ভোক্তা অধিকার ও ভেজাল পণ্য

নাজমুল হক ॥ যার কোন দ্রব্য বা পণ্য ভোগ করে তাদের ভোক্তা বলে। ‘ ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের অনেক উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের ভোক্তা অধিকার আইন রয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান ইত্যাদি দেশে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের নির্দিষ্ট আইন অনেক আগেই প্রণীত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ১৯৮৬ সালে এবং শ্রীলঙ্কায় ১৯৭৯ সালে কনজ্যুমার প্রটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করে। আগে বাংলাদেশে এ রকম ভোক্তা অধিকার আইন না থাকলেও ভোক্তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু আইন বিদ্যমান ছিল। এ আইনগুলোর মধ্যে রয়েছেথ ড্রাগ অ্যাক্ট-১৯৪০ অ্যাসেনশিয়াল আর্টিকেল (প্রাইজ কন্ট্রোল) অ্যান্ড অ্যান্টি হরডিং অ্যাক্ট-১৯৫৩, কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট-১৯৫৭, পিউর ফুড অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯, অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটি অর্ডার-১৯৭৩, স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট-১৯৭৪, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অব ওয়েটস অ্যান্ড মেজারস অর্ডিন্যান্স-১৯৮২, বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৮২, ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট ১৯৮৫ প্রভৃতি আইন। এসব আইনে দেশের ভোক্তারা উপকৃত হলেও প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না।

আমাদের দেশের ভোক্তাদের এক নম্বর সমস্যা হল ভেজাল খাদ্য। দেশের এমন কোন খাদ্য পাওয়া যাবে না যেখানে ভেজাল নেই। ভেজালের রাজ্যে এখন ভাল পণ্য পাওয়া দুষ্কর। দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযানে মানুষ স্বস্থির নিঃস্বাস ফেলেছিল। মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছিল। মানুষ জানতে পেরেছিল ভ্রাম্যমান আদালতের জনক রোকউদ্দীনের মাধ্যমে আমরা কি খাচ্ছি। যেখানে খাওয়ার তৈরি করা হয় তার পরিবেশ কি? সেখানে জিনিপত্রগুলে াকিভাবে রাখা হয়।

আমার ভ্রাম্যমান আদালতের ৫/৬ টি অভিযানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানে অধিকাংশ পণ্যের গায়ে মেয়াদের তালিখ নেই। নেই পণ্যের মান যাচাইয়ের কোন যন্তপাতি। বেশিরভাগ কারখানায় কেন রকম পরিবেশ নেই পণ্য তৈরি করার। কিন্তু তারপরও পণ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা ভেয়ে যাচ্ছি। এখন যদি ভাল খাটি পণ্য হাজির করা হয় তবে ভেজালের ভিড়ে আমাদের মনে হবে এটিই মনে হয় ভেজাল। কারণ আমরা ভেজাল পণ্য খেয়ে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি। খাটি পণ্য পেটে সবে না।

আজকের ভোক্তা অধিকার দিবসে আমাদের প্রত্যাশা ভেজাল মুক্ত পণ্য। ভেজাল দ্রব্য শরীরে এমন ক্ষতি করে যা অপূরনীয়। বিখ্যাত চিকিৎসাক ইবনে সিনা বলেছেন, মানুষের শরীরে এমন দুষিত পণ্য যদি না ঢুকত তবে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে জীবিত থাকত। অর্থাৎ ভেজাল পণ্য আমাদের ধীরে ধীরে মরণের দিকে ধাবিত করে। আমরা এ সব পণ্য খেয়ে মরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কোন মানুষ মরণ চাইতে পারে না। রাষ্ট্রের সকলে কম বেশি এসব পণ্য গ্রহণ করে। ঢাকা শহরে এর মাত্রা আরো বেশি। গ্রামে পণ্যের বিশুদ্ধতা থাকলেও শহরে আরো কম । বিভিন্ন ক্যামিক্যাল দিয়ে পণ্যকে ভালো রখার চেষ্টা করা হয়। ফলে সেখানে ফরমালিনের মত বিষ দেওয়া হয়। এ সব পণ্য ভক্ষণ করে অস্বুস্থ হয় অনেকে।

খাদ্যে ভেজাল দিলেও সরকার এর বিরুদ্ধে তোমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বিচ্ছিন্ন দু‘একটি অভিযান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। প্রত্যেক বছর সরকার নির্দিষ্ট সময় ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। আর তা হল রমজান মাসে। যেন ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে সকল ভেজাল দিয়ে থাকে। রমজান সংযমের মাস হলেও ব্যবসায়ীরা ভেজাল বদ্ধ করে না। তবে তারা আগে থেকে জেনে যায় এই মাসে অভিযান আসতে পারে। অন্যদিকে সরকার এই মাসে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এই মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে মাসে বাংলার মানুষ কিছু খায় না। বাকী ১১ মাস তারা না খেয়ে থাকে। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ভোক্তা অধিকার আইনে ভোজালের সর্বচ্চ শান্তি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য কঠোর আইন প্রযোগ করতে হবে।

লেখক : নাজমুল হক, সাংবাদিক, রোভার স্কাউট ও কলাম লেখক