাগরিক। তাদের জান মালের নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবারই যে নিরাপত্তা দিতে পারবে এমনটি আশা করে অসতর্ক হয়ে চলারও সুযোগ নেই। নগদ টাকা বহনের জন্য প্রয়োজনে পুলিশি নিরাপত্তা নেয়ার জন্য সবাইকে জানানো হয়। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ওইসব ছিনতাইকারী অপধারীদের সনাক্ত করে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলেই এসব ঘটনা  কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা বহনে আরো সতর্ক হবেনÑএমনটি প্রত্যাশা সচেতন নাগরিকদের।