পিঙ্গলাকাঠির কালনায় রহস্যময় আগুন দেখতে জনতার ঢল

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ গত শনিবার বাদ এশা হঠাৎ করে গৃহস্তের ঘরে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে বসত ঘরের আংশিকসহ ঘরের মালামাল পুড়ে যায়। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। প্রথমে ধারনা করা হচ্ছিল পূর্ব শত্রুতার জেরধরে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতকারীরা আগুন দিয়েছে। কিন্তু ওই দিন রাত ১২টার দিকে ওই গৃহস্তের বাড়ির শৌচাগারে আবার হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। এতে আতংকগ্রস্থ’ হয়ে পড়ে পরিবারটি। পরের দিন রবিবার বিকেলে ও রাতে চার দফা তার ঘরসহ পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী ঘরে হঠাৎ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে তার ঘরের মালামাল পুড়ে যায়। সোমবার বিকেলে ও রাতে তিন দফা পার্শ্ববতী অপর প্রতিবেশীর আরেক ঘরে একই ভাবে অগ্নিকান্ড ঘটে। পর পর তিন দিনের এ পালাক্রমের আগুনের ঘটনা নিয়ে পরিবারগুলো আতংকিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আগুনের সুত্রপাতের রহস্য উদঘাটনের জন্য  প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুর থেকে ডেকে আনা হয় এক ফকিরকে। ফকির বললেন, এ আগুনের নাম ‘অগ্নিশিখা জ্বিন’।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কালনা গ্রামের অটো রিকসা (ইজি বাইক) চালক মোঃ কাউয়ুম সিকাদারের বাড়িতে টানা তিনদিনের এ রহস্য জনক অগ্নিকান্ড দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। আজ মঙ্গলবার গৌরনদী সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে উৎসুক মানুষের ঢল। এ সময় ফকির আনোয়ার হোসেন এ অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে নানা মন্ত্রর পাঠদানসহ ফিকির দিচ্ছেন।

গৃহকর্তা মোঃ কাউয়ুম সিকাদার (৪৫) জানান, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ এশা রাতের খাবার শেষে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ তার বসত ঘরের মাঝ বরারর দিয়ে আগুন লাগে। মুহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা সারা ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ডাকচিৎকারে এলাকাবাসি এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। অগ্নিকান্ডে তার বসত ঘরের আংশিক ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রথমে তিনি ধারনা করছিলেন পূর্ব শত্র“তার জের ধরে কে বা কারা এ আগুন লাগিয়েছে। কিন্তু ওই দিন রাত ১২টার দিকে তার বাড়ির শৌচাগারে আবার হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। প্রতিবেশী রুস্তুম সিকদার জানান, পরের দিন রবিবার ও সোমবার বিকেল চারটায় ও রাতে চার দফা তার ঘরসহ পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী মোসলেম সিকদারের ঘরে হঠাৎ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে তাদের ঘরের মালামাল পুড়ে যায়।

মোসলেম সিকদার (৭৫) বলেন, পর পর তিন দিনের এ পালাক্রমের আগুনের ঘটনা নিয়ে আমরা আতংকিত হয়ে পরেছি। পরবর্তীতে আগুনের সুত্রপাতের রহস্য উদঘাটনের জন্য আমার নিকটতম আত্মীয়র মাধমে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরত্বের উজিরপুর উপজেলার সাতলা থেকে ডেকে আনা হয় আনোয়ার হোসেন নামের ফকিরকে। ফকির অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে নানা মন্ত্রর পাঠদানসহ ফিকির দিয়ে বললেন, আর আগুন লাগবেনা। সে যেতে না যেতেই সোমবার বিকেল ৫ টায় ও রাতে কয়েকবার আগুন লাগে। আজ মঙ্গলবার আবার ফকিরকে ডেকে আনা হযেছে। তিনি আরো বলেন, ‘বাবা এ্যাহন ভাল লাগে না। ঘরের মধ্যে যে হানেই একটু মালামাল আছে হেই হানেই আগুন লাগে। আগুনের ভয়ে মোগো নাওন, খাওন ও ঘুম বন্ধ হইয়া গ্যাছে, কহন আবার আগুন লাগে এই ভয়ে আছি’।

চররমজানপুর গ্রামের কাওছার হোসেন বলেন, ‘রহস্যময় আগুনের কথা শুনে প্রায় ৮ কিলোমিটার পায়ে হেটে এসে আগুন স্ব-চোখে দেখলাম। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না’। কালনা গ্রামের সিরাজ খান বলেন, ‘গায়েবি আগুন নিভাতে গিয়ে আমিসহ প্রায় ১০ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছি’। কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া গ্রামের মৃত ছালাম চৌধুরীর স্ত্রী শিলা বেগম, বলেন, ‘গায়েবি আগুনের কথা শুনে ১৮ কিলোমিটার দুর থেকে এক নজর দেখার জন্য এসেছি’। ফকির আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বাড়িতে জ্বিনের আছর পড়েছে তাই অগ্নিশিখা জ্বিন এ আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে’ ভাল ভাবে বাড়ি বন্ধক দিলে জ্বিনের আছর দুর হয়ে যাবে’।

নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ইজি বাইক চালক কাউয়ুম সিকাদারের বাড়িতে রহস্যময় আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত তিনদিন ধরে হাজার হাজার উৎসুক নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে ভীড় করছেন। এ রহস্যময় আগুন নিয়ে আমরা দ্বিধাদন্ধে ভুগছি।