রেল দূর্ঘটনা, অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত দূস্কৃতকারীদের চিহ্নিত ও শাস্তি প্রদানের দাবি পবা’র

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, সিলেট ॥ দীর্ঘ অবহেলা, উপেক্ষা আর ষড়যন্ত্রের শিকার যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় মাধ্যম বাংলাদেশ রেলওয়ে নতুন মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণের নিকট অধিক আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে সেই মুহুর্তে রেল দূর্ঘটনা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এ ধরনের ২২টি ঘটনা ঘটেছে। যার বেশিরভাগই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। যা রেলের প্রতি জনসাধারণের অনাস্থা সৃষ্টির একটি অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জনগনের মালিকানাধীন রাষ্ট্রীয় সম্পদ রেলের বিরুদ্ধে তারাই এ রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, রেলের উন্নয়ন হলে যাদের মানুষকে জিম্মি করে বাণিজ্য করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বাধীনতাত্তোর সড়ক পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রেল তথা জনসাধারণের স্বার্থ ক্ষুন্ন হযেছে। তাই অবিলম্বে রেল দূর্ঘটনা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের দাবি করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। ১৫ মার্চ ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রুমে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে ‘সাম্প্রতিক রেল দূর্ঘটনা, অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর’ বিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিযোগ তুলে ধরেন।

নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে জানান, গত ২৪ জানুয়ারি ময়মনসিংহ এর গৌরীপুর স্টেশনের আউটার সিগন্যালে বিদ্যূত না থাকায় দাঁড়িয়ে পড়া রেলগাড়িতে ডাকাতি এবং তাকে ভিত্তি করে দুস্কৃতকারীরা যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়, তা ছিল সম্পূর্ণ সাজানো এবং যার পেছনে একটি ষড়যন্তকারী চক্র জড়িত রয়েছে। কারণ সকল আলামত, সময়, ঘটনার পরম্পরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এটি স্পষ্ট যে ডাকাতি এবং অগিসংযোগ এই দুই ঘটনার মধ্যে আন্তসম্পর্ক রয়েছে। মূলত রেলের যাত্রীদের মধ্যে রেল সম্পর্কে এক ধরনের ভীতিকর মনোভাব তৈরির লক্ষ্যে প্রথমে ডাকাতি এবং পরবর্তী সময়ে সেই ঘটনার দোহাই অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়।

এটি পরিকল্পিত কারণ, প্রথমত গৌরিপুরের আউটার সিগন্যালে ডাকাতি হলেও সেখানে কোন প্রকার অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি।

দ্বিতীয়ত, সেখানে গভ. রেলওয়ে পুলিশ পৌঁছার পূর্বেই রেলগাড়ি স্টেশেনে ঢুকে পড়ে এবং দুই/তিন মিনিট অবস্থান করে পরের গন্তব্যে ছেড়ে যায়।

তৃতীয়ত, পরবর্তী বিসকা স্টেশনে রেলগাড়ি থামলে যে সকল যাত্রী নেমেছে ও স্টেশনে অবস্থানকারী সেখানে কেউ আগুন দেখেনি এবং সেখান থেকে তেমন কেউ ওঠে নি।

চতুর্থত, যে বগিটি আগুনে পুড়েছে তা সাধারণত স্টিল, কাঠ আর ঢালাই দিয়ে তৈরি, যা কোন সাহায্যকারী/দাহ্য পদার্থ ছাড়া আগুন লাগানো সম্ভভ নয়। পঞ্চমত, বিসকা স্টেশনে যখন রেলগাড়ি থামে তখন আগুন লাগা বগিতে কোন যাত্রী ছিল না। সবশেষে যেটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রেলের ওই কামরায় আলোর ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে অগ্নিসংযোগকারীরা প্রথমে ডাকাত সেজে যাত্রীদের মধ্যে অবস্থান করে এবং উক্ত বগি খালি হলে সম্ভূগঞ্জ স্টেশনে ঢোকার পূর্বে রেলগাড়ির গতি কমে এলে তারা আগুন দিয়ে নেমে পড়ে। কারণ বেশি আগে আগুন দেওয়া হলে বাতাসে অন্যান্য বগিতে ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান বলেন, প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক বা সড়ককেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সারা পৃথিবীতে পরিবহণ খাত দূষণ সৃষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, শুধুমাত্র যানবাহন চলাচলজনিত কারণেই ২৫ শতাংশ কার্বণ নির্গমণ হয়ে থাকে। রেলে একসঙ্গে অনেক যাত্রী বহন করা যায় বিধায় মাথাপিছু দূষণের পরিমাণ কম। এছাড়া রেল নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। তাই পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ রেলের উন্নয়ন জরুরী। কিন্তু রেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা না গেলে সেই কাজটি করা খুবই কঠিন। এই বছরেই মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে রেলে প্রায় ২২টি দূর্ঘটনা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এজন্য এর সঙ্গে জড়িতদের অতিদ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান আনা জরুরি। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নীতি বিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না এবং পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন।