হরতালে দেখা মেলেনি ঝালকাঠি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের

ঝালকাঠি সংবাদদাতা ॥ বিএনপির ডাকে সারাদেশ ব্যাপী আহুত হরতালে ঝালকাঠির সিনিয়র নেতাদের দেখা মেলেনি। দীর্ঘদিন ধরে ডিমেতালে এখানকার হরতাল ও দলীয় কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মাঠে নামছেনা। অনেকটা দায়সারা ভাবে দু’গ্র“প এখানকার দলীয় কর্মসূচী পালন করছে।

সবশেষ রোববারের হরতালে বুলি আউরানো নেতাদেরকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে দীর্ঘদিনের বিএনপির কান্ডারী মিঞা আহমেদ কিবরিয়া দুদিন আগ থেকে ঝালকাঠি-নলছিটির বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনে প্রস্তুতি সভা ও গনসংযোগ করছেন। এমনকি হরতালের আগের দিন তিনি মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানাগেছে, এখানকার দলীয় মনোনয়ন নিতে ইতমধ্যে বেশ ক’জন নেতা লবিং গ্র“পিং শুরু করছে। কিন্তু তারা দলের কোন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন কিংবা সহযোগিতা না করে শুধু কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে মোবাইলে জেলায় খোঁজ খবর পাঠাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেবা আহমেদ খান, সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো, এ্যাড. হোসেন আলী খান হাসান, ব্যারিষ্টার একেএম ফখরুল ইসলাম ও সম্প্রতি এলাকায় আসা আরেক নেতা নুরুল ইসলাম খান বাবুল।

তবে বর্তমান মহাজোট সরকার আমলে এখানকার বিএনপি দলীয় নেতা শিল্পপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া দলীয় সমর্থন পেতে আগ্রহী। তবে তিনি প্রকাশ্যে কাউকে না বললেও দলের মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী। এ কারনেই বিগত ৪-৫ বছর ধরে এ দুটি উপজেলার তৃনমূল মানুষের সাথে গনসংযোগ ও সভা সমাবেশ, দোয়ামিলাদ, কুলখানী ও বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। সহায়তা করছেন অসহায় অভাবগ্রস্থ পরিবারের লোকজনকেও।

সাবেক সংসদ সদস্য ইলেন ভূট্টো গত জোট সরকার আমলে কিছু দলীয় হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী ও জাপা নেতাদের অবৈধ সুবিধা প্রদান ও পার্সেন্টিজ বানিজ্যের কারনে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা দূরত্ব সৃষ্টি করে ফেলেছেন। আর সে কারনে দলের মাঝে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি এলাকায় আসতে ভয় পান। গত কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে তিনি গাড়ি বহর নিয়ে নলছিটি দপদপিয়া পর্যন্ত এগিয়ে আসার পর দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

অন্যদিকে বিএনপির ঐ কেন্দ্রীয় নেতা বিদেশ ফেরত জেবা আহমেদ খান ঢাকায় অবস্থান করছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে এলাকায় বিএনপির টি আহমেদ গ্র“পের সাথে সমঝোতা করে  কিছু কর্মসূচী পালন করে থাকেন। অন্যদিকে এ্যাড হোসেন আলী খান হাসান, ব্যারিষ্টার ফখরুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম খান বাবুল এলাকার দলীয় কোন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন না। তবুও তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেতে আশাবাদী। সম্প্রতি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে আরেক সাবেক ছাত্র নেতা  মাহবুবুল হক নান্নু। তিনি এক সময়কার বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে এখানকার রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন না।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া বলেন, দলের নেতাদের মাঝে মতবিরোধ থাকলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকা যেকোন কর্মসূচী  ঝালকাঠি-নলছিটিতে পালন করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নমিনেশনের জন্য রাজনীতি করিনা। আমি বেগম জিয়ার রাজনীতি করি। আমি কোন গ্র“পিংয়ে বিশ্বাস করিনা। হরতালে ঐ সকল নেতারা মাঠে আসেনি। আমি দলের নির্দেমনা মেনে রাজনীতি করি।

দলের সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, বেগম জিয়া কোন গ্র“পিংয়ের রাজনীতি বিশ্বাস করেনা। তিনি চান তার নির্দেশনা মত মাঠে কাজ। আমরা তার নির্দেশ মেনে দল পরিচালনা করছি। তাই আমরা স্বতস্ফুর্ত হরতাল পালন করেছি।

তবে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলের মাঝে দুটি গ্র“প থাকার কারনে এখানকার বিএনপি রাজনীতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ছে। তবে এখানকার কমিটি অনুমোদন হলে দলের কার্যক্রম চাঙ্গা হতে পারে বলেও তারা মত দিয়েছেন।