বরিশালবাসীর বিনোদনের নতুন মাত্রা মুক্তিযোদ্ধা পার্ক

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরনীয় করে রাখতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। স্বাধীনতার পরবর্তী দীর্ঘ ৪০ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি পূরন হওয়ায় বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এতদাঞ্চলের রনাঙ্গণ কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ভ্রমন পিপাসুরা। বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি ও সাধারন জনগনের কাছে মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে। প্রতিদিন এ পার্কে ভ্রমনে আসা ভ্রমন পিপাসু সকলেরই এখন একটাই দাবি জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সুত্রে জানা গেছে, সিটি করর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের দাবির মুখে ও মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে মেরিন ওয়ার্কশপ এলাকায় ২০১০ সনে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক তৈরির কাজ শুরু করা হয়। ওই সময় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন। পার্কটি গত ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর আমাদের দাবি ছিলো এ মুক্তিযোদ্ধা পার্ক নির্মানের জন্য। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্কটি উদ্বোধন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সে দাবি পুরন করেছেন। মুক্ত বাতাস, ফুলের বাগান এবং মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ মুগ্ধ করে পার্কে বেড়াতে আসা সাধারন দর্শনার্থীদের।

নগরীর কাউনিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে স্ব-স্ত্রীক ভ্রমনে আসা কন্ঠ শিল্পী আলমগীর কবির সোহাগ বলেন, খোলা আকাশের নিচে নির্মল বাতাশে প্রানের উচ্ছাস নেয়ার জন্যই এ পার্কে আসা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এহসান রাব্বি বলেন, পার্কটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে কীর্তনখোলা নদী ও মুক্ত বাতাস, তাই বিকেল বেলা পার্কে ছুটে আশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। ৪ হাজার ২’শ বর্গমিটার আয়োতনের পার্কটিতে বসার আসন রয়েছে ৬২টি। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সব শ্রেনীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে পার্কটি। নগরীর মধ্যে বিনামূল্যে বিনোদনের নতুন এ পার্কটি পেয়ে দর্শনার্থীরা আনন্দিত ও উচ্ছাসিত। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ পার্কে ভ্রমন পিপাসুদের ঢল নামে।

পার্কে আসা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শুভব্রত দত্ত বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এটাই আমার গর্ব। বাবা আজ দুনিয়াতে নেই। যখনই বাবার কথা বেশি মনে পরে, তখনই এ পার্কে ছুটে আসি। মুক্তিযোদ্ধা পার্কে আসলেই কেন যেন বাবার ঘ্রান আমি পেয়ে যাই। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে দাবি রেখে বলেন, আগামি বিজয় দিবসের পূর্বেই যেন মানবতাবিরোধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপ-সচিব নিখিল চন্দ্র দাস জানান, নগরীতে বিনোদনের তেমন কোন সুবিধা না থাকায়, মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ও সিটি মেয়রের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেছে সিটি কর্পোরেশন। পার্কটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বরিশালবাসীর বিনোদনের অভাব কিছুটা হলেও দূর হয়েছে এবং বিনোদনের জন্য এ অঞ্চলে নতুন একটি স্থায়ী ঠিকানা যোগ হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন বলেন, নগরবাসীর বাড়তি বিনোদনের কথা চিন্তা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি নির্মান করা হয়েছে। এখানে সর্বস্তরের মানুষ অবাধে ভ্রমন করতে পারেন। এ পার্ক তৈরির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা ও শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরনীয় করে রাখার এক নতুন মাত্রা উন্মচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।