সংলাপ আহ্বানের – অপেক্ষায় বিএনপি

খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক, নির্দলীয়, অন্তবর্তকালীন কিংবা নির্বাচনকালীন যে নামেই ডাকা হোক না কেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে নয়, সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রতিশ্রুতিসহ আলোচনায় বসার আহ্বানের অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি।

তিনদিনের বাংলাদেশ সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লে¬ক রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য দুই শীর্ষ নেত্রীকে সংলাপে বসার তাগিদ দেয়ার পর থেকে বিএনপি সরকারের তরফ হইতে আলোচনায় বসার প্রস্তাব আশা করছে।  

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ প্রসঙ্গে গত শনিবার লক্ষ্মিপুরে বলেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

এর আগের সপ্তাহে চাঁদপুরে এক জনসভায় তত্ত্বাবধায়ক নাম থেকে সরে এসে অন্তবর্তী বা যে নামেই ডাকা হোক বিএনপির আপত্তি থাকবেনা বলে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত বিএনপি।

এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক মাঠের খেলোয়ারদের বাইরেও দেশী বিদেশী এক শ্রেনীর খেলোয়াররা পর্দার অন্তরালে তাদের খেলা খেলছেন। সরকারি ও বিরোধী দলকে পরামর্শ দিচ্ছেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছার জন্য। এ বিষয়ে সমঝোতার জন্য প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে কূটনীতিকদের তৎপরতা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টি আরো স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক। এ বিষয়ে কথা বলতে আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে কয়েকজন কূটনীতিক ও প্রতিনিধির আগমনের কথা রয়েছে। বিদেশি অন্তত ৩টি রাষ্ট্র এ ব্যাপারে সরকারকে তাদের নিজেদের মতো করে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে উভয় দলের শীর্ষ নেতাদের সায় রয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন অগ্রগতি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে উভয় দলই নিয়েছে কৌশলগত অবস্থান। সংসদে কে বিল আনবে এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। সরকারি দল আওয়ামী লীগ চাচ্ছে বিএনপি এ বিল সংসদে উত্থাপন করুক। বিএনপির বক্তব্য যেহেতু সরকারি দল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ব্যবস্থা বাতিল করেছে। ফিরিয়ে আনতে হলে তাদেরকেই বিল উত্থাপন করতে হবে। বিরোধী দল এ বিল উত্থাপন করলে ব্রুট মেজরিটির জোরে সরকারি দল এ বিল বাতিল করতে পারে বলে তাদের আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে রেখেছে বিএনপি। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা এ খসড়া তৈরি করেছেন। খসড়ায় ৫টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে কোনো অন্তবর্তী সরকার না মানা, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে না যাওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করা, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বাধ্যতামূলক করা।

পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে, খালেদা জিয়াসহ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে হাজির হয়ে কথা বলবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

সরকারি দল আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা মেনে নিলে তার গঠন-কাঠামো নিয়ে সংসদে এবং অন্য যে কোনো স্থানে আলোচনা করতে রাজি বিএনপি। এ কথা জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না তারা। আওয়ামী লীগ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে ইতিবাচক সাড়া দেবেন তারা।

ফখরুল বলেন, তারা আগ্রহ প্রকাশ করলেও সরকার আলোচনার বিষয়ে কিছুই বলছে না। সরকার বলুক তারা কোথায় কখন আলোচনা করবে। আমরাও প্রস্তত। ওই আলোচনা সংসদে অথবা সংসদের বাইরে যে কোনো স্থানে হতে পারে।

নির্দলীয় সরকারের কোনো রূপরেখা বিএনপির রয়েছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, তা টেবিলেই আলোচনা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে না এমন প্রতিশ্রুতি পেলে তারা আলোচনায় যেতে প্রস্তত। সরকারকে সংবাদ সম্মেলন, সংসদ অথবা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে এ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

মওদুদ বলেন, সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কার কাছে প্রস্তাব দেব? সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মহাজোট সরকারের। এ বিষয়ে আলোচনা করতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আগামী নির্বাচন সংক্রান্ত ফর্মুলা নিয়ে সংসদে যোগ দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আলোচনার দরজা খোলা আছে। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেব।

বিএনপির উদ্দেশে হানিফ বলেন, একদিকে আলোচনার কথা বলবেন, অন্যদিকে ১২ মার্চের কর্মসূচি পালন করবেন, তা হবে না। আমরা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সমর্থন করলেও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চুপচাপ মেনে নেব না। গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগে কোনো অগণতান্ত্রিক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ জনগণ মেনেও নেবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সংসদে এসে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ফর্মুলা দিতে বিরোধী দলকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্তবর্তী সরকার কোন ফর্মুলায় গঠিত হবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সংসদে এসে প্রস্তাব দিন। রাজনৈতিক সংঘাত এড়িয়ে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐকমত্যে আসতে হবে।

সর্বশেষ জানা গেছে, বিদেশিদের চাপের মুখে অন্তবর্তী সরকারের একটি মডেল খুঁজে ফিরছে সরকার। বিদেশি অন্তত ৩টি বন্ধুরাষ্ট্র এ ব্যাপারে সরকারকে তাদের নিজেদের মতো করে পরামর্শ দিয়েছে। ১৬ বছর আগের (১৯৯৬) মতোই এবারও বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রদের এ ব্যাপারে ভাষ্য রয়েছে। যা এরই মধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে।

  • আনুষ্ঠানিক কোন অগ্রগতি হয়নি
  • প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে কূটনীতিকদের তৎপরতা চলছে
  • বিদেশিদের চাপের মুখে অন্তবর্তী সরকারের একটি মডেল খুঁজে ফিরছে সরকার
  • বিএনপি আগ্রহ প্রকাশ করলেও সরকার আলোচনার বিষয়ে কিছুই বলছে না। সরকার বলুক তারা কোথায় কখন আলোচনা করবে। বিএনপি প্রস্তত। ওই আলোচনা সংসদে অথবা সংসদের বাইরে যে কোনো স্থানে হতে পারে।