চল চল ঢাকা চল কর্মসূচী – সাড়ে তিন বছর পর গৌরনদীতে গণসংযোগে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপন দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর এলাকায় ফিরে বিএনপির চল চল ঢাকা চল কর্মসূচীর পক্ষে টানা তিনদিন গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করেছেন।Zahir Uddin Swapanদীর্ঘদিন পর সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনকে কাছে পেয়ে তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে প্রাণচঞ্চল্য ফিরে আসলেও ঘুম হারাম হয়ে গেছে দলের কতিপয় শীর্ষ নেতাদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূইয়ার সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির যে সকল নেতাদের ওপর ক্ষুব্দ হন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ৯০’এর গণঅদ্ভুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপন। এ কারনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বপন তার নিজের বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তখন মনোনয়নপত্র দাখিল করেও পরে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে বিএনপির দলীয় কর্মকান্ড থেকে স্বপন নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। ফলশ্রুতিতে অনেকটাই ঝিমিয়ে পরেন এখানকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

সম্প্রতি সংস্কার পন্থীদের ঘরে ফেরা নিয়ে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও দলের চেয়ারপার্সন বা মহাসচিবের পক্ষে প্রকাশ্যে কোন ঘোষনা না আসায় ঘরে ফিরতে আগ্রহী সংস্কারপন্থী নেতাদের কেউই এতদিনে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় হননি। সে ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে ২০০১ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সাংসদ এম. জহির উদ্দিন স্বপনের বেলায়। তিনি গত ১ মার্চ সকালে নিজ এলাকা গৌরনদীতে আসেন। তার (স্বপনের) এলাকায় ফেরার খবরে বিএনপির হাজার-হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ছুটে আসেন তার সাথে দেখা করার জন্য। ওইদিনই তিনি খালেদা জিয়ার ঘোষিত চল চল ঢাকা চল কর্মসুচীর পক্ষে গণসংযোগে নেমে পরেন। একটানা তিনদিন তিনি গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া, বাটাজোর, সরিকল ও নলচিড়া ইউনিয়নে ঢাকা চল কর্মসুচীর পক্ষে জনমত গঠন ও কর্মসূচীতে সাধারন জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। সাবেক এ সাংসদ একাই খালেদা জিয়ার পক্ষে গণসংযোগ করলেও অন্যকোন কেন্দ্রীয় নেতাকে মাঠে পাওয়া যায়নি।

সাধারন নেতা-কর্মীদের ভাষ্যমতে, যারা এ আসনের মনোনয়ন চান তারা ঢাকায় বসে ব্যবসা বানিজ্যে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দল গোছানোর কাজে তাদের কাউকেই কখনো মাঠে পাওয়া যায়নি। সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের গণসংযোগকালে তার সাথে ছিলেন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এ খালেক, নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জামাল উদ্দিন ফকির, গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি মিজানুর রহমান খান মুকুল, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি সরদার ওয়াহিদ আল মামুন লাভলু, সাবেক সাধারন সম্পাদক সাইদুর আলম খান সেন্টু, পৌর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোঃ শামিম খলিফা, আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোঃ আলী হোসেন স্বপন, গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোঃ জাফর ইকবাল, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন রাজা, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি কে.এম আনোয়ার হোসেন বাদল, সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক আকবর মোল্লাসহ বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

চারটি ইউনিয়নে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের মাত্র তিনদিনের গণসংযোগ ও পথসভায় ঝিমিয়ে পরা গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার দাবি করে সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক আকবর মোল্লা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। এই সাড়ে তিন বছরে এখানকার বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের বর্তমান নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও দলের পদ পদবী নিয়ে কাড়াকাড়ি ছাড়া সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনে সামান্যতম ভূমিকাও রাখতে পারেনি। আর মাত্র তিনদিন এলাকায় অবস্থান করে গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে জহির উদ্দিন স্বপন নেতা-কমীদের মনোবল যেভাবে চাঙ্গা করে দিয়েছেন তার প্রভাব কি তা আপনারা আগামি ১২ মার্চের রাজপথের কর্মসূচীতে দেখতে পাবেন।

বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন এলাকায় ফিরে পুনরায় দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করায় দলের তৃনমূল পর্যায়ের সাধারন নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রানচাঞ্চল্য ফিরে আসলেও ঘুম হারাম হয়ে গেছে এখানকার পদ পদবী নিয়ে কাড়াকাড়ি সুবিধাভোগী কতিপয় র্শীর্ষ নেতা ও তাদের সমর্থকদের।