আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সওজ ও শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের চার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের অভিযোগ – রেহাই পায়নি ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা – বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মার্কেটে প্রবেশের ৩০ বছরের গেট

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সওজ ও শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের চার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের অভিযোগ - রেহাই পায়নি ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা - বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মার্কেটে প্রবেশের ৩০ বছরের গেটসাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের ও শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের ৮৩ শতক জমি নিজের মালিকানা দাবি করে দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়দের মতে দখলকৃত জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। বাউন্ডারী ওয়াল করতে গিয়ে পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকজন বাসষ্টান্ডস্থ দুরপাল্লার বাস কাউন্টার ও দোকান ঘর উচ্ছেদ করা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও  গৌরনদী  সুপার মার্কেটের উত্তর পাশের রাস্তা বন্ধ করে এবং একাধিক দোকান ঘরের মধ্য দিয়ে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের কাজ চলছে। ফলে দুরপাল্লার যাত্রী, সাধারন ব্যবসায়ী ও পথচারীদের চরম ভোগান্তিসহ স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিজয়পুর মৌজার এস.এ খতিয়ান নং ১৬৭, ১৬৮ এবং ৩৪৩, ৩৪৪ ও ৩৪৫ নং দাগের ৮৩ শতক জমির মালিক সৃষ্টি চন্দ্র ধর ও রমেশ চন্দ্র ধর। তাদের ওয়ারিশ কৃষ্ণ কান্ত ধুপী, শ্যাম লাল ধুপী, ভাষারাম ধুপী ও শংকর লাল ধুপী। তারা শহীদ স্মৃতি পাঠাগার নির্মানের জন্য ১৯৭৫ সনের ৩০ জানুয়ারি শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের নামে সাব কবলা দলিল দিয়েছেন (দলিল নং ১৩৯৯ তারিখ ৩০/০১/১৯৭৫ ইং)।

দলিলে উল্লেখ রয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরনদীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গৌরনদী থানায় একটি শহীদ স্মৃতি পাঠাগার নির্মান করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বন্যা নিয়ন্ত্রন পানি উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত উক্ত কাজের জন্য লিখিতভাবে জমি চাহিলে আমরা (দাতারা) স্বেচ্ছায় আমাদের পৈত্রিক ওয়ারিশ নিন্ম তফছিলভূক্ত জমি সাব কবলা দলিল প্রদান করিলাম। পরবর্তীতে ওই তফছিলভূক্ত আংশিক জমিতে খুলনা উন্নয়ন কর্পোরেশন (কেডিএ) শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের পাঁকা ভবন ও একটি অডিটোরিয়াম নির্মান করেন। অডিটোরিয়ামের পূর্ব পাশে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় গৌরনদী পৌরসভা ১৯৯৯ সনে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছুক্ষন নামের একটি দ্বিতল যাত্রী ছাউনী নির্মান করেন।

২০০৮ সনের তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বরিশাল সড়ক ও জনপথ তাদের ৩০ শতক সম্পত্তি দাবি করে অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ভবন ও পাশ্ববর্তী দোকানপাট গুড়িয়ে দেয়। যাত্রী ছাউনী উচ্ছেদের প্রায় ছয় মাস পরে ওইস্থানে দুরপাল্লার বাস কাউন্টার ও ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী টোং ঘর নির্মান করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো।

গৌরনদী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মনির হোসেন (৪৩) বলেন, ‘গত ১১ ফেব্র“য়ারি রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মীরা ভাইয়ের (আবুল হাসনাত) জমি দাবি করে আমার ৪ শতক জমি দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়াও ২০টি বাস কাউন্টার ও ১০টি দোকান ঘর উচ্ছেদ করেছে’। পরেরদিন (১২ ফেব্র“য়ারি) আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সরেজমিনে জমি পরিদর্শন করে গৌরনদী প্রেসক্লাবকে নিজস্ব ভবনের জন্য তিন শতক জমি দখল বুঝিয়ে দেন। বাকি ৮০ শতক জমিতে তার অনুসারীদের বাউন্ডারী করার নির্দেশ দেন। গত ১৩ ফেব্র“য়ারি বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান কাজ শুরু করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, একদল শ্রমিকেরা ওয়াল নির্মান করছে। নির্মান কাজ তদারকি করেছেন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় লোকজনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর জমি দাবি করে তার লোকজন অন্যায়ভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও স্মৃতি পাঠাগারের ৮০ শতক জমি দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা।

গৌরনদী সুপার মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল সড়ক ও জনপথের জমির ওপর দিয়ে আমাদের মার্কেটে আসা যাওয়ার প্রায় ৩০ বছরের পুরানো রাস্তাটি আজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের মার্কেটের প্রায় দু’শতাধিক ব্যবসায়ীর ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর দাবিকৃত সম্পত্তির বাইরের ফুটপাতের দোকানগুলোকেও উচ্ছেদ করেছে সরকার দলীয় কতিপয় নেতারা। ফলে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনের দলীয় প্রার্থীর ওপর পরবে বলে জানিয়েছেন খোঁদ আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আলমগীর উকিল, মালেক খান, দুলাল কর্মকার, চুন্নু হাওলাদার, নান্নু হাওলাদার, সোহাগ, মাসুদ মোল্লা জমি ক্রয় বাবদ গত ২৮ ডিসেম্বর ১৪ লাখ টাকা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রদান করেছেন। কিন্তু তাদের জমি না বুঝিয়ে দিয়ে ওই জমির ওপর বাউন্ডারী ওয়াল করা হয়েছে।

বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান কাজের তদারকীর অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবুল কালাম বলেন, কাউন্টার স্থান্তর নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকায় বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশরী শাহ মোহাম্মদ মোকাদ্দেস বলেন, দখলদার বর্তমানে জমি দখল করলেও পরবর্তীতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় তা উচ্ছেদ করা হবে।

খবর ও ছবি : খোকন আহম্মেদ হীরা