১২ মার্চ মহাসমাবেশ – নানা আশংকায় বিএনপি

খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ আগামী ১২ মার্চের মহাসমাবেশ নিয়ে বিভিন্নমুখি আংশকায় রয়েছে বিএনপি। সরকার, নিজদল, জোট, সমমনা ও মিত্রদের তৎপরতা নিয়ে এ আশংকা দলটির। শান্তিপূর্ণভাবে ও সফলতার সঙ্গে এ মহাসমাবেশ শেষ করতে পারবে কিনা এ নিয়েও  আশংকা রয়েছে তাদের।

মহাসমাবেশ ঘোষণার পর থেকে তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করে দলটি। কিন্তু একই দিন ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে সরকার তা প্রত্যাহার করলেও ১৪ মার্চ ১৪ দলের মহাসমাবেশ ঘোষণায় আশংকায় রয়েছে বিএনপি। উল্টাপাল্টা কিছু করলে খবর আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন হুমকিও তাদের আশংকার কারণ।

আবাসিক হোটেলের বুকিং না পাওয়া, ইতিমধ্যে বুকিং হওয়া আবাসিক হোটেলের বুকিং বাতিল করতে মালিক ও ম্যানেজারদের পুলিশের মৌখিক নির্দেশ দেয়া, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া না পাওয়া, জেলাÑথানা থেকে ঢাকায় আসার জন্য রিজার্ভ গাড়ী না পাওয়া এবং গাড়ী রিজার্ভ দিতে সরকারি নেতাদের গাড়ীর মালিকদের নিষেধ করা তাদের আশংকার আরো একটি কারণ।

মহাসমাবেশের আগে পড়ে পরিবহন ধর্মঘটের নামে গাড়ি-লঞ্চ ও ফেরি বন্ধ করা সহ সরকারি দলের নেতাকর্মী দিয়ে সমাবেশে আগতদের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও বাধা দেয়া, পুলিশ কতৃক গ্রেপ্তার ও লাঠিপেটাসহ মহাসমাবেশ স্থলে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা সরকারের তরফ থেকে নানামুখী বাধারও আশংকা করছে দলটি।

এর বাইরে নিজ দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কি বহিঃপ্রকাশ ঘটে, কোন্দলের কারণে ঢাকায় আসতে ইচ্ছুক নেতাকর্মীদের সবাই ঢাকায় আসতে পারবে কি না, কোন্দল করে এক পক্ষ আসবে অন্য পক্ষ এলাকায় থেকে যাবে কিনা, অথবা ঢাকায় পৌছলেও মহাসমাবেশ স্থলে নিজেদের কোন্দলের কারণে বড় ধরণের কোনো গ-গোল তৈরি করে মহাসমাবেশ প- হয়ে যায় কিনা। ঢাকা মহানগরীর ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন্দলও তাদের আশংকার আরো এক কারণ।

নিজ দলের সঙ্গে সঙ্গে এমন আশংকা রয়েছে জোট ও সমমনা এবং মিত্রদের নিয়েও। মহাসমাবেশের মঞ্চের আশ পাশের দখল নিয়ে ছাত্র দল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে  ছাত্র শিবিরের কোনো বিরোধ তৈরি হয় কিনা। জোট ও সমমনা দলের নেতারা যে পরিমান লোকের জমায়েত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে পরিমান লোক তারা হাজির করতে পারবে কিনা বা করবে কিনা এমন আশংকাও রয়েছে তাদের। সর্বোপরি মহাসমাবেশে প্রত্যাশিত লোক সমাগম হবে কিনা এটা নিয়েও রয়েছে এক ধরনের আশংকা।

এ ধরনের নানামুখী আশংকা মধ্যে সবচেয়ে বড় আশংকা হচ্ছে সফলভাবে এ সমাবেশ শেষ করা যাবে কি না। সমাবেশে খালেদা জিয়ার ভাষণ ও কর্মসূচি ঘোষণা কিভাবে নেবে নেতাকর্মীরা। তারা বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করবে কিনা। কোনো স্থাপনায় ভাংচুর কিংবা গাড়ী ও রেলে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনা ঘটায় কিনা। এমনি নানাবিধ আশংকায় রয়েছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশংকা প্রকাশ করে বলেন, মহাসমাবেশে লোকজন আসতে সরকার বাধা দিতে শুরু করেছে। হোটেল ভাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে বাসও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোটেল কক্ষ বিএনপি নেতাদের ভাড়া না দিতে চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে বাস মালিকদের চাপ দিচ্ছে সরকারদলীয় নেতারা।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় সরকারকে বলে দিতে চাই, হোটেল ভাড়া না পেলে আমরা রাস্তায় থাকব। বাস-গাড়ি না পেলে মানুষজন হেঁটে ঢাকায় আসবে। একে কেউ রুখতে পারবে না। সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ১২ মার্চ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি সফল হবে।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ১২ মার্চ মহাসমাবেশে শুধু বিএনপি নয়, সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করবে। তাই সরকার এ সমাবেশে বাধা দিলে বিএনপি নয় সাধারণ মানুষ তাদের ধাওয়া করবে। সরকার এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অরাজকতা তৈরি করতে চাইলে বিএনপি নেতারা তা প্রতিহত করবে। যে কোনো অরাজক পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘খবর আছে’ বলে জনগণকে আতঙ্কিত করে ১২ মার্চের মহাসমাবেশ বানচালের স্বপ্ন দেখছেন। এতে বাধা দিলে সারাদেশ মহাসমাবেশে পরিণত হবে। তখন সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু হবে।

বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক অভিযোগ করেন, ১২ মার্চ বিএনপির ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি বানচাল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। উল্টা-পাল্টা কিছু করলে খবর আছে, এটা বলে কী খবর আছে সেটি প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন। তবে ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করার কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করলে এর পরিণতি ভালো হবে না। এবং এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।