আগৈলঝাড়ায় খালের দু’পাশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও নদী খালগুলোতে পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় ইরি-বোরো চাষাবাদ ব্যাহত

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা ॥ আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন খালের দু’পাশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা ও নদী, খালগুলোতে পলি পরে ভরাট হওয়ায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। একারণে উপজেলার চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ৮’শ ১৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফসল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার মে. টন চাল। তবে সেচ সংকটের কারনে উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে ৩০ হাজার ৯’শ ৬৯ মে. টন। খালগুলোর দু’পাশ দখল ও নদী-খালে পলি পরে ভরাট হওয়ায় পানি সল্পতার কারণে স্বাভাবিক চাষাবাদ ব্যহত হওয়ায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কৃষকের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসে অনেক আগেই প্রকল্প দাখিল করলেও আজও ওই প্রকল্প লাল ফিতায় বন্দি রয়েছে।

বরিশাল জেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, কৃষি নির্ভর আগৈলঝাড়ায় গত দুই যুগেও মরা খালগুলো পুনঃ খননের উলে¬খযোগ্য কোন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কৃষকরা বছরের পর  বছর পানি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছে। সেচের জন্য উপজেলার আভ্যন্তরীণ ২৭টি প্রকল্প আওতায় ৮৬ কি. মি. খালের বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকদের পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল পুনঃ খননের জন্য প্রকল্পগুলো গত দু’বছর আগে দাখিল করলেও তা এখনও লাল ফিতায়ই বন্দি রয়েছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নদী ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় জনসাধারণ চাষাবাদে ঠিকমত সেচ দিতে না পারায় সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উপজেলার পয়সারহাট নদী বালুতে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঢাকাগামী লঞ্চ ও নৌচলাচল ব্যাহত হওয়াসহ পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। ফলে বর্তমান ইরি-বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পানির সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। অনেকস্থানে খাল শুকিয়ে যাওয়ায় আগামী চৈত্র মাসে ওইসব খালে কোন পানি থাকবেনা বলে আশংকা করেছেন কৃষকরা। যার ফলে ওই সমস্ত স্থানের ইরিব্লকে পানি সরবরাহে দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটবে। উপজেলার অনেকস্থানে খালের দু’পাশে দোকানঘর তুলে, দোকানের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ খালের মধ্যে দেয়াল দিয়ে স্থাপনা বর্ধিত করায় পানি প্রবাহের গতিরোধ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের খাল-গৈলা-চাঁদশী-গৌরনদী খালটির দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এসব স্থাপনা নির্মাণে সরকারীভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও প্রভাব খাটিয়ে আগৈলঝাড়া বাজারে বিভিন্ন স্থানে স্থাপনার নির্মাণ করছেন। বিগত সরকারের সময় উপজেলার ৪টি খাল পানি উন্নয়ন বোর্ড নামেমাত্র খনন করে সরকারী অর্থের ব্যাপক অপচয় করেছে। ফলে সেসব খাল বছর যেতে না যেতেই ভরাট হয়ে গেছে। বিগতদিনে কৃষকদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক মন্ত্রণালয়সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৮ দফা সুপারিশ জানানো হলেও আজ পর্যন্ত সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন বা আলোর মুখ দেখেনি। ওই সুপারিশমালা বাস্তবায়িত হলে স্থায়ী বন্যামুক্ত বসবাস, সেচ ও নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। উপজেলায় গ্রামীন শাখা খালগুলোর ২৭টি প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৮৬ কি.মি. খাল খনন জরুরী হয়ে পরেছে। এ খালগুলোতে অতীতের মত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগৈলঝাড়া উপজেলায় অদূর-ভবিষ্যতে পতিত জমির পরিমান বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন সহসাই কমে যাবে বলে কৃষিবিদদেরা আশংকা করছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর পূর্বে খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারী অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।

কাবিখা, কাবিটা, টিয়ার সহ এডিপি ও এলজিইডি বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও শাসক দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদাসিনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে খাল খননের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে সেচ ব্লকের ড্রেন নির্মান, গ্রামীণ সড়ক মেরামত, পারিবারিক কবস্থান পাকা করণ, ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, সহ উপজেলা সদরে বিভিন ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কাগজে কলমে কাজ দেখানো হচ্ছে। বর্তমান সরকারের কাছে উপজেলার কৃষক ও জনসাধারণ ভরাট খালগুলো খনন করে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস জানান, খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হওয়ায় আমরা আইনগত ভাবে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। এভাবে স্থাপনা নির্মাণ চললে আগামী মৌসুমে পানি চলাচল প্রচন্ডভাবে ব্যাহত হবে।