আগৈলঝাড়ায় হাটবাজারের টেন্ডার ছিনতাই – উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত – উপজেলা পরিষদের কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জন আহত

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও তার অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আজ রবিবার পুলিশের উপস্থিতিতে হাট-বাজার ইজারার টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জসিম সরদারকে লাঞ্ছিতসহ হামলায় উপজেলা পরিষদের কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতা ও টেন্ডার জমা দিতে আসা সাধারন ঠিকাদারসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সংশ্লিষ্ট অফিস, টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বাংলা ১৪১৯ সনের জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৮টি হাট-বাজারে সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস ইজারাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেন। আজ রবিবার টেন্ডার ড্রপের শেষদিনে সকাল থেকেই সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদে জড়ো হতে থাকে। সিডিউলমতে প্রথমবারের দরপত্র অনুযায়ি গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিডিউল বিক্রির শেষ সময় নির্ধারণ ছিল। শেষ সময়ের মধ্যে আগৈলঝাড়া সদর বাজারের অনুকূলে ৩২টি, বাকাল বাজারে ২টি, ছয়গ্রাম বাজারের ৪ টি, আস্কর হাটে ৩টি, রত্মপুর মিশ্রিপাড়া হাটে ৩টি, চেংগুটিয়া হাটে ৩টি, বাগধা হাটে ৩টি, বাশাইল হাটে ৭টি, গৈলা বাজার ১৩টি, মোল্লাপাড়া সাহেবের হাটে ১৪টি, ত্রিমূখী হাটে ১টি, পয়সারহাট বন্দরের ৩টি, দক্ষিণ বাহাদুরপুর হাটে ৬টি ও উত্তর বাহাদুরপুর হাটের অনুকূলে ১৩টি সিডিউলসহ সর্বমোট ১০৭টি সিডিউলের অনুকূলে ৩৫ হাজার ৫’শ টাকা বিক্রি করা হয়। তবে পয়সারহাট পূর্বপাড়, ডিএসবি হাট, বেলুহার কাজীর হাট ও বারপাইকা দুশুমির হাটের কোন সিডিউল প্রথম দরপত্রে বিক্রি হয়নি। গতকাল রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত টেন্ডার ফরম দাখিলের শেষ সময়ের মধ্যে বাকাল হাটের অনুকূলে ১টি ও অন্যান্য ১৩টি হাট বাজারের অনুকূলে ৩টি করে মোট ৪০টি ফরম জমা পড়ে। সুষ্ঠ টেন্ডারের জন্য সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছিলো।

সকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ইউসুফ মোল্লা উপজেলা পরিষদ ভবনের ২য় তলায় ওঠার কলাসিপল গেট আটকে তার অনুসারিদের নিয়ে নিজেই সিড়ির গোড়ায় অবস্থান নেয়। এমতাবস্থায় সাধারণ ঠিাকাদাররা ও জনসাধারন কোন কাজের জন্যই উপজেলা পরিষদে ঢুকতে পারেননি। অপরিচিত কেউ অফিসে ঢুকতে গেলে তাকে শরীর তল্লাশী করা হয়। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম সরদার ইউএনও’র কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে গুজ কমিটির নেতা-কর্মীদের বাঁধার মুখে পরেন। এসময় ছাত্রলীগ নেতা আরিফ তালুকদারের সাথে তার উত্তপ্ত বাকবিতন্ডার পর আরিফের তাকে লাঞ্ছিত করে। আগৈলঝাড়া সদর বাজারের জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই জামাল সরদারের টেন্ডার ফরম জমা দিতে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক লিটু তালুকদার, ছাত্রলীগ নেতা মামুন ফরিয়া, রাকিব হোসেন ও হরষিতকে গুজ কমিটির পক্ষে ইউনুস, এরশাদ, আজিজুল, মানিক মোল্লা মারধর করে ফরম ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান অফিসের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম হাওলাদার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম সরদারের কথা মত তার ভাই জামাল সরদারের আর একটি ফরম নিয়ে পরিষদে ঢোকার চেষ্টা করলে আহ্বায়কের ছেলে সৌরভ ও টিটু তাকে মারধর করে ফরম ছিনিয়ে নেয়। এসময় সৌরভ রফিকুলের মোবাইল ফোন আছড়ে ভেঙ্গে ফেলে বলে রফিকুল অভিযোগ করেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও গুজ কমিটির হামলায় আহত লিটু তালুকদার অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ইউসুফ মোল্লার উপস্থিতিতে তার অনুসারীরা সাধারন ঠিাকাদারসহ ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর হামলা চালিয়ে ৫জনকে আহত করে টেন্ডার ফরম ছিনিয়ে নিয়েছে। এসময় ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতার প্রভাবে তারা ছিলো নিরব দর্শকের ভূমিকায়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম সরদার লাঞ্ছিত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকার বাইরে রয়েছেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠ টেন্ডারের জন্য সকাল থেকেই উপজেলা চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিনি আরো বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে লাঞ্ছিত হবার ঘটনা জানিয়েছেন। আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। এছাড়া অন্য কেউ টেন্ডারে বাঁধাগ্রস্থ হয়েছেন এ বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ইউসুফ মোল্লা বলেন, হামলা, লাঞ্চিত ও টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ সঠিক নয়।