যুব সমাজের নতুন জগৎ ফেসবুক-টুইটার-গুগল

নাজমুল হক ॥ যুবসমাজ নতুন জগতে আবির্ভূত হয়েছে। যার ছোবল ভাসছে গোটা তরুণ সমাজ। ছোট বড় সকলে নেশার মত আসক্তি হচ্ছে এর দিকে। নতুন উপকরণের নাম ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম। অনলাইনের অধিকাংশ পাঠকই এ উপকরণের সাথে পরিচিত। যুম্মাজ আসক্ত না হলেও চরম আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিন আমরাও জড়িয়ে আছি এ নেশার সঙ্গে। আর এ নেশার জগতে আচ্ছন্ন হওয়াদের মধ্যে সিংহ ভাগই তরুণ সমাজ। অবশ্য যেভাবেই হোক এ জালে জড়িয়ে আছেন অনেক মধ্যবয়সীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা আচরণ গবেষণা সংশ্লিষ্ট ফার্ম এন্টার পেরিয়েন্সের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র বিশ্বনন্দিত পাবলিক রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনির্ভাসিটি অব মেরিল্যান্ড বিভিন্ন অঞ্চলের ১২টি কলেজের এক হাজার জন ছাত্রের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ মত দিয়েছেন গবেষকরা।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করলেও মনের অগোচরেই ব্যবহারকারীদের ক্রমেই নেশাগ্রস্ত করে তুলছে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক, টুইটার এবং সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল। জরিপ তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ফেসবুক, টুইটার এবং গুগলের মতো অনলাইনসেবীদের মধ্যে গড়ে ৫৩ জন বিচলিত হয়ে পড়ে। একই কারণে একাকীত্ব যাতনায় ভোগে শতকরা ৪০ জন। তাদের ভাষায়, হালে আসক্তির রাজ্যে যুক্ত হয়েছে নতুন একটি মাধ্যম। আর সেটি হচ্ছে ’ইন্টারনেট আসক্তি’। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এমন কাইকে খুজে পাওয়া যাবে না যার এ তিনটিতে একাইন্ট নেই। আর ফেসবুক, টুইটার আর গুগল ব্যবহারকারীদের মধ্যেই এ আসক্তিটা প্রবল। পর্যবেক্ষণে দেখা গছে এসব মাধ্যমে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া মাত্রই আপাদমস্তক মাতালের মতোই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। এ সম্পর্কে দি ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আচরণ গবেষণা সংশ্লিষ্ট ফার্ম এন্টার পেরিয়েন্সের প্রধান নির্বাহী পল হাডসন বলেন, অনলাইন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ক্রমেই আমাদের জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়ছে।

আমাদের দেশেও এ আসক্তি ব্যপক হারে ছড়িয়ে পাড়েছে। বর্তমান দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগ বয়সে তরুণ। অনেকে শুধুমাত্র ফেসবুক, টুইটার ব্যবহার করার জন্য এর হিসাব সংরক্ষণ করার জন্য বা সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর এ শ্রেনীর বেশির ভাগ হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী। কোন কাজ না থাকলে বর্তমানে এক শ্রেনীর যুব সমাজ দিনভর ফেসবুক ও টুইটারের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। আবার অনেকে কাজ বন্ধ করে সারাদিন বিভিন্ন কমেন্ট করতে ব্যস্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে পড়াশুনার যে শুধু ক্ষতি হয় তা না বরং দিনে দিনে আসক্তি বাড়তে থাকে। তবে এ কথা ঠিক যে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের জন্য এগুলোর বিকল্প নেই, তবে যুবসমাজ আজ যে ভাবে এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এর বিকল্প খোঁজার সময় এসেছে। এ আসক্তির সাথে নতুন করে যোগ হচ্ছে এ মাধ্যমে ভূয়া একাউন্ট খোলা। প্রায়ই দেখা যায় কোন ছবি দিয়ে, ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে একাউন্ট খোলা হচ্ছে। তবে এ তালিকায় রয়েছে ছেলেরা বেশি এগিয়ে। তারা বিভিন্ন ছবি ডাউনলোড করে ফ্যাক আইডি খুলছে। এর এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পর্ণোগ্রাফী। যা বর্তমানে উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এক শ্রেণীর টিন এজরা এ কাজগুলো করে সামাজিক যোগাযোগকে বিতর্কিত করে তুলছে। অভিভাবকদের কাছে ফেসবুক, টুইটার একটি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে একথা ঠিক যে কেবল আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কেই ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করছে না, একই সঙ্গে আমাদের পরিবারিক জীবন, কর্মস্থল এবং ক্রয়-বিক্রয় অভ্যাসেও দারুণ প্রভাব ফেলছে। ফেসবুক, টুইটার এবং গুগলের মতো গেজেটগুলো যেন বিনে সুঁতোর মতোই আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলেছে। প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ গড়ে উঠছে। মানুষ বর্তমানে মোবাইলে এ সব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরো দক্ষ ও জ্ঞান আহরণ করতে পারছে। প্রযুক্তির সুবিধা হাতের নাগালে চলে এসেছে। বাংলাদেশ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তবে এ কথা সত্য, এর সাথে আমরা এতোটাই লেপ্টে রয়েছি এটা এখন আসক্তি পর্যায়ে পৌছে গেছে।

লেখক : নাজমুল হক,  রোভার স্কাউট, সাংবাদিক ও কলাম লেখক