সরকারি গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তীব্র শিক্ষক সংকট – পাঠদানসহ সামগ্রিক কার্যক্রম ব্যাহত

বিএম রিপন, গৌরনদী ॥ উত্তর বরিশালের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা লাভের একমাত্র সরকারি বিদ্যাপিঠ সরকারি গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তীব্র শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানসহ সামগ্রিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের শুন্যপদ পূরণের দাবিতে একাধিকবার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিল।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ গৌরনদী কলেজটি সরকারি করন করেন। একাদশ, দ্বাদশ, স্নাতক ও ৪টি বিষয়ে অনার্সসহ কলেজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। কলেজে ১জন অধ্যক্ষ, ১জন উপাধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, প্রদর্শকসহ মোট ৫৫ জন শিক্ষকের সৃষ্ট পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৩৪টি শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা বিভাগ, প্রানী বিদ্যা বিভাগ, শরীর চর্চা বিভাগে কোন শিক্ষক নেই। কলেজে বর্তমানে ১জন অধ্যক্ষ, ১জন উপাধ্যক্ষসহ ২১ জন শিক্ষক কর্মরত আছে।

উত্তর বরিশালের এক কালের ঐতিহ্যবাহী সরকারি এ কলেজটির বাংলা বিভাগে ১জন সহযোগী অধ্যাপক, ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২ জন প্রভাষকসহ মোট ৪টি পদের মধ্যে মাত্র ১জন প্রভাষক কর্মরত আছেন। ইংরেজী বিভাগে ১জন সহযোগী অধ্যাপক, ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৪টি পদের বিপরিতে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষকসহ কর্মরত আছেন মাত্র ২জন শিক্ষক। অর্থনীতি বিভাগে ১জন সহযোগী অধ্যাপক, ১জন সহকারী অধ্যাপক, ১জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১জন সহকারী অধ্যাপক। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ১জন সহযোগী অধ্যাপক, ১জন সহকারী অধ্যাপক, ১জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ১জন সহকারী অধ্যাপক। দর্শন বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন প্রভাষক। ইতিহাস বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ১জন সহকারী অধ্যাপক। ইসলামের ইতিহাস ও সংকৃতি বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ১জন সহকারী অধ্যাপক। ইসলামী শিক্ষা বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরীতে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষকসহ কর্মরত আছেন মোট ২জন শিক্ষক। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের বিপরীতে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষকসহ মোট ২জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। গনিত বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৩টি পদের সব কটি পূর্ন আছে। রসায়ন বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষক ও ১জন প্রদর্শকসহ মোট ৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন প্রভাষক। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষক ও ১জন প্রদর্শকসহ মোট ৪টি পদের বিপরীতে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষকসহ কর্মরত আছেন মাত্র ২জন শিক্ষক। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ১ জন অধ্যাপক, ১জন সহযোগী অধ্যাপক, ১জন সহকারী অধ্যাপক, ২জন প্রভাষকসহ মোট ৫টি পদের সব কটি শুন্য রয়েছে। তাই মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের কয়েক জন শিক্ষার্থী বদলী হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছে।

প্রানী বিজ্ঞান বিভাগে কোন পদই সৃষ্টি হয়নি। কলেজ গ্রন্থাগারে ১জন গ্রন্থাগারিকের পদ থাকলেও সেটি শুন্য রয়েছে অনেক দিন যাবত। বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬/৭টি ক্লাশ নিতে হয়। একার পক্ষে তা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে বাংলা বিভাগে অনার্সের শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ সামগ্রিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভূইয়া বলেন, শিক্ষকদের শুন্যপদ পূরণের দাবিতে সাধারন শিক্ষার্থীরা গত ৬ মাস পূর্বে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, ক্লাশ বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় এবং কলেজে তীব্র শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানসহ সামগ্রিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ হাওলাদার বলেন, শিক্ষকদের শুন্যপদ পূরণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব ও স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসে কাছে একাধিক বার আবেদন করেও কোন সমাধান পাইনি। কি আর করব, এখন অতিথি শিক্ষক দিয়ে মাঝে মধ্যে শুন্য বিভাগ গুলোর শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হচ্ছে।