কৃষি সেচের স্থায়ী সমাধানের জন্য ২৭ প্রকল্পের ৮৬ কি.মি. খাল পুনঃ খনন ফাইল আজও লাল ফিতায় বন্দি! সেচ সংকটে বোরো চাষ ব্যাহত

তপন বসু, আগৈলঝাড়া ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আভ্যন্তরীন ৮৬ কি.মি. খাল খননের অভাবে পানি সেচ সংকটে পরেছে কৃষক। একারনে বোরো চাষ দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খালগুলোতে পানি সল্পতার কারণে স্বাভাবিক চাষাবাদ ব্যহত হওয়ায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।

উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসে অনেক আগেই প্রকল্প দাখিল করলেও আজও ওই প্রকল্প লাল ফিতায় বন্দি রয়েছে।

বরিশাল জেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, কৃষি নির্ভর আগৈলঝাড়ায় গত দুই যুগেও মরা খালগুলো পুনঃ খননের উলে¬খযোগ্য কোন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কৃষকরা বছরের পর  বছর পানি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছে। সেচের জন্য উপজেলার আভ্যন্তরীণ ২৭টি প্রকল্প আওতায় ৮৬কি. মি. খালের বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকদের পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল পুনঃ খননের জন্য প্রকল্পগুলো গত দু’বছর আগে দাখিল করলেও তা এখনও লাল ফিতায়ই বন্দি রয়েছে। দাখিলকৃত প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নে মোট ২২কি.মি. খালের মধ্যে রয়েছে বাশাইল গ্রামের মতিউর রহমানের স্ব-মিল থেকে ছোট বাশাইল-গোয়াইল-ছোট ডুমুরিয়া পর্যন্ত ৮কি.মি., একই এলাকায় কামাল সরদারের বাড়ী থেকে হায়াতুল¬াহ ফলিয়ার  বাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., দক্ষিণ বাহাদুরপুর হইতে মাগুরা ছাদেক বেপারীর বাড়ী পর্যন্ত ৩কি.মি., বাহাদুরপুর রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যালয় থেকে বটু বকুলার বাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., রামানন্দের আঁক স্কুল থেকে ক্লাব বাড়ী পর্যন্ত আড়াই কি. মি., বাশাইল খন্দকার বাড়ীর ব্রিজ থেকে চেংগুটিয়া ঢালীবাড়ী মসজিদ পর্যন্ত আড়াই কি.মি., রাজিহার জোড়া ব্রিজ থেকে কুমার ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩কি.মি. সহ ২২কি.মি. খাল খনন জরুরী হয়ে পরেছে। বাকাল ইউনিয়নে শুকিয়ে যাওয়া খালের পরিমান ১৭কি.মি.। এর মধ্যে ১নং ব্রিজ থেকে আদাবাড়ী পর্যন্ত দেড় কি.মি., কোদালধোয়া থেকে বড়মগরা পর্যন্ত ২ কি.মি., কোদালধোয়া থেকে ফেনাবাড়ী পর্যন্ত ২কি.মি., কোদালধোয়া শিমুলবাড়ী পর্যন্ত দেড় কি. মি., বাকাল ১নং ব্রিজ থেকে কোদালধোয়া পর্যন্ত ৪কি.মি., বাকাল হাট থেকে আমবাড়ী পর্যন্ত ২কি.মি. ও রাজিহার বাজার থেকে বাকাল হাট পর্যন্ত ৪কি.মি. সহ ১৭কি.মি. খাল পুনঃ খননের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গৈলা ইউনিয়নে ফুল¬শ্রী ডাক্তারখানা থেকে উত্তর শিহিপাশা হয়ে কুমার ভাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে তিন কি.মি., নিমতলা থেকে টেমার হয়ে সেরাল হাই স্কুল পর্যন্ত ৩কি.মি., গৈলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টুর বাড়ীর ব্রিজ থেকে গুপ্তের হাট পর্যন্ত আড়াই কি.মি., রথখোলা থেকে ভদ্রপাড়া পর্যন্ত ৩কি.মি,  রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে রামের বাজার পর্যন্ত ২কি.মি, পতিহার জুরান সরকারের বাড়ী থেকে কারিকর পাড়া পর্যন্ত ১কি.মি., কালুরপাড় থেকে রামের বাজার পর্যন্ত ২কি.মি. ও কালুপাড়া গেট থেকে আস্কর বল¬ভ বাড়ী পর্যন্ত ৫কি.মি. সহ মোট ২২কি.মি.। রতœপুর ইউনিয়নে মিশ্রিপাড়া বাজার থেকে চাউকাঠী পর্যন্ত ৩কি.মি., মোহনকাঠী কলেজ থেকে থানেশ্বরকাঠী পর্যন্ত ৪কি.মি., বরিয়ালী ওয়াপদা থেকে মোলাপাড়া-ত্রিমুখী-বারপাইকা-দুশমী পর্যন্ত ৭কি.মি., কাঠিরা-দুশুমী থেকে দক্ষিণে উজিরপুর সীমানা পর্যন্ত ৬কি.মি., ছয়গ্রাম তালুকদার বাড়ী থেকে ডাক্তার বাড়ী পর্যন্ত ২কি.মি. ও ঐচারমাঠ থেখে কাঠিরা পর্যন্ত ৩কি.মি. সহ ২৫কি.মি. খালে পানি সরবরাহ না থাকায় পুনঃ খনন দরকার। উপজেলায় গ্রামীন শাখা খালগুলোর ২৭টি প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৮৬ কি.মি. খাল খনন জরুরী হয়ে পরেছে। এ খালগুলোতে অতীতের মত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগৈলঝাড়া উপজেলায় অদূর-ভবিষ্যতে পতিত জমির পরিমান বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন সহসাই কমে যাবে বলে কৃষিবিদদেরা আশংকা করছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর পূর্বে খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারী অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। কাবিখা, কাবিটা, টিয়ার,জিয়ার সহ এডিপি ও এলজিইডি বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও শাসক দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদাসিনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে খাল খননের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে সেচ ব¬কের ড্রেন নির্মান, গ্রামীণ সড়ক মেরামত, পারিবারিক কবস্থান পাকা করণ, ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, সহ উপজেলা সদরে বিভিন ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কাগজে কলমে কাজ দেখানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ৮’শ ১৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফসল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার মে. টন চাল। তবে সেচ সংকটের কারনে উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে ৩০ হাজার ৯’শ ৬৯ মে. টন। বাকী প্রায় ৪ হাজার মে. টন খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সূত্র মতে, উপজেলার গৈলা, বাকাল, রত্নপুর, বাগধা ও রাজিহার ইউনিয়নে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যাহত হচ্ছে। এসকল এলাকায় বোরো চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এব্যাপারে বিএডিসি’র সিনিয়র সাব-এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মতিলাল রায় জানান, দাখিলকৃত প্রকল্পগুলো মন্ত্রনালয়েই জমা রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্প বাস্তবায় হয়নি বা সহসাই হবে এমন কোন আভাস তিনি জানেননা।