১০টি দূর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত – দু’শতাধিক আহত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তিনটি ডাইভারেশন মরন ফাঁদে পরিনত

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ডাইভারেশনগুলো এখন মনরফাঁদে পরিনত হয়েছে। মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী, কাসেমাবাদ ও কালকিনির পান্তাপাড়া এলাকায় কালভার্ট নির্মান কাজের ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতায় গত এক মাসে ১০টি সড়ক দূর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ১০টি দূর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত - আহত দু’শতাধিক - ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তিনটি ডাইভারেশন মরন ফাঁদে পরিনতদু’শতাধিক বাসযাত্রী আহত হয়েছে। এসব ডাইভারেশন এখন মৃত্যুর মিছিলে পরিনত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাসচালক, যাত্রী ও স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী (লীলা সিনেমা হলের সম্মুখে), কাসেমাবাদ ও কালকিনির পান্তাপাড়া কালভার্ট চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পরে।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিশির কুমার জানান, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওইসবস্থানে ২০১০-২০১১ইং অর্থ বছরে আগস্ট ও জানুয়ারিতে পিএনপি প্রকল্পের অধীনে নতুন আরসিসি কালভার্ট নির্মান প্রকল্প গ্রহন করে। বরিশালের মেসার্স মতিয়ার রহমানকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মান কাজ শুরু করেন। কালকিনির পান্তাপাড়া কালভার্টটি গত বছর আগস্টে শুরু করা হয়।

উত্তর পালরদী গ্রামের আব্দুল মালেক হাওলাদার, নুরুল ইসলাম বেপারী, সিদ্দিকুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে প্রতিদিন দুরপাল্লার হাজার হাজার বাস, ট্রাক, রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সসহ যান চলাচল করে থাকে। তারা আরো জানান, কাজ শুরুর পূর্বে প্রকল্পস্থানে বিকল্প সড়ক নির্মান করার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা করেননি। প্রকল্প স্থানের পার্শ্বে কোন রকম যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে। ওইস্থান দিয়ে যান চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুরপাল্লার বাস, ট্রাক ডেবে ও উল্টে অহরহ দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। বাসচালক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বেল্লাল হোসেন ক্ষোভের সাথে বলেন, মহাসড়কের দু’পাশে নির্মান কাজের কোন সাইনবোর্ড বা সংকেত দেয়া হয়নি। এছাড়া রাস্তার পারাপারের জন্য কোন সিগনাল ম্যানও রাখা হয়নি। এমন কি রাতে মহাসড়কের দু’পাশে কোন লাইট ও লাল পতাকারও ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কারনে সড়কে চলাচলকারী বাসচালকরা দূর্ঘটনায় পতিত হন। বাসচালক সেকান্দার হোসেন বলেন, রাস্তায় কাম চলে হেইয়া বোঝার কোন উপায় নাই। যে কারনে দ্রুতগামী দুরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকরা প্রায়ই দূর্ঘটনার পরছে।

কালকিনির পাথরিয়ারপাড় গ্রামের রানা হাওলাদার, সবুজ হোসেন বলেন, পান্তাপাড়া কালভার্টের ঠিকাদার কাজের শুরু থেকে ঠিমেতালে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নামেমাত্র বিকল্প সড়ক করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটচ্ছে। যে কারনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে খুলনা থেকে বরিশাল চরমোনাইর বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলে যোগদানের জন্য মুসূল্লীবাহী বাস পান্তাপাড়া বিকল্প সড়ক পারাপারের সময় ড্রাইভারেশনে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাঁদে পরে। এতে ১৮ জন যাত্রী মারা যান। আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন মুসুল্লী। এর বিশদিন পূর্বে একইভাবে যাত্রীবাহী বাস উল্টে ৪ জন যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় ২৩ জন। এছাড়া প্রায়ই বিকল্প সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে, এসব কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্মান সংকেত না দেয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে মেহেরপুর থেকে বরিশালগামী আল-সানী পরিবহনের চালক সরাসরি গাড়ি চালিয়ে উত্তর পালরদী এলাকার নির্মাণাধীন ব্রিজের খাদে পড়ে যায়। এতে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত ও চালক তোফাজ্জল হোসেন, হেলপার জসিম উদ্দিন, সুপার ভাইজার জালালসহ কমপক্ষে ২৫ জন যাত্রী আহত হয়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পান্তাপাড়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর গৌরনদীতে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারের লোকজনের ওপর চড়াও হলে তারা প্রকল্প এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। বরিশাল বাস মালিক সমিতির সময় নিয়ন্ত্রক (টাইম কিপার) মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি একই ভাবে ভাঙ্গারী ভর্তি একটি ট্রাক খাদে পড়ে উল্টে ৩ জন ও একটি নসিমন উল্টে ১২ জন আহত হয়। এ ছাড়া বরিশাল মালিক সমিতির তিনটি বাস দূর্ঘটনায় পতিত হয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি দরপাল্লার বাস খাদে পড়ে ১০ জন আহত হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি কাসেমাবাদ কালভার্ট নির্মানের স্থানে দুর্ঘটনায় ২৫ জন আহত হয়। স্থানীয় মোঃ রুহুল হাওলাদার, জানে আলমসহ অনেকেই জানান, গত এক মাসে এ তিনটি স্থানে ১০টি দূর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও প্রায় দু’শতাধিক বাসযাত্রী আহত হয়েছে।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা দূর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। মহাসড়কে হাজার হাজার যান চলাচল করে যে কোন সময় বড় কোন ট্রাজেডির ঘটনা ঘটতে পারে।

অভিযোগের ব্যাপারে মেসার্স মতিউর রহমান এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোঃ মতিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকেতসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসতর্কভাবে বেপরোয়া গাড়ী চালকরা দূঘটনায় পরে থাকতে পারে। প্রকল্প এলাকা থেকে লোকজন পালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তির অনৈতিক দাবি পুরন করতে না পারায় তাদের মারধর করা হলে শ্রমিকরা পালিয়ে আসে।

সংকেত না দেয়া ও বিকল্প সড়ক না করা প্রসঙ্গে বরিশাল সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিশির কুমার বলেন, আমার জানামতে বিকল্প সড়ক তৈরীসহ নির্মান সংকেত দেয়া হয়েছে।