অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও ত্রুটিপূর্ণ বিকল্প সড়ক কেড়ে নিল ১৭টি প্রাণ

বিল্লাল হোসেন, কালকিনি ॥ শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পান্তাপাড়া নামক স্থানে নির্মাণাধীন ব্রীজের পাশের বিকল্প সড়ক দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে আরপি পরিবহনের নয়ন ক্লাসিক (ঢাকা মেট্টো-চ ৮৭১২) বাসটি যাওয়ার সময় উল্টে পাশের খালে পড়ে যায়। এতে ১৭জন নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই চরমোনাই দরবার শরীফের ভক্ত। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ৩ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সেখানে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক যানজটমুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করা প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে।

জানা গেছে, আরপি পরিবহনের নয়ন ক্লাসিক (ঢাকা মেট্টো-চ- ৮৭১২) নামের একটি যাত্রীবাহী বাস খুলনা থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে এসে বরিশালে যাওয়ার সময় বেলা ১১টায় দুর্ঘটনায় পড়ে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের মধ্য থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার সিরাজ খন্দকার ও দুধখালী এলাকার সোবাহন মুন্সী, রাজৈর উপজেলার গণি খান, মস্তফাপুর এলাকার সিরাজুল ইসলাম, শরীয়তপুরের জাজিরার মনির হোসেন, শফিকুল ইসরাম, নগরকান্দার আসজর আলী, ইদ্রিস, মোকসুদপুরের খলিল মোল্লা, বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতরা হলেন- গোলেজান, আহাদ আলী, নাহিদা, সানজিদা, আ. করিম, রফিক, এজাজুল, ফারুক, আলাউদ্দিন, লিয়াকত, রবিউল, মনির, হামিদ মোড়ল, নুরুল হক, আ. লতিফ, আবু সিদ্দিক, গোলাম আজম, নুরুল হক, সোলায়মান, শাহীন, হেনা, কামরুল, মারুফা, লাবনি, এনি শায়লা, শিমলা, ইয়াসিন, নজরুল শিকদার, জুলমত, আ. রহিম, রফিকুল ইসলাম, একরাম আলী ও মীম। আহতদের মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স, ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

মাদারীপুরের সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সূত্র জানায়, দূর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৩০জনকে হাসাপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার জবেদ মাতুব্বর নামের একজন হাসাপাতালে মারা গেছে। ২জনের অবস্থা আশঙ্গাজনক হওয়ায় তাদের ফরিদপুর মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

চিকিৎসাধীন নজরুল সিকদার ও আহাদ আলী জানান, বাসটি খুলনা থেকে ছাড়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী উঠায়। বাসে পাঁ ফেলার জায়গা ছিল না। বাসের ভিতরে ও ছাদে কমপক্ষে দেড়শ’ জন যাত্রী ছিল। অধিকাংশই চরমোনাই মাহফিলে যাচ্ছিল।

দুর্ঘটনার পর পরই আহতদের আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। স্বজনদের আহাজারি অনেকের চোখেই জল এসে যায়। শোকে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে যায়। স্বজনদের খোজতে অনেককেই চারিদিকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।

মাদারীপুরের পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত বাসটি সম্পূর্ণ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেণ। এ সময় মন্ত্রীর সাথে জেলা প্রশাসক নূর-উর রহমান, পুলিশ সুপার মো. নজরুল হোসেন, কালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, মাদারীপুর পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, কালকিনি ইউএনও মো. শাহরিয়াজ, কালকিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম শাহীন মন্ডলসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত হন।

আহত যাত্রী নজরুল শিকদার জানান, গাড়িটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ত্র“টিপূর্ণ বিকল্প রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় খালে উল্টে পড়ে। এ সময় ছাদে থাকা প্রায় ৩০/৩৫ জন যাত্রী গাড়ির নিচে চাপা পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ব্রিজ ভেঙে রেখেছে ঠিকাদার। বিকল্প সড়ক যাও নির্মাণ করেছে তাও ঝুকিপূর্ণ। এখানে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে কিন্তু তাতেও ঠিকাদারের টনক নড়েনি। ঠিকাদার বারবার সময়ক্ষেপন করে ব্রিজটি নির্মাণ করছে না। ঝুকিপূর্ণ সড়ক না হলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতো না।

ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে প্রশাসনকে আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এবং নিহতদের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম শাহীন মন্ডল জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।