দুই বার কাজ বন্ধের নির্দেশ অমান্য – নিন্মমানের নির্মান অযোগ্য সামগ্রী দিয়ে ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্থবায়ন করেছে আ.লীগ নেতারা

জহুরুল ইসলাম, গৌরনদী ॥ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকল্প বাস্থবায়নে শত ভাগ নিন্মমানের নির্মান অযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করে প্রাড়ে ৩৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্থবায়ন করছেন ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতা ও ঠিকাদার। কর্তৃপক্ষ দুই বার নির্মান কাজ বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করার পরেও তা উপেক্ষ করে ঠিকাদার তার লোকজন নিয়ে সড়ক নির্মান কাজ অব্যহত রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের হাতে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগের দুই কর্মকর্তা নাজেহাল হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের সড়ক নির্মানকে কেন্দ্র করে।

সরেজমিনে গিয়ে  স্থানীয় লোকজন , এলজিইডি ও সংশিলষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের এলজিইডি জিবিপি ২০১০ইং-২০১১ইং অর্থ বছরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের “পূর্ব গরঙ্গল স্লুইস গেট হইতে মাহারের বাড়ি ভায়া নলচিড়া বাজার কলাবাড়িয়া মকবুল মেম্বরের বাড়ি রাস্তা বিসি ও মাটি দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্প”। এক হাজার মিটার দৈর্ঘ সড়কটি বাস্থবায়নে  ২০১০ সালে মে মাসে টেন্ডার আহবান করা হয়। ২০১০ সালে ৮ জুন সম দরে ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৩শত ৭১ টাকায় প্রকল্প বাস্থবায়নে মেসার্স শাওন ট্রেড সিন্ডিকেটকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে ২৯ জুন কাজটি শুরু করে ২৮ অক্টোবর ২০১১ কাজ শেষ করার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানান, ঠিকাদার কাজটি না করে দীর্ঘ দিন ফেলে রাখে। পরবর্তিতে প্রকল্প বাস্থবায়নের জন্য ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ইং পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির আবেদন করে ওই মাসেই তরঘিড়ি করে নির্মান  কাজ শুরু করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বিল হিসেবে ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে ও নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন। এমনকি প্রকল্প বাস্থবায়নের কোন নীতিমালা মানছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সহিদ খান (৩৮), স্কুল শিক্ষক মোঃ জসিম হাওলাদার (৪২) গরঙ্গল গ্রামের মোঃ আলতাফ হোসেন (৫০) কলাবাড়িয়া গ্রামের মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫) অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক উন্নয়ন কাজে নিয়মনীতি লংঘন করে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্থবায়ন করেছেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, ঠিকাদার সড়ক উন্নয়ন কাজে বেড তৈরী করতে ৮ ইঞ্চি স্যন্ড ফিলিং (বালু ভরাটের)র  কথা থাকলে ঠিকাদার কোন বালু ভরাট করেননি। রাস্তার কেটে মাটি তুলে ওই মাটি দিয়েই বেড তৈরী করেছেন। এছাড়া সাববেইজ করতে খোয়ার পরিমান কম দিয়ে অধিকাংশ বালু দিয়ে করেছেন। এ ছাড়া পচা ইটের খোয়া মিশিয়ে সাববেইজ করা হয়। ন্মিমানের পচা ইট দিয়ে পুরো রাস্তার মেকাডম তৈরী করেছে। মেকাডম তৈরীতে ৬ ইঞ্চির স্থলে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি খোয়া ফেলা হয়। স্থানীয়রা জানান, এ ব্যপারে একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরে ঠিকাদার অব্যাহতভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৩১ জানুয়ারি ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয়রা গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে প্রকৌশলী ও প্রকল্পের তদারকি কাজে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রহমানকে কাজ বন্ধের দাবিতে লাঞ্চিত করে।

সরেজমিন গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায়, সড়কটির পুরো এক হাজার মিটারের স্যান্ড ফিলিং ও সাব বেইজ সম্পূর্ন বাস্থবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরাতন পচা ইটের খোয়া দিয়ে প্রায় ৮শ মিটারে ওয়াটার বাউন্ড মেকাডম (WBM) করার জন্য খোয়া ফেলানো হয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রহমান জানান, প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী স্যন্ড ফিলিং ৮ ইঞ্চি, সাব বেইজ ৬ ইঞ্চি, WBM ৬ ইঞ্চি করার কথা রয়েছে। স্যন্ড ফিলিং, সাববেইজ ও WBMসহ ২০ ইঞ্চি থাকার কথা থাকলে পূর্ব গরঙ্গল রহিম হাওলাদারের বাড়ির ব্রিজের কাছে সব মিলিয়ে ১১ইঞ্চি পাওয়া যায়। একই গ্রামের কবির হাওলাদারের বাড়ির উত্তর পাশেসহ কয়েকটি স্থানে আড়াই ইঞ্চি থেকে তিন ইঞ্চি মেকাডম পাওয়া যায়। পূর্ব গরঙ্গল জাহে আলমের বাড়ির সামনে গর্ত করে  সাববেইজে সামান্য কিছু ইটের অংশ পাওয়া যায়। গোটা রাস্তায় বেডে ফালানো খোয়া পুরাতন ইটের পচা খোয়া।

নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার ও আওয়ামীগ নেতারা দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম দূর্নীতি ও নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে উন্নয়ন সম্বন্ময় কমিটির সভাসহ সংশিষ্ঠ দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করার পরেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। অভিযোগের ব্যপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাওন ট্রেড সিন্ডিকেটের মালিক মোঃ লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ হলেও মূলত কাজটি করেছেন ঠিকাদার ও আওয়ামীলীগ নেতা কাজী হেমায়েত হোসেন ও ফরহাদ মুন্সি। প্রকল্প বাস্থবায়নকারী ঠিকাদার মোঃ হেমায়েত হোসেন ও ফরহাদ মুন্সির  কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, অভিযোগের আংসিক সত্যতা রয়েছে। খোয়া সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের অজান্তে পচা খোয়া সরবারহ করেছে। নিন্মানের সামগ্রী অপসারন করে নেয়া হবে।

প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ বজলুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এক দিকে  ঠিকাদার নির্দেশ মানছেন না অপরদিকে স্থানীয়রা আমার মাকে তুলে অশ¬ীল ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে। আমি অসহায়।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়েই এ প্রসঙ্গে এলজিইডি গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনর কাছে জানতে চাইলে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার তিনি বলেন, সম্পূর্ন কাজে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্থবায়নে নিয়মনীতি লংঘন করার অভিযোগে ঠিকাদারকে একাধিকবার কাজ বন্ধ করে মালামাল অপসারনের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ বন্ধ না করে অব্যহতভাবে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন আমার কি করার আছে? আমি কি ঠিকাদারের সাথে মারামারি করবো? গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।