নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতি রহস্যজনক খুন – দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী মেহেরুন রুনি। সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং মেহেরুন রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন।

শুক্রবার রাতের কোনো একসময় সাগর-রুনি দম্পতি খুন হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। আজ শনিবার সকালে মা-বাবার মৃত্যুর খবরটি নানিকে ফোন করে জানায় এই দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মাহীন সরওয়ার মেঘ।

মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা বলেন, ‘মেঘ আজ সকাল সাতটার দিকে আমাকে ফোন করে। বলে, বাবা-মা মরে গেছে।’ এ খবর শুনে তিনি তাঁদের পশ্চিম রাজাবাজারের ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে মেয়ের বাসায় যান। শোয়ার ঘরে মেয়ে ও মেয়ের স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে তিনি অন্যদের খবর দেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, সাগর-রুনি দম্পতির ছেলে মেঘ গতকাল স্কুল থেকে পিকনিকে যায়। সে ক্লান্ত থাকায় আগেই নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে মা-বাবার শোয়ার ঘরে গিয়ে তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নানিকে খবর দেয়।

ইমাম হোসেন আরও জানান, এই দম্পতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। সাগরের হাত-পা বাঁধা ছিল এবং শরীরে ছুরির আঘাত ছিল। রুনির শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কারা, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, পুলিশ এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাগর সরওয়ার শুক্রবার রাত একটা পর্যন্ত অফিস করেছেন। তিনি একটার পর বাসায় ফেরেন। মেহেরুন রুনির সকালে অফিস থাকায় তিনি সন্ধ্যার পর থেকেই বাসায় ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমদ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা হবে। কী কারণে তাঁদের খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগর-রুনি দম্পতি যে বাড়িতে খুন হয়েছেন সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীকে আটক করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুপুর আড়াই দিকে এডিসি মাসুদুর রহমান জানান, রুনির দুই ভাই নওশের ও নওদীশকে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে।

আজ রাত নয়টার দিকে সাংবাদিক দম্পতির লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে গণমাধ্যম কর্মীসহ শত শত মানুষ অংশ নেন। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুনের লাশ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয়। জানাজা শেষে লাশ সেখান থেকে সাগর সরওয়ারের কর্মস্থল মাছরাঙা টেলিভিশন ভবনের সামনে নেওয়া হয়। বিকেলে তাদের তৃতীয় জানাজা হয় কারওয়ানবাজার এটিএন কার্যালয়ের সামনে। পরে পুরান ঢাকার বৌবাজার এবং নবাবপুরে চতুর্থ জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

পারিবারিক ও সাগর-রুনির অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগর সরওয়ার গতকাল রাত একটা পর্যন্ত অফিস করেছেন। এর পর তিনি বাসায় ফেরেন। আর মেহেরুন রুনির সকালে অফিস থাকায় তিনি সন্ধ্যার পর থেকেই বাসায় ছিলেন। এটিএন বাংলা এই দম্পতির ছেলে মেঘের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। মেঘ তাদেরকে বলেছে, ‘তাদের (দুর্বৃত্তদের) হাতে ছুরি ছিল, পিস্তল ছিল। আমাকেও গুলি করতে চেয়েছিল।’

সাগর-রুনি দম্পতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, তথ্যমন্ত্রীসহ অনেকেই। জানাজায় সাংবাদিকেরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা ম তামিম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, আরেক অংশের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান প্রমুখ অংশ নেন।