মেডিটেশান

আপনি যদি মানসিক চাপ এবং স্ট্রেসে ভুগে থাকেন এবং ডাক্তারের কাছে যান, অনেকসময় ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দেন মেডিটেশান/ধ্যান করার জন্য। মেডিটেশান করার জন্য ২টা জিনিস সবচে বেশি জরুরি।

১/ একটি ভাল মেডিটেশান গাইড (হতে পারে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি, বই, ভিডিও, অডিওটেপ, মিউজিক, অথবা মেডিটেশান সেন্টার) এবং

২/ মেডিটেশান কি এবং এর লক্ষ্য?

মেডিটেশান বা ধ্যান হলো একটি তিনধাপ বিশিষ্ট প্রক্রিয়া যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে আনন্দপূর্ণ, শান্ত, পরিস্কারও চাঙ্গা করে তোলে।

উপরের লাল বৃত্তটি লক্ষ্য করুন। আমাদের মন সাধারণত এই দশাতেই থাকে। বলা হচ্ছে সাধারণ দশা, কিন্তু মনের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে এটা একটি অস্বাভাবিক দশা। বৃত্তের যেকোনো একটি বাহু এদিক সেদিক হয়ে গেলেই আমাদের মনের ওপর চাপ পড়ে, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এতে আমাদের মনের অবস্থা হয় করুণ!

সবুজ বৃত্তটি হচ্ছে মূলত মেডিটেশানের ১ম ধাপ। এই ধাপেই মূলত আপনি আপনার মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা শুরু করবেন। মনে রাখবেন, আপনার অবচেতন মনই আপনার শরীরের কর্তা। তার ওপর আপনার আত্মিক নিয়ন্ত্রণ আনতে বেশ সময় লাগবে। চেষ্টা করুন মনোযোগ আনতে।

আপনার প্রিয় কোনো বিষয় নিয়ে ভাবুন। গভীর ভাবে ভাবুন। ভাবতে ভাবতে দেখবেন আপনি স্মৃতি হাতড়ে মূলভাবনা থেকে বহুদূরে চলে গেছেন। আপনার চেষ্টা থাকবে, একজন দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই দূরে চলে যাওয়া আপনার সত্ত্বাকে অবলোকন করা। মনোযোগ বার বার ভেঙ্গে যেতে চাইবে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তাকে ধরে রাখতে হবে। আপনি নিজেই নিজের একজন দর্শক।

ধ্যানের দ্বিতীয় ধাপ হলো মধ্যবর্তী দশা। যেখানে আপনার দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চিন্তাধারার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে কোনো তৃতীয় বস্তু মনোযোগে ব্যঘাত ঘটাবে না।

একটি তেলের শিশিকে আলতো করে কাত করে ধরলে প্রথমে ফোঁটা ফোঁটা তেল পড়ে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে। এবং তখন সেই তেল এদিক সেদিক ছিটকে যায়। কিন্তু কিছু সময় পরে ঠিকই তেলের ধারা অব্যাহতভাবে পড়তে থাকে, এবং তা আর ছিটকে যায় না।

আপনার মনোযোগও সময়ের সাথে হয়ে যাবে ঠিক এরকম। কোনো প্রকার বিক্ষেপনই আর কাজ করবে না। আপনার লক্ষ্য ঠিক থাকবে।

তৃতীয় এবং সর্বশেষ দশাটি হলো চূড়ান্ত পর্যায়। ধ্যানের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে আপনার মনের ভেতর থেকে আপনাআপনিই একটা সুখ কাজ করবে। অনেক অনেক অপার্থিব, মহাজাগতিক চিন্তা ভাবনা মাথায় আসবে। আত্ম উপলব্ধি জাগ্রত হবে। আপনার ভেতর থেকে আসল আপনাকে আবিস্কার করবেন আপনি। সকল কাজে দেখবেন শুধু ভাললাগা। চিন্তামুক্ত জীবন।

বিভিন্ন মেডিটেশান সেন্টারে প্রচুর পরিমাণ টাকা নেয়া হয়, যা সবার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব না। এজন্য নিজে নিজে শিখুন, ঘরে বসে চেষ্টা করুন।

– প্রতিদিন করুন। সূর্যোদয়ের সময় করতে পারলে অনেক লাভ। তখন আপনি যে অক্সিজেন, আবহাওয়া, আলোটা পাবেন, মেডিটেশানের জন্য তা সবচেয়ে উপযুক্ত।

– অন্যান্য সময় মেডিটেশান করতে হলে আপনার পছন্দের হাল্কা মিউজিক ছেড়ে রাখতে পারেন।

– চোখ বন্ধ করে, ক্লাসিক ধ্যানের আসনে বা আপনার সুবিধা ও আরামপ্রদ স্টাইলে বসে মেডিটেট করবেন। যোগব্যায়ামের শবাসনেও করতে পারেন।

– শ্বাস প্রশ্বাস নিয়মিত রাখবেন। লম্বা করে আস্তে আস্তে শ্বাস নিন। দ্বিগুণ সময় ধরে ছাড়ুন। এতে মনোযোগ দ্রুত আসে।

– মেডিটেশানের সময় যাবতীয় বাহ্যিক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজন বেশি না হলে মোবাইল সাইলেন্ট/অফ করে রাখুন।

– কত সময় ধরে মেডিটেশান করবেন, তা আপনার ব্যাপার। যতক্ষণ ভাল লাগবে করতে পারেন। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

– নিয়মিত মেডিটেশান করলে শুধু মানসিকই নয়, শারীরিক উপকারিতাও পাওয়া যায়।
আপনার ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে অসাধারণ কাজ করবে এই মেডিটেশান।

ইন্টারনেটে এর উপর প্রচুর বই এবং ভিডিও পাবেন। দেখুন এবং শিখুন। এবং শুধু শিখেই বসে থাকবেন না! ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগান! 🙂

আপনাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য কামনায়,

🙂
স্বাস্থ্যকথন টীম